Advertisement
E-Paper

বিপ্লব এমন নীরবেও আসে

একে যদি বিপ্লব না বলি, তা হলে বিপ্লব আর কিসে? পাচার হয়ে গিয়েছিলেন ভিন্ রাজ্যে, কিন্তু ফিরতে পেরেছেন এবং ফেরার পরে মসৃণ বিবাহিত জীবনযাপন করছেন, এমন দৃষ্টান্ত শহরে বসেও খুঁজে পাওয়া যায় না।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৮ ০০:০৪
পাচার হয়ে গিয়েছিলেন ভিন্ রাজ্যে, কিন্তু ফিরতে পেরেছেন এবং ফেরার পরে মসৃণ বিবাহিত জীবনযাপন করছেন, এমন দৃষ্টান্ত শহরে বসেও খুঁজে পাওয়া যায় না। —প্রতীকী ছবি।

পাচার হয়ে গিয়েছিলেন ভিন্ রাজ্যে, কিন্তু ফিরতে পেরেছেন এবং ফেরার পরে মসৃণ বিবাহিত জীবনযাপন করছেন, এমন দৃষ্টান্ত শহরে বসেও খুঁজে পাওয়া যায় না। —প্রতীকী ছবি।

বিপ্লবের শুরুটা সব সময়ই খুব প্রকট ভাবে হবে, এমন কোনও বাঁধা গত নেই। বিপুল জনপ্লাবনে সওয়ার হয়েই আসতে হবে বিপ্লবকে, এমন কোনও দুর্লঙ্ঘ নিয়ম নেই। অনেক সময় বিপ্লবের সূচনা খুব নীরবে-নিঃশব্দে হয়ে যায়। তার পরিসর হয়ত খুব সীমিত হয়। কিন্তু প্রভাবে, ব্যাপ্তিতে, আবেদনে গোটা সমাজকে সে নিজের অনুসারী করে তোলে।

সুন্দরবন অঞ্চলে তৈরি হয়েছে রূপকথাটা। কেনই বা বলব রূপকথা? বাস্তবেই তো ঘটেছে গোটাটা। বাংলার জল-জঙ্গলে ঘেরা কোনও এক অখ্যাত গ্রামের এক কিশোরীকে উত্তরপ্রদেশের আগরায় পাচার করে দিয়েছিল দুষ্কৃতী। নিখোঁজ মেয়ের খোঁজ পাওয়া, পুলিশকে জানানো, তার পরে পুলিশি তৎপরতায় মেয়েকে ফিরে পাওয়া— এ বড় কম কথা নয়। তবু এমন ঘটনার কথা মাঝে-মধ্যে শোনা যায়, সংবাদমাধ্যমে চোখে পড়ে যায়। কিন্তু উদ্ধার হয়ে বাড়ি ফেরার পরে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সেই মেয়ের বিয়ে হল, কোনও অপ্রিয় সত্যকে গোপন না করেই হল এবং শ্বশুরবাড়িতে সে মেয়ে সকলের অত্যন্ত প্রিয়পাত্রী হয়ে উঠল, এমনটা সচরাচর শোনা যায় না। সুন্দরবন তেমনই গল্প শোনালো গোটা দেশকে, গোটা পৃথিবীকে। রূপকথার গল্প নয়, জীবনের গল্প শোনাল আমাদের প্রত্যেককে।

একে যদি বিপ্লব না বলি, তা হলে বিপ্লব আর কিসে? পাচার হয়ে গিয়েছিলেন ভিন্ রাজ্যে, কিন্তু ফিরতে পেরেছেন এবং ফেরার পরে মসৃণ বিবাহিত জীবনযাপন করছেন, এমন দৃষ্টান্ত শহরে বসেও খুঁজে পাওয়া যায় না।

সুন্দরবন অঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রাম। সেই গ্রামই পথ দেখাল। অনুসরণ করার মতো দৃষ্টান্ত তৈরি করল। যে ঘটনাকে ‘বিপ্লব’ বলে উল্লেখ করছি, সে ঘটনা শহরের বুকে প্রথমে ঘটলে এতটা আশ্চর্য হতে হত না হয়তো। কিন্তু নগর সভ্যতার গর্বে জোর ধাক্কা দিয়ে সামাজিক বিপ্লবের গল্পটা লিখল প্রত্যন্ত গ্রাম দুটো গ্রাম।

সামাজিক প্রতিক্রিয়াটাও সাধুবাদযোগ্য। ছকভাঙা জীবনের গল্প লিখল প্রত্যন্ত দুটো গ্রামের যে দুটো পরিবার, সামাজিক ভাবে তাদের পাশে থাকারই ইঙ্গিত মিলল। সহযোগিতা এবং সমর্থনেরই বার্তা পেল পরিবার দু’টি পারিপার্শ্বিকতা থেকে। এ-ও বড় কম কথা নয়। নিঃশব্দে, নীরবে যে মানসিকতা বদলে ফেলেছে আমাদের সমাজ, উন্নততর মানবতার বোধ যে চারিয়ে গিয়েছে প্রান্তে প্রান্তে, ছকভাঙা বিয়েটার প্রতি সামাজিক প্রতিক্রিয়া দেখে তার প্রমাণ মেলে। যা কিছু দেখতে অভ্যস্ত নই আমরা, যা কিছু সচরাচর ঘটে না, সে সব বর্জনীয়, গতে বাঁধা সামাজিক অভ্যাসের বাইরে যাওয়া নিষেধ— এই জাতীয় রক্ষণশীল ধ্যান-ধারণা ছেড়ে অনেকটা এগিয়ে যেতে যে প্রস্তত হয়ে গিয়েছে আমাদের মন-মানসিকতা, প্রমাণ মিলেছে তারও।

বিপ্লবটা নীরবেই শুরু হয়ে গিয়েছে, সংশয় নেই। নানা সামাজিক অনাসৃষ্টি, নানা সাম্প্রদায়িক সঙ্কীর্ণতা, নানা বিভেদ-বিভাজন, নানা অসহিষ্ণুতা আজকাল বার বার বলিয়ে নেয়— এ সময়, বড় অন্ধকার এক সময়। কিন্তু সুন্দরবনের এই কল্পকথা সুলভ বাস্তব বিপ্রতীপ ভাবনার জন্ম দেয়, সময়টা আলোকিত হয়ে ওঠে আশার কিরণে। মানব সভ্যতা কখনও পিছনের দিকে হাঁটে না, শত দুর্যোগের মাঝেও সে সামনের দিকেই পা ফেলে, এ বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়ে ওঠে।

Newsletter Anjan Bandyopadhyay Women Trafficking অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy