বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছিল এসআইআর প্রক্রিয়ায় এনুমারেশন ফর্ম গ্রহণ। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ার বিধানসভাওয়ারি পরিসংখ্যান প্রকাশ করে দিল নির্বাচন কমিশন। তাতে দেখা যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধানসভা ভবানীপুরে যে সংখ্যায় নাম বাদ পড়েছে, তার চার ভাগের এক ভাগ নাম বাদ পড়েছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিধানসভা নন্দীগ্রামে।
কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভবানীপুরে ভোটার ছিলেন (২০২৫ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী) ১ লক্ষ ৬১ হাজার ৫০৯ জন। সেই তালিকা থেকে নাম বাদ পড়েছে ৪৪ হাজার ৭৮৭ জনের। অন্য দিকে নন্দীগ্রামে ভোটার সংখ্যা ছিল ২ লক্ষ ৭৮ হাজার ২১২ জন। এসআইআরে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এই কেন্দ্রে বাদ পড়েছে ১০ হাজার ৫৯৯ জনের নাম।
মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্রে বাদের সংখ্যা প্রায় ৪৫ হাজার। সেখানে বিরোধী দলনেতার কেন্দ্রে বাদ সাড়ে ১০ হাজার। যে সংখ্যা নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। উল্লেখ্য, গত ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়েছিলেন মমতা। কিন্তু দেখা যায় ১ হাজার ৯৫৬ ভোটে মমতা পরাজিত হয়েছেন শুভেন্দুর কাছে। যদিও ভোটের ফল এবং গণনা নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা হয়েছে। সেই মামলায় বিচারক বদল হয়েছে। কিন্তু আরও একটা বিধানসভা ভোট আসতে চললেও তার নিষ্পত্তি হয়নি। পরে মমতা ভবানীপুর থেকে উপনির্বাচনে জয়ী হন। সেই নির্বাচনে মমতার জয়ের ব্যবধান ছিল ৫৮ হাজার ৮৩৫ ভোট। তবে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে ভবানীপুরে তৃণমূলের হয়ে লড়েছিলেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তখন তাঁর জয়ের ব্যবধান ছিল ২৮ হাজার ৭১৯ ভোটের।
এই বাদ পড়া নামকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করেছে কমিশন। কেউ মৃত, কেউ অন্যত্র চলে গিয়েছেন, আবার কারও নাম রয়েছে একাধিক জায়গায়। ভবানীপুরের থেকেও বেশি নাম বাদ পড়েছে রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের বিধানসভা কেন্দ্র কলকাতা বন্দরে। সেখানে বাদ পড়ার সংখ্যা ৬৩ হাজার ৭৩০। রাজ্যের আর এক গুরুত্বপূর্ণমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের টালিগঞ্জে নাম বাদ পড়েছে ৩৫ হাজার ৩০৯ জনের। বিজেপির পরিষদীয় দলের অন্যতম দু’জন গুরুত্বপূর্ণ মুখ অগ্নিমিত্রা পাল এবং শঙ্কর ঘোষের কেন্দ্রে নাম বাদ পড়ার হার নন্দীগ্রামের তুলনায় বেশি হলেও কলকাতা বন্দরের তুলনায় কম। অগ্নিমিত্রার কেন্দ্র আসানসোল দক্ষিণে নাম বাদ পড়েছে ৩৯ হাজার ২০২ জনের। শঙ্করের শিলিগুড়িতে সেই সংখ্যা ৩১ হাজার ১৮১।
আরও পড়ুন:
আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও মন্ত্রীদের বিধানসভা কেন্দ্রেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় নাম বাদ পড়েছে। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর বিধানসভা কেন্দ্র দমদমে নাম বাদ পড়েছে ৩৩ হাজার ৮৬২ জনের। তার ঠিক পাশেই আর এক মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের বিধানসভা উত্তর দমদমে নাম বাদ পড়ার সংখ্যা ৩৩ হাজার ৯১২। শশী পাঁজার শ্যমপুকুরে ৪২ হাজার ৩০৩, বাবুল সুপ্রিয়ের বালিগঞ্জে ৬৫ হাজার ১৭১, ইন্দ্রনীল সেনের চন্দননগরে ২৫ হাজার ৪৭৮ এবং মনোজ তিওয়ারির শিবপুরে ৩৩ হাজার ৫০৫ জনের নাম বাদ পড়েছে আপাতত। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বেহালা পশ্চিমে নাম বাদের সংখ্যা ৫২ হাজার ২৪৭। পাশের কেন্দ্র রত্না চট্টোপাধ্যায়ের বেহালা পূর্বে নাম বাদ পড়েছে ৫৩ হাজার ৩৬ জনের।
জেলাগত ভাবে সবচেয়ে বেশি নাম বাদ পড়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। ঘটনাচক্রে, গত কয়েক বছর ধরে এই জেলা রাজনৈতিক শক্তির নিরিখে রাজ্য রাজনীতিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেলা হিসাবেই পরিচিত। অভিষেক এই জেলারই ডায়মন্ড হারবার থেকে সাংসদ। গত লোকসভা ভোটে তাঁর জয়ের ব্যবধান ছিল সাত লক্ষের বেশি। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় নাম বাদ পড়েছে ৮ লক্ষ ১৬ হাজার ৪৭ জনের। রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভার মধ্যে সবচেয়ে বেশি নাম বাদ পড়েছে উত্তর কলকাতার চৌরঙ্গীতে। যেখানকার বিধায়ক তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। চৌরঙ্গীতে নাম বাদ পড়েছে ৭৪ হাজার ৫৫৩ জনের। সবচেয়ে কম নাম বাদ পড়েছে বাঁকুড়ার কোতুলপুর বিধানসভায়। সেখানে নাম বাদ পড়েছে পাঁচ হাজার ৬৭৮ জনের। সব মিলিয়ে ৫৮ লক্ষের বেশি নাম বাদ পড়েছে এসআইআরের প্রথম পর্বে। আগামী মঙ্গলবার খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন।