Advertisement
E-Paper

দেহের অধিকার

ম নুষ্যদেহের উপর সর্বোচ্চ অধিকার কাহার? ভারতের অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগী সরাসরি এই প্রশ্নের জবাব দেন নাই, কিন্তু ভারতীয় আইনের বিভিন্ন ধারার কথা উল্লেখ করিয়া দাবি করিয়াছেন, অধিকারটি যাঁহার দেহ, তাঁহার নহে।

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৭ ০০:০০

ম নুষ্যদেহের উপর সর্বোচ্চ অধিকার কাহার? ভারতের অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগী সরাসরি এই প্রশ্নের জবাব দেন নাই, কিন্তু ভারতীয় আইনের বিভিন্ন ধারার কথা উল্লেখ করিয়া দাবি করিয়াছেন, অধিকারটি যাঁহার দেহ, তাঁহার নহে। সংবিধান সেই অধিকার স্বীকার করিলে আত্মহত্যা বা ড্রাগের নেশা বে-আইনি হইত না। আইনজীবীরা আইনের ফাঁক খুঁজিবার চেষ্টা করিবেন, তাহা স্বাভাবিক। কিন্তু, আইনের গভীরে যে দার্শনিক প্রজ্ঞা থাকে, ফাঁক খুঁজিবার খেলায় তাহাকে অস্বীকার করিলে মুশকিল। রোহতগী সেই ফাঁদেই পা দিয়াছেন। তিনি আধার কার্ডের জন্য বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহে নাগরিকের আপত্তিকে নস্যাৎ করিবার উদ্দেশে সওয়াল করিতেছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট স্মরণ করাইয়া দিয়াছে, আত্মহত্যায় বাধা দেওয়া আর হাতের ছাপ দিতে বাধ্য করা এক কথা নহে। কেহ যখন সম্পূর্ণ সচেতন ভাবেই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত করেন, অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা করিয়া, নিজের এবং/অথবা পরিবারের লাভ-ক্ষতির হিসাব করিয়াই করেন, তখনও তিনি নিজেকে একটি উদ্দেশ্যসাধনের জন্য ‘ব্যবহার’ করেন। সেই উদ্দেশ্য হয়তো মুক্তি, হয়তো পরিবারকে আর্থিক বিপর্যয় হইতে রক্ষা করা। কিন্তু, দর্শনের একটি যুক্তি বলিবে— ব্যক্তি নিজেই তাহার অস্তিত্বের সর্বোত্তম উদ্দেশ্য, তাহাকে অন্য কোনও উদ্দেশ্যে ব্যবহার করিবার অর্থ তাহার ‘সম্ভ্রম’ নষ্ট করা। অপরে কাহাকে ‘ব্যবহার’ করিলে যেমন সেই ব্যক্তির ‘সম্ভ্রম’ নষ্ট হয়, নিজেকে নিজে ‘ব্যবহার’ করিলেও সেই ক্ষতিই হয়। কাহারও ‘সম্ভ্রম’ নষ্ট করিবার নৈতিক অধিকার অন্য কাহারও যেমন নাই, স্বয়ং সেই ব্যক্তিরও নাই। এই কারণেই আত্মহত্যা নৈতিক অপরাধ। অতএব, আইন তাহাকে সমর্থন করিতে পারে না।

মুকুল রোহতগী এক জটিল প্রশ্নের উৎসমুখ খুলিয়া দিয়াছেন। মনুষ্যদেহের উপর রাষ্ট্রের অধিকার সর্বোচ্চ, এহেন দাবির পিছনে যে মনোভাবটি রহিয়াছে, তাহা রাষ্ট্রবাদী— যে চিন্তাকাঠামোয় নাগরিক অপেক্ষা রাষ্ট্রের গুরুত্ব বহু গুণ বেশি। সেখানে নাগরিক রাষ্ট্রের সম্পত্তিমাত্র, রাষ্ট্র তাহাকে যে পথে খুশি, ব্যবহার করিতে পারে। উদারবাদী রাষ্ট্র এই অবস্থান লইতে পারে না। সেখানে রাষ্ট্র একটি পরিসর, কিন্তু তাহার অভ্যন্তরে থাকা নাগরিকের সম্পূর্ণ ‘এজেন্সি’ রহিয়াছে। নাগরিকের ‘স্ব-ত্ব’কে অস্বীকার করিবার অধিকার উদারবাদী রাষ্ট্রের নাই। অতএব, তাহার দেহের উপর সর্বোচ্চ অধিকারও রাষ্ট্র— কেবলমাত্র রাষ্ট্র হইবার কারণেই— দাবি করিতে পারে না। সেই দাবির জন্য ভিন্নতর যুক্তি প্রয়োজন। অতিক্রিয়া একটি যুক্তি হইতে পারে। রাষ্ট্র যদি তর্কাতীত ভাবে প্রমাণ করিতে পারে যে প্রতিটি নাগরিকের দেহের উপর তাহার দাবি অলঙ্ঘ্য না হইলে তাহার কু-প্রভাব সব নাগরিকের উপর পড়িবে, তাহাদের সমতুল বা বৃহত্তর কোনও অধিকার লঙ্ঘিত হইবে, তবে রাষ্ট্র নাগরিকের দেহের উপর অধিকার দাবি করিতে পারে। আধার কার্ড-এর ক্ষেত্রে এই কথাটি প্রমাণ করা কার্যত অসম্ভব। আয়কর আদায়ে সুবিধা হইবে, ফলে উন্নয়ন কার্যে সরকারের ব্যয়ক্ষমতা বাড়িবে অতএব সব নাগরিকের লাভ হইবে— এহেন কার্যসাধনসর্বস্ব লঘু যুক্তির জোরে রাষ্ট্র যদি নাগরিকের দেহের সর্বোচ্চ অধিকার আদায় করিতে চাহে, তাহা অনৈতিক। রাষ্ট্রীয় জবরদস্তি।

human body right
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy