Advertisement
E-Paper

কত দূর

অটো ও টোটো স্ট্যান্ডের প্রকৃত অবস্থান অবৈধ পাথরখাদান, বালিঘাট, কয়লাখাদানের সহিত। সেখানে রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতারা ব্যবসার প্রস্তাব অনুমোদন করেন, পরিবর্তে শুল্ক গুনিয়া লন।

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৮ ০০:০৮

নূতন বৎসর আসে, কিন্তু পুরাতন সঙ্কটের অবসান হয় না। পয়লা বৈশাখেই টিটাগড়ের একটি টোটো স্ট্যান্ডের দখলদারি লইয়া সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ স্থানীয় কারখানার এক কর্মী। বোমায় আহত আরও তিন জন। ইহা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নহে। অটোচালকের সহিত টোটোচালক, টোটোচালকদের সহিত বাসচালক, এবং তাহাদের নানা গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত লাগিয়াই আছে। একটি গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক পরিষেবার দুর্বৃত্তায়ন প্রায় সম্পূর্ণ। ইহাদের সংযত করিবার সাধ্য নেতাদেরও নাই। কিছু দিন পূর্বে খাদ্যভবনের সম্মুখে অটোচালকদের সংযত করিতে গিয়া খাদ্যমন্ত্রীকেই অপমানিত হইতে হইয়াছিল। কিন্তু নেতা-মন্ত্রীরা টোটো বা অটোর নিত্যযাত্রী নহেন। যাত্রী পরিবহণের দুর্বৃত্তায়নের বিষফল সাধারণ নাগরিককেই ভোগ করিতে হয়। চালকদের দুর্ব্যবহার তো নিত্যপ্রাপ্তি। তাহার উপর সামান্য অজুহাতে যাত্রীদের মারধর, মহিলা ও শিশুদের হয়রানি, ঝুঁকি লইয়া চালাইবার জন্য দুর্ঘটনার অগণিত দৃষ্টান্ত মিলিয়াছে। অধিক শোরগোল উঠিলে পুলিশ দুই-এক জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। কিন্তু মূল সমস্যাটি এড়াইয়া যায়। কারণ, সমস্যাটি রাজনৈতিক। কিছু নেতা ও তাঁহাদের আশ্রয়প্রাপ্ত কিছু ব্যক্তির অবাধ তোলাবাজির ক্ষেত্র হইয়া দাঁড়াইয়াছে অটো, টোটো, ই-রিকশা প্রভৃতি বেসরকারি পরিবহণ। তাই পশ্চিমবঙ্গের অটো-টোটো স্ট্যান্ডে আসিয়া দেশের আইন থমকাইয়া যায়।

অটো ও টোটো স্ট্যান্ডের প্রকৃত অবস্থান অবৈধ পাথরখাদান, বালিঘাট, কয়লাখাদানের সহিত। সেখানে রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতারা ব্যবসার প্রস্তাব অনুমোদন করেন, পরিবর্তে শুল্ক গুনিয়া লন। সরকারি কোষাগারে যাহা পড়িবার কথা ছিল, সেই অর্থ যায় বাহুবলীর খাজানায়। তাই দখল লইবার সংঘাত অনিবার্য। কখনও নেতার নিজেরই আধিপত্যের সীমা বাড়াইবার বাসনা জাগে। কখনও তিনি তাঁহার সৃষ্ট দানবদের উপর নিয়ন্ত্রণ হারাইয়া ফেলেন। অতএব সরকারি নিয়ন্ত্রণের সীমাবহির্ভূত ‘বিশেষ’ এলাকাগুলিতে বোমাবাজি, গুলিবৃষ্টি ঘটিয়াই চলিতেছে। কখনও কখনও দখলের লড়াই এমন সীমা ছাড়াইয়া যায়, যে চক্ষুলজ্জার খাতিরে শাসক দলকে রাশ টানিতে হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুগামীদের সতর্কবার্তা দেন। অতঃপর প্রকাশ্য রেষারেষি প্রশমিত হয়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। অবৈধ বালি উত্তোলন হইতে নির্মাণ সিন্ডিকেটের শোষণ-পীড়ন, সকলই আইনের মুখে ছাই দিয়া দিব্য চলিতেছে। টিটাগড়ের উন্মুক্ত বোমা ও গুলিবর্ষণ শাসকদলকে কতটা বিব্রত করিয়াছে, রাশ টানিবার জন্য তাঁহারা উদ্যোগ করিয়াছেন কি না, এখনও জানা যায় নাই।

অথচ যাত্রী পরিবহণ নাগরিক পরিষেবার একটি মৌলিক দিক। তাহা বহু লোকের জীবিকারও উপায়। সরকার স্বেচ্ছান্ধ হইবার ফলে অবৈধ, অনিয়ন্ত্রিত এই ক্ষেত্রটিতে এক বিচিত্র অবস্থা। কলিকাতা বা মফস্সল শহরগুলির রাস্তায় কত অটো বা টোটো চলিতেছে, তাহার হিসাব পুরসভা বা পুলিশ, কাহারও নিকট নাই। প্রায়শই দুর্ঘটনার পর প্রকাশিত হয়, অভিযুক্ত গাড়িটি লাইসেন্সহীন। পরিবহণের চাহিদা ও জোগানের অনুপাত কী, সে তথ্য পরিবহণ দফতরেও নাই। গাড়িগুলির নির্মাণ, যাত্রীদের বসিবার ব্যবস্থা, ব্যবহৃত জ্বালানি, কোনও কিছুই নিরাপত্তার পরীক্ষা পাশ করে নাই। আইনের শাসন আর কত দূর?

Transports rules
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy