Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

গোপন নাই

রাজনীতির দৃষ্টিতে ইহা মোদীকে বিপাকে ফেলিতে বাধ্য। ২০১৪ সালে তাঁহার প্রচারে তরুণদের জন্য বিপুল কর্মসংস্থান তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলেন তিনি। সেই উদ্দেশ্যে বহু অর্থব্যয়ে ‘প্রধানমন্ত্রী কৌশল যোজনা’ বা ‘স্কিল ইন্ডিয়া’ প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রী কর্মপ্রোৎসাহন যোজনা, মুদ্রা প্রকল্প প্রভৃতি শুরুও হইয়াছিল।

—ছবি পিটিআই।

—ছবি পিটিআই।

শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৪৬
Share: Save:

মহাত্মা গাঁধী তাঁহার আত্মজীবনীর নাম দিয়াছিলেন, ‘সত্য লইয়া পরীক্ষার কাহিনি’। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যদি জীবনকাহিনি লেখেন, তাহার শিরোনাম কি হইতে পারে, ‘সত্য গোপন করিবার পরীক্ষার কাহিনি?’ যাহা কিছু সরকারকে বিব্রত করিতে পারে, সেই সকল তথ্য গোপন করিতে তাঁহার মন্ত্রী-আধিকারিকরা যারপরনাই মরিয়া। কর্মহীনতার সাম্প্রতিক রিপোর্ট তাহারই দৃষ্টান্ত। বিপুল কর্মসৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দিয়া মোদী ক্ষমতায় আসেন। তাঁহার সরকার বরাবর দাবি করিয়াছে, নূতন নূতন কাজ সৃষ্টি হইয়াছে, বেকারত্ব কমিয়াছে। কিন্তু তথ্য-পরিসংখ্যানের সাক্ষ্য অন্যরূপ। বিবিধ সূত্রের ইঙ্গিত, কর্মহীনতা বাড়িয়াছে, কাজ কমিয়াছে, বহু তরুণ-তরুণী কাজ খুঁজিবার চেষ্টা ছাড়িয়া শ্রমের বাজার হইতে সরিয়া গিয়াছে। ইহার যথাযোগ্য উত্তর হইতে পারিত সরকারি সমীক্ষার রিপোর্ট। কর্মসৃষ্টি ও নিয়োগ সম্পর্কে সর্বভারতীয় নমুনা সমীক্ষার যে রিপোর্ট নিয়মিত বাহির হয়, তাহা সকল সন্দেহের নিরসন করিতে পারিত। কিন্তু জাতীয় নমুনা সমীক্ষা সংস্থার সেই রিপোর্ট গোপন করিতে সচেষ্ট হইল কেন্দ্র। ‘তথ্য অসম্পূর্ণ’, এই যুক্তিতে তাহার প্রকাশ বন্ধ করিল। এই অপচেষ্টার প্রতিবাদে জাতীয় পরিসংখ্যান কমিশনের দুই কর্তা পদত্যাগ করিলে সরকার আরওই বিড়ম্বনায় পড়িয়াছে। অতঃপর ঝুলি হইতে বিড়ালও বাহির হইল। অপ্রকাশিত রিপোর্টের তথ্য বাহির হইল সংবাদে। প্রকাশ পাইল, ২০১৭-১৮ সালের জাতীয় সমীক্ষা অনুসারে কর্মহীনতা ছয় শতাংশ ছাড়াইয়াছে, যাহা চার দশকে সর্বাধিক। আরও মারাত্মক এই তথ্য যে, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কর্মহীনতা অধিক। পনেরো হইতে উনত্রিশ বৎসর বয়সিদের মধ্যে কর্মহীনতা সতেরো শতাংশ ছাড়াইয়াছে, পাঁচ বৎসর পূর্বে যাহা ছিল পাঁচ শতাংশ। শিক্ষিত, শহরবাসী এবং মহিলাদের মধ্যে বেকারত্ব দ্রুত হারে বাড়িয়াছে।

রাজনীতির দৃষ্টিতে ইহা মোদীকে বিপাকে ফেলিতে বাধ্য। ২০১৪ সালে তাঁহার প্রচারে তরুণদের জন্য বিপুল কর্মসংস্থান তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলেন তিনি। সেই উদ্দেশ্যে বহু অর্থব্যয়ে ‘প্রধানমন্ত্রী কৌশল যোজনা’ বা ‘স্কিল ইন্ডিয়া’ প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রী কর্মপ্রোৎসাহন যোজনা, মুদ্রা প্রকল্প প্রভৃতি শুরুও হইয়াছিল। তাহাতে ফল ফলে নাই, প্রকল্পগুলি কোনওটিই লক্ষ্যের নিকট পৌঁছায় নাই। অপর দিকে নোট বাতিলের ধাক্কায় অসংগঠিত ক্ষেত্র বিপর্যস্ত হইবার ফলে কাজ হারাইয়াছেন বহু মানুষ। জাতীয় নমুনা সমীক্ষার এই তথ্য ভ্রান্ত কি না, তাহা লইয়া বিতর্ক জুড়িতে গেলেও সমস্যায় পড়িবে মোদী সরকার, কারণ অপরাপর কয়েকটি সমীক্ষার ফলে বেকারত্বের হার আরও অধিক মিলিয়াছে। অগত্যা পরিসংখ্যান ছাড়িয়া অনুমানে গিয়াছে সরকার। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের বিস্মিত প্রশ্ন, অর্থনীতির বৃদ্ধি যখন হইতেছে, তখন কর্মসৃষ্টি হয় নাই, তাহা কি সম্ভব? ইহার উত্তর, আলবত সম্ভব। ‘জবলেস গ্রোথ’ কথাটি দুই দশকেরও অধিক সময় যাবৎ প্রচলিত। ভারতে ধনীতম আর্থিক শ্রেণির সম্পদ দ্রুত বাড়িতেছে, মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র তাহার ভাগ পায় নাই। ইহাই নিয়োগহীন বৃদ্ধির রহস্য।

যে সকল তথ্য-পরিসংখ্যান সরকার-প্রচারিত ‘অচ্ছে দিন’-এর আখ্যানে সংশয় জাগাইতে পারে, সে সকলই গোপন করিতে সরকার তৎপর। কর্মসৃষ্টি কেবল একটি। গ্রামীণ রোজগার, অপরাধের হার, শিশুপুষ্টি, এমন নানা বিষয়ে সমীক্ষার রিপোর্টও গত দুই-তিন বৎসর বাহির হয় নাই। এত দিন যাহা সময়ে সম্পূর্ণ হইত এবং নিয়মিত প্রকাশ পাইত, এখনই কেন তাহাতে ঢিলা পড়িল? ভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কৌশিক বসু সম্প্রতি লিখিয়াছেন, পরিসংখ্যান সংগ্রহ ও সমীক্ষার ফল প্রকাশে ভারত সারা বিশ্বের নিকট প্রশংসিত ছিল। তথ্য গোপন করিবার এমন প্রয়াস ভারতের চরিত্রবিরুদ্ধ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Job Data Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE