Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সংখ্যার জবরদস্তি

পার্লামেন্টে একটি দলের সদস্যরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হইয়া তাহার জোরে রাজনীতির অভিমুখ ঘুরাইয়া দিবার চেষ্টা করিতেছেন, এই দৃশ্যটি অনেক দিন পর মার্কিন পার্লামেন্টে ফিরিয়া আসিল।

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৯ ০০:০৬
Share: Save:

ট্রাম্পের শাসনকালে মার্কিন দেশে গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা ঘটিয়া গেল। ক্যাপিটল হিলে হাউস জুডিশিয়ারি এবং ইন্টেলিজেন্স কমিটির সম্মুখে শুনানিতে উপস্থিত হইলেন প্রাক্তন এফবিআই প্রধান রবার্ট মুলার। মার্চে অ্যাটর্নি জেনারেলের নিকট তিনি রিপোর্ট জমা দিয়াছিলেন, তাহারই শুনানি। দুই বৎসর পূর্বে মুলারকে স্পেশাল কাউন্সেল নিযুক্ত করিয়া তদন্তভার দেওয়া হইয়াছিল। ২০১৬ সালে যে নির্বাচনে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসেন, তাহার প্রচার অভিযানে ট্রাম্প ও তাঁহার রিপাবলিকান প্রচার-সহযোগীদের সহিত রুশ সরকার ও চরদের যোগসাজশ ছিল, এই অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব। ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টনের ব্যক্তিগত ও দলীয় নথিপত্র ‘হ্যাক’ করা হইয়াছিল, ইহাও তদন্তের দায়িত্ব। ট্রাম্প ভোটে জিতিয়া প্রেসিডেন্ট হন। কিন্তু দেশের আইন ভঙ্গ করিয়া, অন্যায্য ভাবে নির্বাচন ও জনমত প্রভাবিত করিয়া তিনি ক্ষমতাসীন হইয়াছেন— মুলারের রিপোর্টের এই বক্তব্যকে হাতিয়ার করিয়া প্রেসিডেন্টের ইমপিচমেন্টের দাবিতে ডেমোক্র্যাটরা সরব হইলেন।

মুলারের রিপোর্টে শুধু ট্রাম্প-সহ রিপাবলিকান দলের বহু নেতা ও সহযোগীর নীতিভঙ্গের কথাই বলা হয় নাই, ট্রাম্প যে তদন্তে বারংবার বাধাদানের চেষ্টা করিয়াছেন, তাহাও স্পষ্ট হইয়াছে। শুরু হইতেই মুলার প্রসঙ্গে ট্রাম্প তির্যক ও উদ্ধত টুইট করিয়া বা সরাসরি সংবাদমাধ্যমে দোষারোপ করিয়াছেন। যে স্বভাবসিদ্ধ অবিনয়ে তিনি মেক্সিকোর সীমান্তে প্রাচীর তুলিবার বা মুসলমানদের আমেরিকায় ঢুকিতে না দেওয়ার বিধান দেন, সেই ঔদ্ধত্যই তিনি হানিয়াছেন মুলারের রিপোর্টের প্রতিও। বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা প্রতিবাদ করিয়াছেন। তাঁহাদের প্রতিবাদ নীতিসঙ্গত। তবে রিপাবলিকান নেতাদের ব্যবহারে দেখা গেল প্রেসিডেন্টকে সমর্থনের এক বিচিত্র ঐক্য। অথচ প্রেসিডেন্টের সমালোচনা করিতেছেন রিপাবলিকানরাও, আমেরিকা এ উদাহরণ সম্প্রতিকালে দেখিয়াছে। ট্রাম্পের কোনও মন্তব্য বা সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তাঁহারই দলের প্রতিনিধিরা বলিয়াছেন, উহা সম্পূর্ণ ভুল। দলনেতা বা দলতন্ত্রেরও উপরে সুস্থ ও সুষ্ঠু মতাদর্শের এই উজ্জ্বল অবস্থান মার্কিন গণতন্ত্রকে বিশ্বের চোখে অনন্য করিতেছিল। অথচ মুলার রিপোর্টের ক্ষেত্রে দেখা গেল, রিপাবলিকানরা একজোট হইয়া ট্রাম্পের পিছনে দাঁড়াইয়াছেন। রিপোর্টে থাকা ভূরি ভূরি অভিযোগের বিরুদ্ধে যুক্তিপ্রমাণ দাখিলের দায় ত্যাগ করিয়া, নেতার সুরে সুর মিলাইয়া লম্ফঝম্পে অভিযোগের স্বরটি ডুবাইয়া দেওয়াই যেন তাঁহাদের লক্ষ্য।

পার্লামেন্টে একটি দলের সদস্যরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হইয়া তাহার জোরে রাজনীতির অভিমুখ ঘুরাইয়া দিবার চেষ্টা করিতেছেন, এই দৃশ্যটি অনেক দিন পর মার্কিন পার্লামেন্টে ফিরিয়া আসিল। সকলে একজোটে বিরোধীদের কদর্য আক্রমণ করিয়া, সমাজমাধ্যমে কাদা ছুড়িয়া হতোদ্যম করিয়া দিলে বিরোধীরা যে বিপন্ন ও নীরব হইবেন, জানা কথা। অর্থাৎ মতাদর্শকেন্দ্রিক রাজনীতির স্থল লইল দলসর্বস্ব রাজনীতি। প্রশ্ন উঠিবে, ইহাতে গণতন্ত্রের মান বাড়িল কি? গণতন্ত্রের ভিতরে যেমন মুক্ত তর্ককে উৎসাহ দিবার সম্ভাবনা থাকে, তেমনই সংখ্যার জোর খাটাইয়া বিরোধী কণ্ঠরোধের আশঙ্কাও থাকে। মার্কিন পার্লামেন্ট এখন দ্বিতীয়টি দেখিতেছে। ভারতের পার্লামেন্টও দেখিতেছে না— এমন বলা যাইবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Donald Trump USA Parliament Impeachment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE