Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

অ-প্রকৃতিস্থ

মানুষ কিছুতে বুঝিতে পারে না সরল কথা, এই পৃথিবীতে সে একতম নহে, অন্যতম।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২০ ০০:৪৭
Share: Save:

আজ পরিবেশ দিবস। এই বৎসরের জন্য দিবসটি যেন বিষম গুরুতর, কেননা এই বৎসরের মূল ঘটনাই পরিবেশ ও জীববৈচিত্রকেই কেন্দ্র করিয়া। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের আমপান, ব্রাজিল, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় দাবানল, পূর্ব আফ্রিকায়, ভারতে ও পাকিস্তানে পঙ্গপালের হানা, সর্বোপরি বিশ্বব্যাপী করোনাত্রাস মিলাইয়া মানুষকে পুনরায় বুঝাইবার সময় আসিয়াছে, প্রকৃতি ও প্রকৃতির সকল প্রাণী গুরুত্বপূর্ণ, ভারসাম্য নষ্ট করিলে মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হইবে, পার পাইবে না। অবশ্য এই সকল পাঠ প্রতি পরিবেশ দিবসেই দান করা হয়, মানুষ ঢুলিতে ঢুলিতে ভাবে— সেমিনার শেষ হইলে খাবারের প্যাকেট দেওয়া হইবে, তাহাতে পনির রহিয়াছে না মাংসের বড়া। এই বৎসর অবশ্য তাহার চৈতন্য অধিক জাগ্রত হইলেও হইতে পারে, কারণ প্রকৃতির উপর্যুপর চপেটাঘাতে সে সচকিত হইয়া আছে।

মানুষ কিছুতে বুঝিতে পারে না সরল কথা, এই পৃথিবীতে সে একতম নহে, অন্যতম। যে ভাইরাসের স্বাভাবিক ভাবে মানুষের দেহে আসিবারই কথা নহে, তাহার আগমনের মূল কারণ হইল, ভাইরাসটি যে জীবের দেহে বাসা বাঁধিয়া আছে, তাহার বসতি মানুষ ধ্বংস করিতেছে। হয় ধ্বংস করিবার সময় মানুষ সেই জীবের সংস্পর্শে আসিতেছে, অথবা বসতি হারাইয়া বাধ্য হইয়া সেই জীব মানুষের বসতিতে আসিয়া উঠিতেছে। আফ্রিকার জঙ্গল ধ্বংস করিবার সহিত ইবোলা ভাইরাসের প্রসার লইয়া গবেষণা চলিতেছে। ইঁদুর ও উইপোকা জাতীয় প্রাণীকে ঘাস কাটিয়া উচ্ছেদ করিবার জন্যই আজ ভারতে মানুষের স্ক্রাব টাইফাস রোগ বাড়িয়াছে। ‘কিয়াসানুর ফরেস্ট ডিজিজ’ও কর্নাটকের অরণ্যহানির সহিতই সম্পৃক্ত, ভাবা হয়। নিপা ভাইরাস এক জাতীয় বাদুড়ের দেহে থাকে। সেই বাদুড় স্বাভাবিক বাসস্থান ছাড়িয়া মানুষের বসতিতে, ফলের গাছে খাবারের সন্ধানে আসিলে, তাহাদের অর্ধভুক্ত ফল হয়তো খাইয়াছে খামারের শূকরেরা, তাহাদের সংস্পর্শে আসিয়া মানুষ সংক্রমিত হইয়াছে। বহু ভাইরাস যখন অন্য জীবের দেহ আশ্রয় করিয়া থাকে, তাহাদের প্রকোপ হয় মৃদু, কিন্তু যখন তাহারা ‘প্রজাতি উল্লঙ্ঘন’ করে, সেই প্রকোপ ভয়াবহ। মানুষ ক্রমাগত নগরপত্তন করিতে ও তৈল এবং খনিজ পদার্থের সন্ধানে জঙ্গল কাটিয়া সাফ করিতেছে। পরিবেশপ্রেমী বারণ করিলে সে ভাবিতেছে, আহা, ইহারা শশকের দুর্দশায় রোরুদ্যমান। কিন্তু যে প্রাণীরা গৃহচ্যুত হইল, তাহাদের শোধ প্রকৃতি বাস্তুতন্ত্রের নিয়মেই লইবে, ইহা মানুষের লোভসর্বস্ব চিত্তে ঢুকিতেছে না।

মানুষ ভাবে, অন্য প্রাণীরা সৃষ্ট হইয়াছে মানুষেরই স্বার্থ চরিতার্থ করিবার জন্য। গিনিপিগ জন্মিয়াছে যাহাতে মানুষ তাহাকে অশেষ কষ্ট দিয়া গবেষণা সারিয়া লয়, গরু সৃষ্ট হইয়াছে যাহাতে মানুষ গো-সন্তানের প্রাপ্য লুণ্ঠন করিতে পারে। বাঁচিবার জন্য যাহা প্রয়োজন তাহার অধিক পাইতে পাইতে ভোগের স্পৃহা বাড়িয়াছে, বাড়িয়াছে অন্যকে অত্যাচার করিবার পুলক। এই ধর্ষকামেই মানুষ প্রাণীকে আনারসের মধ্যে বিস্ফোরক ভরিয়া খাইতে দিতেছে, সরল বিশ্বাসে হস্তী তাহা গ্রহণ করিয়া মৃত্যুবরণ করিতেছে। সকল অর্থেই মানুষ আজ আর ‘প্রকৃতিস্থ’ নাই। কোনও দিন কি তাহার স্থূল মস্তিষ্কে ঢুকিবে যে কেবল টিকিয়া থাকিবার তাগিদেই মানুষকে আত্মসংবরণ করিতে হইবে, পরিবেশের যত্ন লইতে হইবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health COVID-19 World Environment Day
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE