Advertisement
E-Paper

উচ্ছৃঙ্খলতার দমন

ট্রেন চলাচল লইয়া রেলের তরফে ভুল ঘোষণা হওয়ায় এক দল ক্ষিপ্ত যাত্রী উন্মত্ত হইয়া টিকিট কাউন্টার-সহ রেলের কন্ট্রোল রুম পর্যন্ত ভাঙচুর করিলেন। এক দিকে ইহাকে নেহাতই ক্ষুব্ধ জনতার ক্ষোভের প্রকাশ বলিয়া সম্ভ্রমবাচক ব্যাখ্যা দেওয়া যায়। অন্য দিকে, বলিবার অবকাশ থাকে যে, ইহা সোজাসুজি গুন্ডামি, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করিয়া ‘শোধ’ তুলিবার বিকৃত তৃপ্তি।

শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৪৬

একটি জরুরি বিষয় সমানেই গুলাইয়া যায়, কোনটি মানুষের বিক্ষোভ-আন্দোলন, আর কোনটি কেবল গুন্ডামি ও নৈরাজ্য তৈরির অপচেষ্টা। এই দেশে ধারাবাহিক ভাবে এই দুই বিষয় সমানে গুলাইয়া যাইতে, কিংবা গুলাইয়া দিতে, দেখা গিয়াছে। গত কয়েক দিনে সোদপুর স্টেশনের ঘটনাবলি আর এক বার উক্ত দুই বিষয়ের মাঝখানে সরু বিভাজনরেখাটির উপর আলোকপাত করিল। ট্রেন চলাচল লইয়া রেলের তরফে ভুল ঘোষণা হওয়ায় এক দল ক্ষিপ্ত যাত্রী উন্মত্ত হইয়া টিকিট কাউন্টার-সহ রেলের কন্ট্রোল রুম পর্যন্ত ভাঙচুর করিলেন। এক দিকে ইহাকে নেহাতই ক্ষুব্ধ জনতার ক্ষোভের প্রকাশ বলিয়া সম্ভ্রমবাচক ব্যাখ্যা দেওয়া যায়। অন্য দিকে, বলিবার অবকাশ থাকে যে, ইহা সোজাসুজি গুন্ডামি, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করিয়া ‘শোধ’ তুলিবার বিকৃত তৃপ্তি। কিসের শোধ, তাহা অবশ্যই স্পষ্ট নয়। কার্যত যাহা ঘটিল— রেল চলাচলে ‘কিছু’ বিঘ্ন হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় রেল চলাচলে ‘বড়’ মাপের বিঘ্ন তৈরি হইল। বিক্ষুব্ধ জনতা শোধ লইলেন ঠিকই, কিন্তু সেই শোধ ধাবিত হইল বৃহত্তর জনতার দিকে, যাঁহারা নিজেদের জীবিকা ও জীবন নির্বাহের জন্য রেলের উপর নির্ভর করেন।

বিষয়টি জরুরি। কারণে অকারণে সরকারি পরিকাঠামো ভাঙচুর করিবার প্রবণতাটি একটি অসুখ। যে অসুখে বুঝিতে পারা যায় না যে আজ অন্যদের অসুবিধা ঘটাইলে কাল সেই অসুবিধা নিজের দিকেই আসিতে পারে। অঙ্কুরে বিনাশ না করিলে এই অসুখ বটবৃক্ষের মতো শিকড় ও ঝুরি সহযোগে স্থায়ী আকার ধারণ করে। পশ্চিমবঙ্গে যেমন হইয়াছে। পুরাতন রাজনীতির গঠনমূলক আদর্শটি বিলীন হইলেও পুরাতন রাজনীতির ধ্বংসমূলক আন্দোলন-ধারাটি রহিয়া গিয়াছে। এই রাজ্যের রাজধানীতে যে দিন ট্রাম পুড়াইয়া গণ-আন্দোলনের উদ্বোধন হইয়াছিল, সেই দিনই ভবিষ্যতের গন্তব্যটি নিশ্চিত ভাবে আঁকা হইয়া গিয়াছিল। পরবর্তী কোনও রাজনীতির পক্ষেই আর ওই ধ্বংসের ধারা হইতে বাহির হওয়া সম্ভব হয় নাই। রাজনীতির কথা উঠিতেছে, কেননা সে দিনকার স্টেশন ভাঙচুরের মধ্যেও যে কেবল জনক্ষোভের বিস্ফোরণ ছিল ভাবিলে ভুল হইবে, হয়তো তাহার অতিরিক্ত কিছুই ছিল, যেমন— এক রাজনীতির শোধ লইতে অন্য রাজনীতির উদগ্র বাসনা।

কেবল এক ভাবেই এই অসুখ সারানো সম্ভব— কড়া প্রশাসনিক পদক্ষেপের মাধ্যমে। উচ্ছৃঙ্খল জনতা সব দেশেই থাকে, কিন্তু সামাজিক ভাবে উন্নত দেশগুলিতে সেই জনতাকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করিবার জন্য প্রশাসনিক সক্রিয়তা থাকে। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা সেই সক্রিয়তা তৈরি করে। উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে সংযত করিতে পারিলে বৃহত্তর শান্তিকামী জনতা সন্তুষ্ট হইবে, এই বোধ সেই সক্রিয়তা তৈরি করে। হয়তো এই দেশে রাজনীতির দায়েই সক্রিয়তা দেখানো যায় না, কড়া হাতে দুষ্কৃতী-দমন করা যায় না। কেহ খোলা অস্ত্র হাতে ট্রেনে উঠিলে অন্য যাত্রীরা আপত্তি করিবার আগেই তো রেল কর্তৃপক্ষ বা পুলিশের তাহাতে বাধা দিবার কথা। মুখ্যমন্ত্রী আগেই ঘোষণা করিয়াছিলেন, কোনও অস্ত্র লইয়া প্রকাশ্য বিচরণ চলিবে না। কোনও রাজনৈতিক হিসাব কিংবা বিবেচনা যাহাতে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের পথে বাধা হইয়া না দাঁড়ায়, তাহা দেখা শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীরই কর্তব্য।

Vandalism Protest Train
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy