Advertisement
E-Paper

দানবটা এ বার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে

বিপদ যে ঘনিয়ে উঠছে, তার আভাসটা দিল বুলন্দশহর জেলা। গ্রামের বাইরে জঙ্গলের ধারে গোমাংস ছড়িয়ে রয়েছে— এমনই এক খবর ছড়িয়ে পড়ল দাবানলের মতো। যে মাংস ছড়িয়ে রয়েছে, সে আদৌ গোমাংস কি না, তা যাচাই করার কোনও সুযোগ রইল না।

গো-হত্যার গুজবে তাণ্ডব বুলন্দশহরে।

গো-হত্যার গুজবে তাণ্ডব বুলন্দশহরে।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৫৫
Share
Save

বাঘের পিঠে সওয়ার হওয়ার জন্য সাহস অত্যন্ত জরুরি ঠিকই। কিন্তু ওই রকম সাহস বা দুঃসাহস দেখানো কোনও কাজের কথা নয়। কারণ ওই সাহস বা দুঃসাহসে ভর করে কারও উপকার করা গিয়েছে, এমন কোনও দৃষ্টান্ত ইতিহাসে নেই। বরং ইতিহাস বলে, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার লক্ষ্যে যাঁরা বাঘের পিঠে সওয়ার হয়েছে, তাঁরা নিজেদেরই ঠেলে দিয়েছেন অবধারিত বিপন্নতার দিকে। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে তাঁর সমগোত্রীয়রা প্রত্যেকেই সম্ভবত এক বিপন্নতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।

বিপদ যে ঘনিয়ে উঠছে, তার আভাসটা দিল বুলন্দশহর জেলা। গ্রামের বাইরে জঙ্গলের ধারে গোমাংস ছড়িয়ে রয়েছে— এমনই এক খবর ছড়িয়ে পড়ল দাবানলের মতো। যে মাংস ছড়িয়ে রয়েছে, সে আদৌ গোমাংস কি না, তা যাচাই করার কোনও সুযোগ রইল না। গ্রামের বাইরে বা জঙ্গলের কাছে গোমাংসও যদি পড়ে থাকে, তা হলে কার ক্ষতি হল বা কার ধর্ম গেল, সে নিয়ে তর্ক উত্থাপনের সুযোগ রইল না। ওই তথাকথিত গোমাংস ওই এলাকায় কী ভাবে এল, তা নিয়ে ভাবনা-চিন্তারও অবকাশ রইল না। মুহূর্তে উত্তাল হল গোটা এলাকা। বিক্ষোভ ভেঙে পড়ল সড়কের উপরে। অবরোধ তোলার চেষ্টা হতেই পুলিশ-প্রশাসনকে প্রতিপক্ষ ভেবে নিলেন বিক্ষোভকারীরা। সংঘর্ষ শুরু হল। ইট-পাথর উড়ে গেল। গুলি চলল। একের পর এক গাড়িতে আগুন জ্বলল। থানা আক্রান্ত হল। দিনের শেষে জানা গেল, এক বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়েছে। এক পুলিশকর্মী শেষ হয়ে গিয়েছেন।

গেরুয়াধারী এক সন্ন্যাসী আজ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। গোটা দেশের কাছে এখন হিন্দুত্ববাদের সবচেয়ে কট্টর মুখ তিনি। তাঁর ভাষণ সম্ভবত ধর্মীয় মেরুকরণের সবচেয়ে বড় সংঘটক এই মুহূর্তে। কিন্তু সেই যোগী আদিত্যনাথের প্রশাসনের উপরেও ভরসা রাখল না ক্ষিপ্ত জনতা। গোমাংস গুজব ছড়াতেই পুলিশ-প্রশাসন-আইন-সরকার-সহ গোটা ব্যবস্থাকে প্রতিপক্ষ ভেবে নিলেন এলাকাবাসী। দুঃস্বপ্নের কবলে চলে গেল বুলন্দশহর জেলার বেশ খানিকটা এলাকা।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

কট্টরবাদকে অনর্গল ইন্ধন জুগিয়ে যাওয়ার ফলটা টের পাওয়া যাচ্ছে এ বার? দেশের জনসংখ্যার মাঝে স্পষ্ট বিভাজনরেখা এঁকে দিয়ে এবং তীব্র মেরুকরণে সওয়ার হয়ে নির্বাচনী রাজনীতিতে কিছু সাফল্য মেলে ঠিকই। কিন্তু সে সাফল্য সাময়িক। আর তার বিনিময়ে একটা গোটা জাতি যে সাংঘাতিক নৈতিক ক্ষতির মুখে পড়ে, সেই ক্ষতিটা স্থায়ী।

যে কোনও কট্টরবাদই গণতন্ত্রের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। বার বার সতর্কবার্তা শোনা যাচ্ছিল নানা প্রান্ত থেকে। অসহিষ্ণুতার সূচকগুলো সাংঘাতিক ভাবে চঞ্চল হয়ে উঠেছিল। কিন্তু কট্টরবাদের আগুনে অঢেল অক্সিজেন জোগানোর কর্মকাণ্ড কিছুতেই বন্ধ হল না। অবিশ্বাস, বিদ্বেষ, অসহিষ্ণুতা, ঘৃণা মিলেমিশে দানবের চেহারা নিল। সে দানব আজ স্রষ্টাকেই মানতে চায় না আর। প্রকাশ্য স্থানে গোমাংস ছড়িয়ে রেখে যাওয়ার মতো ঘটনা কেউ যদি সত্যিই ঘটিয়ে থাকেন, তা হলে যোগী আদিত্যনাথের প্রশাসন যে তাঁকে কিছুতেই ছেড়ে কথা বলবে না, এ বিশ্বাস গোমাংস-বিদ্বেষীদের মধ্যে অন্তত থাকা উচিত ছিল। কিন্তু ঘটনাপ্রবাহ বলছে, বিদ্বেষ আজ লাগামহীন। আক্রোশ আজ কোনও অঘটন বা দুর্ঘটনার বিহিত চেয়ে মাথা তুলছে না। আক্রোশ আজ শুধুমাত্র ধ্বংসাত্মক হয়ে ওঠার সুযোগ খুঁজছে। সেই অন্বেষণের কোনও দিশা নেই, কোনও নির্দিষ্ট গন্তব্য নেই, কোনও নির্দিষ্ট উৎস নেই, কোনও নির্ধারিত অন্ত নেই। কে জন্ম দিয়েছিল, কে লালন করেছিল, কে প্রশ্রয় জুগিয়েছিল— সব ভুলে গিয়েছে দেশের বিস্তীর্ণ পরিসরে চারিয়ে যাওয়া বিদ্বেষ তথা আক্রোশটা। নিয়ন্ত্রণের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে পরিস্থিতি ক্রমশ।

আরও পড়ুন: গো-হত্যার গুজবে উত্তপ্ত বুলন্দশহর, বিক্ষোভের বলি এক ইনস্পেক্টর-সহ ২

ঘুমন্ত বাঘের পিঠে সওয়ার তো হওয়াই যায়। আতঙ্কিত বাঘ সওয়ারির দিকে না তাকিয়েই দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে হয়তো ছুটতেও শুরু করে। কিন্তু ক্রমে সে বাঘ আর সওয়ারির নিয়ন্ত্রণে থাকে না। তখন বাঘটার পিঠ থেকে নামারও আর কোনও উপায় থাকে না। কারণ সওয়ারি নামা মাত্রই তাঁর দিকে ঘুরে দাঁড়াবে বাঘটা!

Cow Slaughter Mob Violence Uttar Pradesh Anjan Bandhyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় Death Vandalism Newsletter Bulandshahr বুলন্দশহর

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}