সুদূর গ্রিস দেশের এক সমুদ্র সৈকত এবং এ দেশের উত্তরপ্রদেশের এক জনপদ— নিদারুণ বৈপরীত্যে পরস্পরের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পড়ল তারা। নিষ্ঠুরতা, নির্মমতা, অসংবেদনশীলতাকে ‘পাশবিক’ বলে গাল পাড়লে কতটা ভুল শব্দচয়ন হয়, তাও দেখিয়ে দিল খুব স্পষ্ট করে।
ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া জর্জিয়া ব্র্যাডলি গ্রিসের এক সমুদ্র সৈকতে দুই দুষ্কৃতীর কবলে পড়লেন। আপত্তিকর টানাহেঁচড়া দেখেই হাজির হয়েছিল একটা অচেনা কুকুর। তারস্বরে চিৎকার করে তাড়িয়েছিল দুষ্কৃতীদের। হোটেল পর্যন্ত সঙ্গ দিয়েছিল বিপন্ন তরুণীকে। ব্রিটেন ফিরে গিয়েও ফের ওই কুকুরের টানে গ্রিস ছুটে যান জর্জিয়া ব্র্যাডলি। রক্ষককে দত্তক নিয়ে দেশে ফেরেন।
উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদে নিজের পোষ্যকে নিয়ে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন পদস্থ সরকারি কর্তা বিমল ধীর। রাস্তার একটি কুকুর চিৎকার করতে শুরু করে। ধীরের আর ধৈর্যে কুলায়নি। পকেট থেকে পিস্তল বার করে গুলি চালিয়ে দেন তিনি, চিরতরে থামিয়ে দেন ঘেউ ঘেউ।
মানুষর কাছ থেকে প্রত্যাশিত আচরণের নাম যদি ‘মানবিক’ হয় আর পশুর আচরণকে যদি ‘পাশবিক’ নামে ডাকি, তা হলে এই দুটো শব্দের মধ্যে কোনটাকে গালি হিসেবে ব্যবহার করা উচিত? প্রশংসাসূচক শব্দ হিসেবেই বা বেছে নেওয়া উচিত কোনটাকে? গ্রিসের সমুদ্র সৈকত আর মোরাদাবাদের রাস্তাকে পাশাপাশি রাখার পর হিসেব নিশ্চয়ই গুলিয়ে যাচ্ছে অনেকের, সংজ্ঞাগুলো অবশ্যই নতুন করে নির্ধারণ করতে হচ্ছে অনেককেই।
পশুর আচরণে কোনও আরোপিত নির্মমতা থাকে না আসলে। সে থাকে মানুষেরই। নিষ্ঠুরতার মাত্রা বোঝাতে যাঁরা মুখের পেশী বিকৃত করে এখনও বলে ওঠেন ‘পাশবিক’, তাঁরা ভুল শব্দ প্রয়োগ করেন। জর্জিয়া ব্র্যাডলি আর তাঁর পোষ্য এখন এক অসামান্য সামাজিক সম্পর্কে আবদ্ধ। কিন্তু সামাজিক জীব হয়েও বিমল ধীর যে নিদারুণ অসামাজিক এবং নিষ্ঠুর কাণ্ডটা ঘটালেন মোরাদাবাদের রাস্তায়, সেই কাণ্ডকে কী বিশেষণে ব্যাখ্যা করা যায়? দোহাই সকলকে, পাশবিক বলে বসবেন না যেন!