নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর ব্যবস্থা করা হোক। কিংবা তাঁদের ম্যাজিস্ট্রেট ক্ষমতা (যে ক্ষমতাবলে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীরা সরাসরি পর্যবেক্ষকদের নির্দেশ মানবেন) দেওয়া হোক। কমিশন সূত্রে খবর, এই মর্মে দিল্লিতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দফতরে সুপারিশপত্র পাঠিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গে নিযুক্ত কমিশনের পর্যবেক্ষকেরা। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক মন্তব্যও খতিয়ে দেখার আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা।
বৃহস্পতিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) কাজ খতিয়ে দেখতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষক সি মুরুগান। ফলতায় তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো হয়। নেতৃত্বে ছিলেন তৃণমূল সমর্থক স্থানীয় মহিলারা। ওই ঘটনার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই এ বার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেয়ে দিল্লিতে কমিশনের কাছে চিঠি পাঠালেন পর্যবেক্ষকেরা।
পশ্চিমবঙ্গে বর্তমানে কমিশনের এক জন বিশেষ পর্যবেক্ষক রয়েছেন। এ ছাড়াও রয়েছেন তিন জন ডিভিশাল পর্যবেক্ষক। জেলা অনুযায়ী কাজের জন্য রাজ্যে আরও ১২ জন পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছে কমিশন। বিভিন্ন জেলায় নিযুক্ত রয়েছেন তাঁরা। কমিশন সূত্রে খবর, ফলতার ঘটনার পরে নিরাপত্তায় কোনও খামতি রাখতে চাইছেন না পর্যবেক্ষকেরা। সেই কারণেই কমিশনকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের সুপারিশ করেছেন তাঁরা।
কমিশন সূত্রে খবর, এই পর্যবেক্ষকদের জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তার সুপারিশ করা হয়েছে। সেটি সম্ভব না-হলে, পর্যবেক্ষকদের ম্যাজিস্ট্রেট ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়ার হয়েছে। সাধারণত, কমিশনের পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে পুলিশকর্মীরা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন। তবে নিয়ম অনুসারে, পুলিশকর্মীরা নিজ নিজ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পালন করেন। তবে যদি কারও ম্যাজিস্ট্রেট ক্ষমতা থাকে, সে ক্ষেত্রে তাঁর নির্দেশই পালন করতে হয় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীদের। সেই কারণেই এই দু’টি বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কমিশন সূত্রের দাবি, যেহেতু পর্যবেক্ষকেরা গ্রাউন্ড স্তরে গিয়ে কাজ করছেন, তাই তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।
আরও পড়ুন:
পাশাপাশি, বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগরের এক সভায় মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সিইও দফতর। সূত্রের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী কেন ওই মন্তব্য করেছেন, তা খতিয়ে দেখার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে দিল্লিতে কমিশনের দফতরে। মুখ্যমন্ত্রীকে ওই জনসভায় বলতে শোনা যায়, “কী মা-বোনেরা, নাম কাটলে বাড়িতে সব জিনিসপত্র আছে তো, যেগুলি দিয়ে রান্না করেন? আছে তো? প্রাণে শক্তি আছে? নাম কাটলে ধরবেন তো? ছেড়ে দেবেন না তো? মেয়েরা সামনে লড়াই করবে, আর ছেলেরা পিছনে থাকবে। আমি দেখতে চাই, মা বোনেদের শক্তি বড়, না বিজেপির শক্তি বড়।” ওই মন্তব্যেও আপত্তি জানিয়ে, সেটি খতিয়ে দেখার জন্য পর্যবেক্ষকেরা সুপারিশ করেছেন দিল্লিতে কমিশনের দফতরে।
বস্তুত, এসআইআর-এর কাজ পর্যবেক্ষণ করতে মুরুগানের নেতৃত্বে কমিশনের প্রতিনিধিদল বৃহস্পতিবার ফলতায় গিয়েছিল। বুথ স্তরের আধিকারিকেরা (বিএলও) ঠিকমতো কাজ করছেন কি না, কোন বুথে কত ভোটার মৃত, তা খতিয়ে দেখা হয়। বয়স্ক ভোটারদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে তাঁরা জীবিত না মৃত, খতিয়ে দেখেন মুরুগান। এই সময়েই তৃণমূলের এক দল সমর্থক কমিশনের প্রতিনিধিদলকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। বিক্ষোভকারীদের অধিকাংশই ছিলেন মহিলা। তাঁরা এসআইআর এবং বিজেপির বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। আবাস যোজনার ঘর চেয়ে, ১০০ দিনের কাজের টাকা চেয়ে স্লোগান ওঠে।