Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

অক্ষমণীয়

মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী নামক মানুষটি তাঁহাদের নিকট নোটের উপর ছাপা একটি ছবি বই আর কিছু নহেন।

নরেন্দ্র মোদী ও সাধ্বী প্রজ্ঞা।—ফাইল চিত্র।

নরেন্দ্র মোদী ও সাধ্বী প্রজ্ঞা।—ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৯ ০০:০৩
Share: Save:

নরেন্দ্র মোদীর অপরাগতা লইয়া দেশ তবে কী করিবে? তিনি জানাইয়াছেন, গাঁধী বিষয়ক মন্তব্যের জন্য তিনি কখনও প্রজ্ঞা ঠাকুরকে ক্ষমা করিতে পারিবেন না। সেই অক্ষমণীয় অপরাধের জন্য শ্রীমোদী কি সাধ্বীর প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করিতে বলিলেন? না। জাতির জনকের প্রতি যাঁহার তিলমাত্র শ্রদ্ধা নাই, তেমন কোনও প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার বিপক্ষে সওয়াল করিলেন? না। এমনকি প্রজ্ঞার সহিত দূরত্বও রচনা করিলেন না। বরং জানাইলেন, কোনও হিন্দু ‘সন্ত্রাসবাদী’ হইতে পারে না। ফলে, প্রজ্ঞা ঠাকুরকে ক্ষমা করিতে তাঁহার অপারগতা ঠিক কোন পথে ভারতীয় গণতন্ত্রের শক্তিবৃদ্ধি করিবে, দেশবাসী বুঝিতে ব্যর্থ। প্রজ্ঞা ঠাকুরদের বোঝা বরং অনেক সহজ। মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী নামক মানুষটি তাঁহাদের নিকট নোটের উপর ছাপা একটি ছবি বই আর কিছু নহেন। কারণ, তাঁহারা যে ‘রাজনীতি’তে বিশ্বাসী, গাঁধীর সমগ্র অস্তিত্ব সেই রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করে, তাহার অন্যায্যতা দেখাইয়া দেয়। প্রজ্ঞা ঠাকুরদের নিকট নাথুরাম গডসে অনেক বেশি আপন হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁহারা ‘দেশ’ বলিতে যে বিচিত্র ধারণাটিকে বোঝেন, গডসে সেই দেশে বড় মাপের দেশপ্রেমীই বটে। গাঁধী নিশ্চিত ভাবেই সেই দেশে ‘দেশদ্রোহী’। অতএব, গডসেকে কেহ সন্ত্রাসবাদী বলিলে প্রজ্ঞা ঠাকুরদের গাত্রদাহ হওয়া স্বাভাবিক। অভিনেতা কমল হাসন সেই দাহের তাপ টেরও পাইতেছেন। আদালত তাঁহার বিরুদ্ধে মামলা খারিজ করিয়া দিয়াছে বটে, কিন্তু একটি মন্তব্যে দেখিয়াছেন ও দেখাইয়াছেন, নাথুরাম গডসের নামে এখনও কী ভাবে ভক্তহৃদয় উদ্বেল হইয়া উঠে।

এ ক্ষণে প্রশ্ন, নরেন্দ্র মোদী কেন প্রজ্ঞা ঠাকুরদের অবস্থানের সহিত নিজের ফারাক তৈরি করিতে চাহেন? তিনি প্রধানমন্ত্রী হইবার পর উত্তর ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে গডসের মন্দির নির্মিত হইয়াছে, অথবা সেই উদ্যোগ হইয়াছে। তিনি আপত্তি করিয়াছেন, এই রকম কখনও শোনা যায় নাই। গডসের ঘৃণার রাজনীতি হইতে দলকে সরাইবার কোনও চেষ্টাও তিনি করিয়াছেন বলিয়া অভিযোগ নাই। হ্যাঁ, তিনি গাঁধীর চমশমাটিকে স্বচ্ছ ভারত অভিযানে বসাইয়াছেন, এবং সবরমতী আশ্রমের চরকার সম্মুখে প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন নিজেকে। তাহাতেই তিনি গাঁধীবাদী হইয়া গেলেন? তাঁহার আমলে গোমাতায় ভক্তি দিনে দ্বিগুণ রাত্রিতে চতুর্গুণ বাড়িয়াছে। বলিতেই পারেন, গাঁধী স্বয়ং গোহত্যার বিরোধী ছিলেন, ফলে সেইখানে যোগ তোমার সহিত আমারও। গাঁধীর কল্পনায় গরু কেবল গরু ছিল না, তাহা ছিল সকল প্রাণী এবং অন্ত্যজ মানুষের প্রতীক। সেই গরুর সম্মানরক্ষায় একের পর এক হত্যাকাণ্ডে গাঁধীর আত্মা নিঃসন্দেহে শিহরিয়া উঠিয়াছে। নরেন্দ্র মোদী কিন্তু রা কাড়েন নাই। সংখ্যালঘুরা ক্রমে ত্রস্ত হইয়াছেন, ভারতের দীর্ঘ দিনের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রটি ছিন্নভিন্ন হইয়া গিয়াছে— নরেন্দ্র মোদী বড় জোর কুকুরছানার উপমা ভাবিতে পারিয়াছেন। তাঁহার জমানায় দলিতদের হেনস্থা বাড়িয়াছে বিপুল হারে, তিনি নীরব থাকিয়াছেন। গাঁধীবাদ? তিনিও জানেন, গোটা ভারতও জানে, সঙ্ঘ পরিবারের দর্শনের সহিত গাঁধীর যে দূরত্ব, তাহা অতিক্রম করিবার সাধ্য বা ইচ্ছা নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীর ছিল না, নাই। অতএব, প্রজ্ঞা ঠাকুরকে ক্ষমা না করিবার প্রতিজ্ঞাটি ভোট মিটিলেই হাওয়ায় মিলাইয়া যাইবে বলিয়া অনুমান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE