১২৫ কোটির বিশাল দেশ ভারত। আকারে এবং আয়তনেও এ দেশের ব্যাপ্তি বিপুল। কাঙ্খিত এবং অনভিপ্রেত অনেক কিছুই প্রতি মুহূর্তে ঘটে চলেছে দেশ জুড়ে। এই সুবিশাল দেশে অনভিপ্রেত যা কিছু ঘটবে, তার জন্যই প্রধানমন্ত্রীকে মুখ খুলতে হবে, এমনটা কাম্য নয়। প্রধানমন্ত্রী সব বিষয়ে কথা বলবেন, এমনটা আশা করা অনুচিত। তবে পুকুর চুরি যাওয়ার মতো বিরাট মাপের ঘটনাতেও প্রধানমন্ত্রী মুখ খুলবেন না, এমনটা মেনে নেওয়া কঠিন।
গোটা ভারতের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে হতচকিত করে দিয়েছে নীরব মোদী-কাণ্ড। প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার বিরাট কেলেঙ্কারি যখন পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ককে আপাদমস্তক কাঁপিয়ে দিয়েছে, তখনও প্রধানমন্ত্রী সে বিষয়ে একটা শব্দও খরচ করবেন না, এমনটা দেখলে আশ্চর্য হতে হয়।
বিভিন্ন ছোটখাটো বিষয় নিয়েও নিজের মতামত সকলকে জানিয়ে থাকেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাজনৈতিক, সামাজিক, সামরিক, কূটনৈতিক— নানা বিষয়ে নিজের অবস্থান দেশবাসীর সঙ্গে নিয়মিত ভাগ করে নিতে নরেন্দ্র মোদী অভ্যস্ত। পশ্চিমবঙ্গের সবং নামে একটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিজেপি-র ভো়ট বৃদ্ধি নিয়ে তিনি কী ভাবছেন, টুইটারে তাও জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সুবিশাল ব্যাঙ্ক জালিয়াতির জেরে যখন দেশের গোটা অর্থনৈতিক পরিসরটাই টালমাটাল, তখন সোশ্যাল মিডিয়ায় বা প্রকাশ্যে মুখ খোলার প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর অনীহা বিস্ময় জাগাচ্ছে বইকি?
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ককে নীরব মোদী নামে এক হিরে ব্যবসায়ী যে বিপুল অঙ্কের আর্থিক প্রতারণার মুখে ফেলেছেন, সেই প্রতারণার অভিযোগকে কেন্দ্র করে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে গোটা দেশ তোলপাড়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এখনও পর্যন্ত একটি শব্দও উচ্চারণ করলেন না বিষয়টি নিয়ে। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিও একই পথের পথিক। নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে যে প্রতিনিধিদল দাভোস সফর করেছিল, নীরব মোদী সেই দলের সদস্য ছিলেন। কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পর স্বাভাবিক ভাবেই নীরবের নরেন্দ্র-ঘনিষ্ঠতার দিকে আঙুল তুলতে শুরু করেছে বিভিন্ন শিবির। সরকার বিষয়টি নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। বিজেপি-ও অবস্থান জানিয়েছে। কিন্তু এত বড় কাণ্ড নিয়ে এবং এত বড় অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নিজে একটা শব্দও এখনও পর্যন্ত খরচ করলেন না, অর্থমন্ত্রীও মুখে কুলুপ এঁটে রইলেন, এ ছবি বেশ অস্বাভাবিক।
আরও পড়ুন
দোষীর মতো... মোদীকে রা-হুল
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন তুলছেন রাহুল গাঁধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রা। স্কুলপড়ুয়ারা পরীক্ষার চাপ থেকে মুক্ত থাকবে কী করে, সে নিয়ে দীর্ঘ ভাষণ দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু নীরব মোদী-কাণ্ড নিয়ে ক্ষুদ্র বিবৃতি দেওয়ার সময়ও প্রধানমন্ত্রীর পাননি এখনও। বিরোধীদের তরফে প্রশ্ন তোলা অবান্তর নয় অতএব।
দুর্নীতি তিনি করবেন না, দুর্নীতি কাউকে করতে দেবেনও না— অঙ্গীকার ছিল নরেন্দ্র মোদীর। কিন্তু দুর্নীতি যে হয়েছে, তা সরকারও মেনে নিচ্ছে। মেনে নিচ্ছে বলেই সিবিআই এবং ইডি-র মতো সংস্থাকে প্রবল তৎপরতায় ময়দানে নামানো হয়েছে। ধরে নেওয়া যাক, নীরব মোদীর জালিয়াতি সম্পর্কে সরকার অবহিত ছিল না। ধরে নেওয়া যাক, নরেন্দ্র মোদী কোনও ভাবেই প্রতারককে সহায়তা করেননি। কিন্তু সেই কথাটা নিজের মুখে বলতে তো হবে প্রধানমন্ত্রীকে। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে যিনি নিজের মতামত ভাগ করে নেন দেশবাসীর সঙ্গে, নীরব মোদী-কাণ্ডে সেই প্রধানমন্ত্রী এখনও কেন সম্পূর্ণ নীরব, সে প্রশ্ন বেশ ধন্দে ফেলে দিচ্ছে। ভাবমূর্তি সম্পর্কে যদি সচেতন হন নরেন্দ্র মোদী, তা হলে অনতিবিলম্বেই মুখ খোলা উচিত তাঁর। না হলে পরিস্থিতিটা আরও নেতিবাচকই হয়ে উঠবে নরেন্দ্র মোদীর জন্য ক্রমশ। এত বড় কেলেঙ্কারির অভিযোগ সামনে আসার পরেও এত দিন ধরে সে প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা খুব সদর্থক বার্তা দিচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy