Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

শেষ নাহি যে

সত্যই এখন আর প্রথাগত সংবাদমাধ্যমের উপর মানুষের সেই অটল বিশ্বাস আর নাই। তাহার একটি বড় কারণ সেই সব সাংবাদিক, যাঁহারা প্রাত্যহিক সান্ধ্য তরজায় দেশ কী জানিতে চাহে, সেই প্রশ্নের উত্তর সন্ধানের অছিলায় ছাপ্পান্ন ইঞ্চির মাহাত্ম্য বর্ণন করিয়া থাকেন। আর একটি কারণ, সংবাদমাধ্যমের উপর কী পরিমাণ রাষ্ট্রীয় চাপ আছে, মানুষ দেখিতেছেন।

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

শেষ কথা বলিবার অধিকারটি তবে কাহার? কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি জানাইয়াছেন, সাংবাদিকদের নহে। পূর্বে, যখন সংবাদের জন্য সাংবাদিকদের উপর নির্ভর করা ভিন্ন গতি ছিল না, তখন মানুষ তাঁহাদের বিশ্বাস করিতে বাধ্য ছিলেন। কিন্তু, এই সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে মানুষের নিকট তথ্যের উৎস একাধিক— ফলে, মন্ত্রিমহোদয়ার রায়, সাংবাদিকদের আর সেই মাহাত্ম্য নাই। আন্তর্জাতিক স্তরে যখন ভারতের শাসকদলের সাইবার আর্মির দাপট লইয়া সমালোচনা চলিতেছে, ‘ফেক নিউজ’ বা ‘ভুয়া খবর’ প্রচার করিতে তাহাদের তৎপরতার কথা বারে বারে উঠিয়া আসিতেছে, ঠিক তখনই সংবাদদাতা হিসাবে সোশ্যাল মিডিয়ার বন্দনা বুদ্ধিমতীর কাজ হইল কি না, তিনি ভাবিয়া দেখিতে পারেন। তবে, তাঁহার কথাটি সম্পূর্ণ উড়াইয়া দেওয়ার নহে। সত্যই এখন আর প্রথাগত সংবাদমাধ্যমের উপর মানুষের সেই অটল বিশ্বাস আর নাই। তাহার একটি বড় কারণ সেই সব সাংবাদিক, যাঁহারা প্রাত্যহিক সান্ধ্য তরজায় দেশ কী জানিতে চাহে, সেই প্রশ্নের উত্তর সন্ধানের অছিলায় ছাপ্পান্ন ইঞ্চির মাহাত্ম্য বর্ণন করিয়া থাকেন। আর একটি কারণ, সংবাদমাধ্যমের উপর কী পরিমাণ রাষ্ট্রীয় চাপ আছে, মানুষ দেখিতেছেন। সেই চাপের মুখে সকল সংবাদমাধ্যম মেরুদণ্ড সমান সোজা রাখিতে পারিবে, মানুষ বিশ্বাস না-ই করিতে পারেন। অন্য কারণ, সেই ছাপ্পান্ন ইঞ্চির মহিমায় ভক্তদের অটল বিশ্বাস। ফলে, যে সংবাদ সেই মহিমাকে প্রশ্ন করে, শুধুমাত্র সেই প্রশ্নের কারণেই তাহাকে অবিশ্বাস করা অনেকের নিকট কর্তব্য। মন্ত্রিমহোদয়া যে কারণটির কথা উল্লেখ করিয়াছেন, তাহাও ঠিক— মানুষের নিকট এখন তথ্য প্রচুর, ফলে কোনও একটি সূত্রকে বিনা প্রশ্নে বিশ্বাস করিবার আর প্রয়োজন নাই।

কিন্তু, স্মৃতি ইরানির কথাও কি শেষ কথা? এমনকি তাঁহার প্রবলপরাক্রমী প্রধানমন্ত্রীর কথা? অস্বীকার করিবার উপায় নাই, একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর নিকট প্রধানমন্ত্রীর কথার উপর আর কথা নাই। তিনি নোটবন্দিকে ভাল বলিলে সেই জনগোষ্ঠী হাততালি দেয়, অর্থনীতির ধ্বংসস্তূপের উপর দাঁড়াইয়াও ‘অচ্ছে দিন’-এর রূপকথায় বিশ্বাস করে। কিন্তু, দুর্জনে বলে, এই জনগোষ্ঠীর আয়তন দিনে-রাত্রে হ্রাস পাইতেছে। আগে যাঁহারা বিশ্বাস করিয়াছিলেন যে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসিলেই দেশের পথঘাট মেয়েদের জন্য নিরাপদ হইবে, প্রত্যেক ভারতীয়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পনেরো লক্ষ টাকা ঢুকিবে, ডলারের দাম নামিয়া আসিবে চল্লিশ টাকায় আর পেট্রল কার্যত নিখরচায় মিলিবে, বাস্তব অভিজ্ঞতা তাঁহাদের সিংহভাগকে শিখাইয়াছে, কাহারও মুখের কথায় অন্ধ ভাবে বিশ্বাস করিতে নাই। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাসিয়া আসা উড়ো খবরের ভরসায় নহে, তাঁহারা মুখের কথাকে বিচার করিতে শিখিয়াছেন অভিজ্ঞতার আলোয়। তাঁহারা প্রেক্ষিতের সহিত বক্তব্যকে মিলাইয়া পড়িতে শিখিতেছেন। মানুষের মধ্যে বিনা প্রশ্নে বিশ্বাস করিবার প্রবণতা হ্রাস পাইলে সংবাদমাধ্যম বা সাংবাদিকদের যতখানি বিপদ, রাজনীতিকদের বিপদ তাহার তুলনায় বেশি কি না, স্মৃতি ইরানি না জানিলেও নরেন্দ্র মোদী বিলক্ষণ জানিবেন। রাজনীতির অভিজ্ঞতা তাঁহার আছে। সময় পাইলে শ্রীমতী ইরানি সেই বিপদের কথাও ভাবিয়া দেখিবেন, আশা করা যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE