Advertisement
E-Paper

এই বিদ্বেষ বিষের সর্বনাশ জরুরি

উগ্র জাতীয়তাবাদ, খণ্ড জাতীয়তাবাদ, প্রাদেশিকতা, অসহিষ্ণুতা— একটা পর্ব চলছে যেন গোটা দেশ জুড়ে। হিংসাত্মক হয়ে ওঠার পর্ব। বিপুল বৈচিত্রের দেশটার ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্টগুলো যেন পরস্পরের প্রতি হিংসাত্মক হয়ে উঠেছে দিন দিন।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৫৯
শোকার্ত: আসামে জঙ্গিদের হাতে নিহতদের পরিবার।—ছবি পিটিআই।

শোকার্ত: আসামে জঙ্গিদের হাতে নিহতদের পরিবার।—ছবি পিটিআই।

সমগ্র জাতি শিউরে উঠেছে। অসমের তিনসুকিয়ায় যে ভয়াবহ গণহত্যা ঘটেছে, তা কাঁপিয়ে দিয়েছে গোটা দেশকে। কিন্তু এই শিউরে ওঠা বা এই কেঁপে ওঠাতেও বিদ্বেষে ইতি পড়বে বলে ভরসা হচ্ছে না আর।

উগ্র জাতীয়তাবাদ, খণ্ড জাতীয়তাবাদ, প্রাদেশিকতা, অসহিষ্ণুতা— একটা পর্ব চলছে যেন গোটা দেশ জুড়ে। হিংসাত্মক হয়ে ওঠার পর্ব। বিপুল বৈচিত্রের দেশটার ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্টগুলো যেন পরস্পরের প্রতি হিংসাত্মক হয়ে উঠছে দিন দিন। তিনসুকিয়ায় পাঁচ বাঙালির হত্যা যে সেই তীব্র বিদ্বেষ এবং তজ্জনিত হিংসার ফলশ্রুতি, তা নিয়ে সংশয়ের বিন্দুমাত্র অবকাশ সম্ভবত নেই।

অসমে গণহত্যা বা বাঙালি হত্যা আমরা এই প্রথম দেখছি, তা নয়। এর আগেও দেখেছি, আরও ভয়াবহ রূপ দেখেছি। কিন্তু সে এক অশান্ত, উত্তপ্ত, রক্তাক্ত সময়ের আখ্যান। সে যুগ পেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিলাম আমরা। হিংসার ইতিবৃত্তকে পিছনে ফেলে সহাবস্থানের এবং স্থিতিশীলতার একটা যুগে পৌঁছতে আমরা সমর্থ হয়েছিলাম। সেই উত্তরণ যদি আমাদের সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হয়, তা হলে আজকের রক্তাক্ত-অবসন্ন ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা আমাদের মারণ ব্যর্থতার সাক্ষ্য বহন করছে।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

শুধু অসমে নয়, গোটা দেশেই বিদ্বেষ বিষের ছায়া দেখা যাচ্ছে আজ। কোথাও উত্তর ভারতীয়দের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ, কোথাও উত্তর-পূর্বের নাগরিকদের উপর আক্রমণ, কোথাও বাঙালি হত্যা, কোথাও দুই স্থানীয় জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সঙ্ঘাত— দেশের নানা প্রান্তে বিদ্বেষ মাথাচাড়া দিচ্ছে। ভিন্ন ভিন্ন উপলক্ষকে সামনে রেখে তারা প্রকাশের পথ খুঁজে নিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বিদ্বেষের ধাঁচটা যেন অনেকটা একই রকম সর্বত্র। একদা উত্তপ্ত অসম মাঝে স্থিতি‌শীল ছিল। কিন্তু দেশজোড়া বিদ্বেষের হাওয়া সে প্রান্তেও পৌঁছে গেল, ফের হিংসার মেঘ জমাট বাঁধল।

দেশের নানা প্রান্তে এই বিদ্বেষ আশিরনখ সামাজিক সঙ্কট জনিত, এমনটা বলব না। এর নেপথ্যে রাজনীতিও রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই জনবিন্যাস জনিত সঙ্কটগুলোকে রাজনীতি নিজের কাজে লাগাতে চাইছে, কার্যসিদ্ধির হাতিয়ার করে তুলতে চাইছে। রাজনীতির এই জঘন্য খেলাটা খুব একটা সূক্ষ্মও নয়। স্থূলই বরং। সহজেই ধরা যায়। তাই নৈরাজ্যবাদীরা সহজেই পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে।

আরও পড়ুন: বাঙালিদের উপরে হামলা চালাতে পারে আলফা, দিল্লি সতর্ক করেছিল সাত দিন আগে!

বিদ্বেষের এই খেলাকে তখনই হাতিয়ার করার প্রয়োজন হয়, যখন অন্য পথগুলোয় সাফল্য মেলে না। জীবন, জীবিকা ও যাপনের অন্যান্য সূচকগুলোয় যখন অসাফল্যের ইঙ্গিত মিলতে শুরু করে, তখন নজর ঘোরানো ছাড়া অন্য কোনও উপায় থাকে না। বিদ্বেষের চর্চা বড় মারাত্মক চুম্বক এখনও আমাদের অনেকের জন্যই। অন্য সব ভুলিয়ে হানাহানিতে মত্ত করে তোলে সে চর্চা আমাদের।

অসমে যে ঘটনা ঘটল, কোনও রাজনৈতিক দল তা চেয়েছিল কি না, সে নিয়ে তর্ক চলতেই পারে। কিন্তু এই বিদ্বেষ বিষ যে এক সময় রাজনীতির হাতিয়ার হয়েছিল, তা অস্বীকার করার উপায় কারও কাছেই নেই। বিদ্বেষ বিষ যে এ বার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে, তাও খুব স্পষ্ট।

অসমে ভয়াবহ ঘটনার প্রেক্ষিতে পদক্ষেপ করা শুরু হয়েছে, সে কথা ঠিক। কিন্তু পদক্ষেপ অত্যন্ত কঠোর হওয়া জরুরি, পদক্ষেপ অত্যন্ত নীতিনিষ্ঠ ভাবে হওয়া জরুরি। পরিস্থিতি যেখানে পৌঁছচ্ছে, তাতে বিন্দুমাত্র শিথিলতা বা ফাঁকি বা প্রতারণার অবকাশ কিন্তু আর নেই। সমস্ত রন্ধ্র বন্ধ করে দিয়ে আজ ঘিরে ফেলতে হবে এই বিষকে। না হলে এ দেশের নানা প্রান্তেই যে প্যান্ডোরার বাক্স উন্মুক্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়, সে আমাদের অজানা নয়।

Newsletter Assam Tinsukia Massacre Killing Terrorist ULFA NRC Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy