Advertisement
E-Paper

বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার ঝুঁকিটা কোথায় কোথায়

গত বাজেটে অর্থমন্ত্রী বিশ্ববাজারে ঋণপত্র বিক্রি করে টাকা তোলার কথা বলেছিলেন। এমন নয় যে, এই প্রস্তাব খুব নতুন। প্রতিটি দেশই বিশ্ববাজার থেকে ঋণ করে থাকে। ভারতও করে এবং করেছে। আমাদের আলোচনা অবশ্য এই প্রস্তাব ও তার রকমফের নিয়ে নয়। এই আলোচনা বিশ্ব লগ্নি বা ঋণ বাজারের ঝুঁকির গতিপ্রকৃতিটা বুঝে নেওয়ার। তিন কিস্তির লেখার এটি প্রথম কিস্তি।ঋণগ্রহীতা না হয় টাকা জমা দিল ভারতীয় ব্যাঙ্কে। কিন্তু সেই টাকাকে আবার ডলারে বদলানো যাবে কি না, সেটা ঠিক করবে আর এক থার্ড পার্টি— ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। যে কোনও কারণেই হোক, যদি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এই অনুমতি দিতে রাজি না হয়, যেমন ডলারের সঙ্কট, তেলের দাম বেড়ে গিয়েছে ইত্যাদি হুজ্জত, তা হলে তুমি বিশ বাঁও জলের নীচে (কান্ট্রি রিস্ক বা কারেন্সি রিস্ক বা সভারেন রিস্ক)।

হীরেন সিংহরায়

শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২০ ১৩:১৭

ব্যাঙ্কের আয় হয় কী করে? আপনাদের মতো সজ্জনেরা অগাধ আস্থা নিয়ে ব্যাঙ্কে টাকা জমা রাখেন। আপনাদের সুদ সরবরাহ করতে গেলে ব্যাঙ্ককে কিছু আয় করতে হবে। তাই আপনাদের মতোই আরও অন্য সজ্জনদের টাকা ধার দিয়ে এরা দুটো পয়সা রোজগার করে। যারা ঋণ নেয় তাদের কাছ থেকে সুদ আদায় করা হয় বেশি হারে। তার সামান্যটা সুদ হিসেবে সঞ্চয়কারীদের দিয়ে, বাকিটা ব্যাঙ্ক রাখে নিজের আয় হিসাবে।

আমার ব্যাঙ্কিংয়ের প্রথম গুরু শিখিয়েছিলেন, যখনই ধার দেবে তখনই জানবে দুটো ঝুঁকি নিচ্ছ: ঋণগ্রহীতার ব্যবসা যদি ঠিক মতো চলে, মানে তার যদি লাভ হয়,তা হলেই সে তোমার ধার শোধ করতে পারবে (ক্রেডিট রিস্ক)। আর তুমি যে যে হারে টাকা ধার দিলে সেটা যদি বাড়তে থাকে, তা হলে তোমার খদ্দেরের লাভের গুড় পিঁপড়ে খেয়ে যাবে (ইন্টারেস্ট রেট রিস্ক)। ঋণ ফেরত না আসার ঝুঁকিটা তা হলে ব্যাঙ্কের ঘাড়েই বর্তাবে

বৈদেশিক ঋণের বাজারে ঝুঁকি আছে আরও:

এ অবধি ধরে নিচ্ছি ধারের দেওয়া নেওয়া একই দেশে হচ্ছে। টাকার আমি টাকার তুমি। ধার নিচ্ছেন টাকায় শোধ দিচ্ছেন টাকায়। এখন যদি ঋণদাতা থাকেন বিদেশে, তিনি ধার দেবেন ডলারে। ঋণগ্রহীতা থাকেন ভারতে। তিনি ধারের টাকা পেয়েই টাকায় বদলে নেবেন। কাল অতিক্রান্ত হলে, মানে ধার শোধ দেওয়ার সময় হলে, ঋণগ্রহীতা তাঁর ভারতীয় ব্যাঙ্কারের টেবিলে টাকার গোছা ফেলে বলবেন— আমার এই টাকাকে ডলারে বদলে দিয়ে আমার ঋণদাতাকে পাঠান। অবশ্য সুদ-সহ।

আরও পড়ুন: ‘ভারতবর্ষ কাহিনী’ বিশ্ব লগ্নিবাজারে এখন কাটছে না

আমার গুরু বললেন— বাছা, এ বার তুমি আরও দুটো ঝুঁকি নিলে। তোমার ঋণগ্রহীতা যে দরে তোমার ডলারকে টাকায় বদলেছিল সেই দর কমতে বা বাড়তে পারে (এক্সচেঞ্জ রেট রিস্ক)। কমলে ভাল, কিন্তু বাড়লে তার ঋণের বোঝা যাবে বেড়ে। টাকার অঙ্কে। তা ছাড়া আর একটা ঝুঁকি আছে। ঋণগ্রহীতা না হয় টাকা জমা দিল ভারতীয় ব্যাঙ্কে। কিন্তু সেই টাকাকে আবার ডলারে বদলানো যাবে কি না, সেটা ঠিক করবে আর এক থার্ড পার্টি— ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।

আরও পড়ুন: ঋণ পেলেই তো হবে না, কাজে লাগাতে হবে, কারণ গুনতে হবে সুদ

যে কোনও কারণেই হোক, যদি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এই অনুমতি দিতে রাজি না হয়, যেমন ডলারের সঙ্কট, তেলের দাম বেড়ে গিয়েছে ইত্যাদি হুজ্জত, তা হলে তুমি বিশ বাঁও জলের নীচে (কান্ট্রি রিস্ক বা কারেন্সি রিস্ক বা সভারেন রিস্ক)।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

(লেখক বৈদেশিক ঋণ বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত ম্যানেজিং ডিরেক্টর, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাঙ্ক)

Union Budget 2020 Budget 2020 Foreign Investment Foreign Loan RBI Reserve Bank of India
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy