Advertisement
E-Paper

সুরক্ষা অত্যাবশ্যক

সংসদ যত দিন না আইন করিয়া সাক্ষীর সুরক্ষার ব্যবস্থাকে আবশ্যক করিবে, তত দিন কি এ রাজ্যে একের পর এক অপরাধী নিষ্কৃতি পাইবে? সকল রাজ্য কিন্তু বসিয়া নাই।

শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৮ ০১:১৭

ফৌজদারি মামলার সাক্ষীর সুরক্ষাব্যবস্থা নির্মাণের নির্দেশ দিয়াছে কলিকাতা হাই কোর্ট। সেই ব্যবস্থা কার্যকর হইবার পূর্বে সাক্ষীদের সুরক্ষার দায়িত্ব পুলিশের। স্বরাষ্ট্র সচিব এবং রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্তার প্রতি সাম্প্রতিক এই নির্দেশের প্রয়োজনীয়তা লইয়া সংশয় নাই। কিন্তু বিচারপতিকে এই কর্তব্য স্মরণ করাইতে হয় কেন? ভয় দেখাইয়া সাক্ষীদের বিরূপ করা হইয়া থাকে, তাহা কি এত কাল পুলিশ-প্রশাসনের অজ্ঞাত ছিল? এ দেশে সাক্ষীর সুরক্ষার আইন এখনও হয় নাই তাহা সত্য, কিন্তু নৈতিক দায়টিও কি নাই? অবশ্য যে দেশে পুলিশ স্বয়ং সাক্ষীর উপর বয়ান বদলের জন্য চাপ সৃষ্টি করিয়া থাকে, সেখানে নৈতিকতার প্রশ্ন নিরর্থক মনে হইতে পারে। সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশে ‘অ্যাপল’ সংস্থার কর্মী বিবেক তিওয়ারির পুলিশের হাতে হত্যার কথা মনে করা যাইতে পারে। সেই ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী সানা খান অভিযোগ করিয়াছেন যে, পুলিশ নাকি জবরদস্তি করিয়া তাঁহার বয়ান বদলাইয়াছে, এবং শূন্য কাগজে স্বাক্ষর করিতে তাঁহাকে বাধ্য করিয়াছে। ইহা কোনও সভ্য দেশের বাস্তব ভাবিলে শিহরিত হইতে হয়। বহু ক্ষেত্রে বিপরীতটিও সমান ভয়ানক। অভিযুক্তরা সাক্ষীর উপর চাপ সৃষ্টি করিতেছে জানিয়াও পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকে। কলিকাতা হাই কোর্ট যে মামলার প্রেক্ষিতে সাক্ষীর সুরক্ষাব্যবস্থার নির্দেশ দিয়াছে, তাহার অন্যতম সাক্ষী এক গৃহবধূ আদালতে জানাইয়াছিলেন, খুনে অভিযুক্তদের হুমকিতে তিনি বাড়ি ছাড়িয়াছেন। এমন ঘটনা এ রাজ্যে বিরল নহে। গত বৎসর নভেম্বরে চার বৎসরের এক শিশুর ধর্ষণ ও খুনের মামলার মূল অভিযুক্তকে নিরপরাধ ঘোষণা করিতে বাধ্য হইয়াছিল কলকাতা হাই কোর্ট। তাহার অন্যতম কারণ ছিল প্রধান সাক্ষীর বয়ানে পরিবর্তন। তখনও সাক্ষীর নিরাপত্তার যথাযথ ব্যবস্থার নির্দেশ দিয়াছিলেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি এবং রাজর্ষি ভরদ্বাজ। বৎসর না ঘুরিতে একই নির্দেশ দিতে হইল বিচারপতি রাজাশেখর মন্থাকে।

অতএব প্রশ্ন, সংসদ যত দিন না আইন করিয়া সাক্ষীর সুরক্ষার ব্যবস্থাকে আবশ্যক করিবে, তত দিন কি এ রাজ্যে একের পর এক অপরাধী নিষ্কৃতি পাইবে? সকল রাজ্য কিন্তু বসিয়া নাই। দিল্লি ২০১৫ সালে ‘সাক্ষী নিরাপত্তা কার্যসূচি’ গ্রহণ করিয়াছে। সেই রাজ্যের ‘স্টেট লিগাল সার্ভিসেস অথরিটি’ প্রতিটি মামলায় সাক্ষীর ঝুঁকির মূল্যায়ন করিয়া তাহার নিরাপত্তার নির্দেশ দেয়, এবং পুলিশ কমিশনারের তত্ত্বাবধানে তাহা পালিত হয়। সাক্ষীর সহিত অস্ত্রধারী প্রহরী, বাড়ির চারিদিকে টহলদারি, সিসিটিভি-র নজরদারি হইতে সাক্ষীকে অন্যত্র আশ্রয়দান, নানা ব্যবস্থা করা হইয়া থাকে। অথচ কিছু কিছু রাজ্যে সাক্ষী হইতে দ্বিধা করেন প্রত্যক্ষদর্শীও। যৌন নির্যাতনের মামলায় অপরাধ প্রমাণের হার যে এত কম, সাক্ষীর অভাব ও বিরূপতা তাহার অন্যতম কারণ।

সাক্ষীকে সুরক্ষা দিতে না পারিলে আদালতের বিচার অর্থহীন নিয়মরক্ষা হইয়া দাঁড়ায়। দিল্লিতে জেসিকা লাল হত্যাকাণ্ডে আশি জন সাক্ষী বিরূপ হইয়াছিলেন। প্রভাবশালী ‘ধর্মগুরু’ আসারাম বাপুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা চলাকালীন তিন জন সাক্ষী খুন হইয়াছেন, অন্তত পাঁচ জন সাক্ষী আক্রান্ত হইয়াছেন, এক জন নিখোঁজ। এই মামলার সাক্ষীদের আবেদনের ভিত্তিতেই গত বৎসর অগস্টে সুপ্রিম কোর্ট সকল রাজ্যকে সাক্ষী সুরক্ষার কার্যক্রম তৈরি করিতে নির্দেশ দেয়। পুনরায় একটি মামলায় দিল্লির আদালত চত্বরেই এক সাক্ষীকে গুলি করিয়া হত্যা করা হইলে সুপ্রিম কোর্ট সরাসরি কেন্দ্রকে সাক্ষী সুরক্ষার ব্যবস্থা করিতে নির্দেশ দেয়। তদনুসারে ন্যাশনাল লিগাল সার্ভিসেস অথরিটি সাক্ষী সুরক্ষার বিশদ কার্যসূচি প্রকাশ করিয়াছে। অতএব রাজ্য সরকারের কর্তব্য নির্দিষ্ট, কার্যক্রমও অজানা নাই। কাজটিই কেবল অধরা।

Calcutta High Court Eye Witness Security Order
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy