Advertisement
E-Paper

বদল চাইলে স্বপ্ন দেখা খুব জরুরি

লক্ষ্য যত কঠিন হোক, সঙ্কল্প দৃঢ় হলে লক্ষ্যপূরণ যে কঠিন নয়, তা অবশ্য প্রমাণ করেছেন আরও অনেক মেয়েই। শ্যামলী চৌধুরীদের লক্ষ্য ছিল জনপ্রিয় শিল্প পুরিশের একচেটিয়া অধিকারে ধাক্কা দেওয়া, লক্ষ্য ছিল স্বাবলম্বী হওয়া।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৮ ০০:৩৫
অনুশীলনে শ্যামলী চৌধুরী (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

অনুশীলনে শ্যামলী চৌধুরী (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

বাস্তব বড় অমোঘ, এ ধরায় বাস্তবকে অস্বীকার করে কিছুই হয় না। ‘বাস্তববাদী’ তাত্ত্বিক এ কথা বলতেই পারেন। কথাটা পুরোপুরি ভুলও নয়, কিন্তু কথাটা শেষ কথাও নয়।

বাস্তবকে অস্বীকার করে কিছু করা যায় না, এ কথাঠিক কিন্তু কোনও বাস্তবই চূড়ান্ত নয়, এ কথাও ঠিক। চলতি বাস্তবতাকে স্বীকার করেই ভবিষ্যত্ বাস্তবতার দিকে তাকাতে হয়। ভবিষ্যতের বাস্তবতাটা অন্য রকম হবে, আমার পছন্দসই হবে, আরও সভ্য হবে— এমন স্বপ্ন দেখতে হয়। সেই স্বপ্নই বাস্তবকে এক দিন বদলে দেয়। অতএব দিনের শেষে সবচেয়ে শক্তিশালী আমাদের স্বপ্নগুলোই।

স্বপ্নের পথে এগনোর তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে। যে যাঁর নিজের নিজের তরে স্বপ্ন দেখছেন। তার বাস্তবায়নে উদ্যোগীও হচ্ছেন। কর্নাটকে শাসনক্ষমতার দখল নিয়েছে কংগ্রেস-জেডি(এস) জোট। বিজেপিকে সরকার গড়তে না দেওয়ার সঙ্কল্পে অনড় ছিলেন রাহুল গাঁধী-দেবগৌড়ারা। বিস্তর টানাপড়েন পেরিয়ে সে সঙ্কল্পের বাস্তবায়ন হয়েছে। এ বার গোটা দেশে একই মডেলে জোট গড়ে ফেলার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। স্বপ্ন হল পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হারানো। অন্য প্রান্তে বিজেপির স্বপ্ন হল, দেশের প্রায় সব রাজ্যে গৈরিক ধ্বজা উড্ডীন করা, ২০১৯-এর নির্বাচনে আরও বড় গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসা। একই সময়ে অখ্যাত, অজ্ঞাত কুলশীল শ্যামলী চৌধুরীদের স্বপ্ন হল, সামাজিক গোঁড়ামিগুলোতে গুঁড়িয়ে দেওয়া যত দ্রুত সম্ভব।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

মেয়েরা বিয়ে দেওয়ার জন্য প্রতিপালিত, ঘর-কন্যা করার জন্য নিবেদিত— এমন ধারণা ঘরে ঘরে। এই ধারণার বিরুদ্ধে লড়তে যাওয়া বিপজ্জনকও অনেক সময়েই। সামাজিক পরিসরে মেয়েদের ভূমিকা কী হওয়া উচিত, সে সম্পর্কে বদ্ধমূল এই ভুল ধারণাটা এবং তার বিরুদ্ধে লড়তে যাওয়ার বিপদটাই বাস্তবতা বর্তমানে। কিন্তু এই বাস্তবতাই চূড়ান্ত নয়, একেও বদলানো যায়, বদলে দেওয়াও যাবে একটু চেষ্টা করলেই— এই স্বপ্নই দেখেছেন শ্যামলীরা। স্বপ্ন আজ অনেকখানি বাস্তব। পুরুলিয়ার ছৌ নাচের খ্যাতি ভুবনজোড়া। কিন্তু তাতে অধিকার শুধু পুরুষের, মেয়েরা নাচতে পারবেন না, রীতি-রেওয়াজ এমনই ছিল এত দিন। শ্যামলীরা সেই রেওয়াজ বদলে দিয়েছেন। বিস্তর সামাজিক বাধা, হরেক বিপত্তি, সমালোচনা-নিন্দা-বক্রোক্তি, অনেক কিছু শুনতে হয়েছে শ্যামলীকে, সইতে হয়েছে তাঁর গ্রামের আরও অনেক মেয়েকে। সে সব নস্যাত্ করে ছৌ-এর টানে এগিয়েছেন মেয়েরা, কখনও পাশে পেয়েছেন পরিবারকে, কখনও পাশে পেয়েছেন গ্রামের আর পাঁচটা মেয়েকে, কখনও পেয়েছেন কলকাতার কোনও মহিলা ছৌ শিল্পীকে, কখনও কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে। আজ শ্যামলীদের ছৌ-এর দলক্রমশ প্রখ্যাত, জেলার সীমানা ছাড়িয়ে খ্যাতি আজ রাজ্য জয়ের পথে।

আরও পড়ুন: মুখোশ খুলে দেখাতে হল, ছৌ নাচছেন মেয়েরা

লক্ষ্য যত কঠিন হোক, সঙ্কল্প দৃঢ় হলে লক্ষ্যপূরণ যে কঠিন নয়, তা অবশ্য প্রমাণ করেছেন আরও অনেক মেয়েই। শ্যামলী চৌধুরীদের লক্ষ্য ছিল জনপ্রিয় শিল্পে পুরুষের একচেটিয়া অধিকারে ধাক্কা দেওয়া, লক্ষ্য ছিল স্বাবলম্বী হওয়া। আশাপূর্ণা বিশ্বাস, শাহিনা খাতুন, মরিয়ম খাতুন, অপর্ণা হালদারদের লক্ষ্য ছিল নিজেদের শিক্ষার অধিকার সুনিশ্চিত করা, নাবালিকা বয়সেই বিয়ে হয়ে যাওয়া আটকানো। পুরুলিয়ার শ্যামলী চৌধুরীরা যেমন সফল, মুর্শিদাবাদে আশাপূর্ণা-শাহিনা-মরিয়ম-অপর্ণারাও তেমনই। পড়বেন আরও অনেক দূর, নির্দিষ্ট বয়স হওয়ার আগেই বিয়ে করবেন না— স্বপ্ন ছিল এই মেয়েদের। শ্যামলী তাও নিজের পরিবারকে পাশে পেয়েছিলেন ছৌ-স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে। আশাপূর্ণাদের ক্ষেত্রে পরিবারই স্বপ্ন পূরণের পথে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল। তাও লড়াই ছাড়েনি মেয়েরা। দৃঢ় সঙ্কল্পের ফলও মিলেছে।

বদলটা এ ভাবেই আসে ধাপে ধাপে। আর বদলটা আসে তাঁদের হাত ধরে, যাঁরা চলতি বাস্তবটাকে বদলে দেওয়ার মতো স্বপ্ন দেখার স্পর্ধা রাখেন। ছৌ শিল্পী শ্যামলী হন বা শিক্ষার অধিকারের দাবিতে রুখে দাঁড়ানো আশাপূর্ণা-শাহিনা, স্বপ্নগুলো একগুঁয়ে ছিল প্রত্যেকেরই। ফলটা সবার চোখের সামনে— নিজেদের আশপাশটা ইতিমধ্যেই বদলে ফেলেছেন ওই মেয়েরা, স্বপ্ন দেখাচ্ছেন আরও অনেককেই।

Newsletter Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় Gender discrimination Chhou dancer Shyamali Chowdhury
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy