মহিলাদের জন্য নরেন্দ্র মোদী সরকার কী করিয়াছে? ভারতীয় জনতা পার্টির নেতা অমিত শাহ সংসদে দুইটি সাফল্য উল্লেখ করিয়াছেন। উজ্জ্বলা প্রকল্পে রান্নার গ্যাস, এবং স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পে শৌচাগার। তিন কোটি দরিদ্র গৃহস্থালিতে রান্নার গ্যাস আসিয়াছে, এ বৎসর সরকারের লক্ষ্য আট কোটি। শৌচাগারও প্রচুর নির্মিত হইয়াছে, ২০২২ সালে সকল ঘরে শৌচাগার থাকিবে। হায়, দুইটি প্রতিশ্রুতিতেই বিস্তর ফাঁক। গ্যাসের সিলিন্ডারের উচ্চ মূল্য, এবং তাহা পাইবার বিলম্ব, এই দুইটি কারণে বহু দরিদ্র পরিবারে মহিলারা সংযোগ পাইয়াও গ্যাসের ব্যবহার এড়াইতেছেন। শৌচাগার অতি কার্যকর বটে, যদিও সরকারি হিসাব, গ্রামীণ ভারতের অর্ধেকেরও অধিক মানুষের উন্মুক্ত শৌচের অভ্যাসে পরিবর্তন আসে নাই। কিন্তু কেবল প্রকল্পের সীমাবদ্ধতা দিয়া সরকারের মূল্যায়ন করিলে ভুল হইবে। কোন প্রকল্পগুলির উপর গুরুত্ব দিতেছে সরকার, তাহা বিবেচ্য। রান্নাঘর ও শৌচাগার, উভয়ই মহিলাদের স্থানটি গৃহস্থালিতে নির্দিষ্ট করিতেছে। অথচ কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণে ভারত বিশ্বে শেষের সারিতে। উচ্চ শিক্ষার প্রসার সত্ত্বেও মেয়েদের কর্মক্ষেত্রে যোগদান বাড়ে নাই, কমিয়াছে।
অথচ যে প্রকল্পগুলি কিশোরী ও তরুণীদের জনজীবনে অংশগ্রহণের স্বাচ্ছন্দ্য বাড়াইত, সেগুলি উপেক্ষিত। সুলভ স্যানিটারি ন্যাপকিন সরবরাহের প্রকল্প তাহার অন্যতম। সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় প্রকাশ, অনিয়মিত জোগানের কারণে এই প্রকল্প সফল হয় নাই। স্যানিটারি ন্যাপকিন হাতে পাইয়াছে গ্রামের মেয়েদের মাত্র ত্রিশ শতাংশ। একাধিক মন্ত্রক এই প্রকল্পের দায়িত্বে রহিয়াছে, কেহই গুরুত্ব দেয় নাই। কর্মরত মেয়েদের সুরক্ষার বিষয়টিও এমনই অবহেলিত। মহিলা যাত্রীদের আপৎকালীন সুরক্ষার জন্য নির্ভয়া ফান্ডের পাঁচশো কোটি টাকা পাইয়াছিল ভারতীয় রেল। তাহাতে নজরদারি ক্যামেরা বসাইবার ও কন্ট্রোল রুমের তৎপরতা বাড়াইবার কথা ছিল। খরচ হইয়াছে বরাদ্দের দশ শতাংশ। মেয়েদের বিরুদ্ধে সাইবারক্রাইম প্রতিরোধের জন্য বরাদ্দ টাকার অর্ধেকও খরচ হয় নাই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের তদন্তের জন্য একটি পৃথক বিভাগ গড়িয়াছিল। বরাদ্দ হইয়াছিল তিনশো কোটি টাকা। খরচ হয় নাই, বিভাগটি উঠিয়া গিয়াছে। নির্ভয়া তহবিলের টাকা ইউপিএ সরকার ব্যয় করে নাই, এনডিএ সরকারও করিল না!
প্রতি বাজেটে মহিলাদের জন্য যেন এমন শূন্য প্রতিশ্রুতিই বরাদ্দ করিয়াছে কেন্দ্র। মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিয়া রোজগার বাড়াইতে মহিলা ব্যাংক শুরু হইল। ফের উঠিয়াও গেল, কাজ করিল না। প্রভিডেন্ট ফান্ডে মহিলা কর্মীদের প্রদেয় অর্থে কিঞ্চিৎ ছাড় মিলিয়াছে, তাহা লইয়া কত না প্রচার। কিন্তু একশো দিনের কাজের প্রকল্পে এই বৎসরের বরাদ্দ গত বৎসরের ব্যয়ের সমান, কিছুই বাড়ে নাই। অথচ এই প্রকল্পে কর্মীদের ছাপ্পান্ন শতাংশ মহিলা। দরিদ্র মহিলাদের একটি প্রধান অবলম্বন এই প্রকল্প। বরাদ্দ কমিয়াছে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের। অতি সামান্য বরাদ্দ বাড়িয়াছে অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্পে। আশা কর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, গ্রামীণ ভারতে ইহারাই তো প্রশিক্ষিত, কর্মরত মহিলার দৃষ্টান্ত। ইহাদের প্রতি কৃপণ হইয়া অনর্থক, অপরিকল্পিত প্রকল্পে টাকা ঢালিয়া কেন্দ্র মহিলাদের সক্ষমতা বাড়াইবে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy