ট্রাম্প সাহেব ‘হ য ব র ল’ পড়েন নাই। নচেৎ জানিতেন, বাড়ির নাম কিংকর্তব্যবিমূঢ় রাখিলেই ভূমিকম্প হইয়া বাড়িটাড়ি সব পড়িয়া যায়। তিনি মেক্সিকোর সীমান্ত বরাবর পাঁচিল তুলিতে চাহিয়াছেন, বিশেষ আপত্তি শোনা যায় নাই। তিনি বিভিন্ন মুসলমান-প্রধান দেশের নাগরিকদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা তৈরি করিয়াছেন, তাহাতেও গোলমাল হয় নাই। দক্ষ কর্মীদের ভিসায় কড়াকড়ি বাড়াইয়াছেন, পরমাণু যুদ্ধের হুমকি দিয়াছেন, এমনকী পর্নোগ্রাফির নায়িকার সহিত তাঁহার ঘনিষ্ঠতার সংবাদও প্রকাশ হইয়া গিয়াছে। কিন্তু, যেই না তিনি বলিলেন, অতঃপর ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের উপর আমদানি শুল্ক বসিবে— প্রথমটির ক্ষেত্রে পঁচিশ শতাংশ, দ্বিতীয়টিতে দশ— তৎক্ষণাৎ ভূমিকম্প। বিরোধীরা আপত্তি করিবেন কী, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিজের দল রিপাবলিকান পার্টিতেই, শুধু ভূমিকম্প নহে, জলস্তম্ভ এবং দাবানলও আরম্ভ হইয়া গিয়াছে। হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা গ্যারি কোহ্ন দেশের শিল্পজগতের কর্তাদের তলব করিয়া বলিয়াছেন, প্রেসিডেন্টকে সমস্যার কথাটি বুঝাইয়া বলুন। কংগ্রেসে রিপাবলিকান সদস্যরা প্রেসিডেন্টকে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য নরমে-গরমে বুঝাইতেছেন। শুল্কবাদীরা জিগির তুলিয়াছিলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হইতেই আমেরিকা দরজা হাট করিয়া বসিয়া আছে— অনেক হইয়াছে, এই বার নিজেদের স্বার্থ বুঝিয়া লইবার সময়। কিন্তু, সেই যুক্তি ধোপে টিকিতেছে না।
দুইটি ধাতুর উপর আমদানি শুল্ক আরোপ করিলে এমন হল্লা পড়িয়া যাইবে কেন, ট্রাম্প সাহেব স্বভাবতই তাহা বুঝিতে পারিতেছেন না। যেখানে রাজনীতি আসিয়া অর্থনীতির— স্পষ্ট করিয়া বলিলে, কর্পোরেট অর্থনীতির— জমি কাড়িয়া লইতে চাহে, সেখানে এই প্রতিক্রিয়াই স্বাভাবিক। সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক স্বার্থ রাজনীতির কোপে পড়িয়াই থাকে। কিন্তু, মানুষ সংখ্যায় বিপুল হইলেও একক ক্ষমতায় নগণ্য— শুধু নির্বাচনের সময় তাহাদের ভয় পাইলেই চলে। কর্পোরেট সংখ্যায় সীমিত, কিন্তু ক্ষমতায় প্রবল, কণ্ঠস্বরে প্রবলতর। ট্রাম্প সাহেবের শুল্কপ্রস্তাব সেই কর্পোরেটের স্বার্থে আঘাত করিতেছে। ইস্পাতের আমদানির উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিলে তাহা নির্মাণ শিল্পের খরচ বাড়াইয়া দিবে। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার বাজারে এমনিতেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থাগুলি হালে পানি পায় না। তাহার উপর ব্যয় বাড়িলে বাজারে সেটুকু দখলও থাকিবে না। কাজেই, আমদানি শুল্কের সিদ্ধান্তে তাহাদের আপত্তি থাকিবারই কথা। তদুপরি, এই সিদ্ধান্তের প্রভাব আমেরিকার পরিধিতে আটকাইয়া থাকিবে না। ইতিমধ্যেই ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ মার্কিন পণ্যের উপর পালটা আমদানি শুল্ক বসাইবার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করিতেছে। এবং, সেই শুল্ক শুধু ইস্পাত বা ধাতব পণ্যের মধ্যে সীমিত থাকিবে না। অর্থাৎ, ট্রাম্প সাহেবের সিদ্ধান্তটি মার্কিন বাণিজ্য-অর্থনীতির ভিতে আঘাত করিতেছে। গোটা দুনিয়া জুড়িয়া খোলা বাজার প্রতিষ্ঠা করিতে আমেরিকা কম চেষ্টা করে নাই। বিশ শতকের শেষার্ধ সেই চেষ্টাতেই খরচ হইয়াছে। এখন উগ্র জাতীয়তাবাদের রাজনীতি আসিয়া যদি অর্থনীতির সেই বাড়া বার্গারে ছাই ফেলিয়া যায়, প্রতিরোধ স্বাভাবিক। অর্থনীতি বিষম বস্তু, ট্রাম্প সাহেব ঠেকিয়া শিখিবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy