Advertisement
১১ মে ২০২৪
State news

আর কত! অনুব্রত?

বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল প্রায় সেই ধাঁচেরই এক সংশয়ের বাতাবরণ তৈরি করে দিয়েছেন। শঙ্খ ঘোষ আবার কোন কবি? কোথা থেকে উদয় হল তাঁর? অনেকটা এমনই প্রশ্ন তুলেছেন অনুব্রত মণ্ডল।

বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।— ফাইল চিত্র।

বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।— ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৮ ০০:৩৪
Share: Save:

আতঙ্কটা খুব বেড়ে উঠছে মাঝে মধ্যে। দিনকাল যে রকম, হিংসার বাতাবরণ যে রকম গাঢ়, তাতে আতঙ্ক আজকাল সর্বক্ষণের সঙ্গী। কিন্তু কখনও কখনও মনে হচ্ছে, আতঙ্কটা রাজনৈতিক হিংসা বা বোমা-বন্দুক-টাঙ্গি-বল্লমে সীমাবদ্ধ নাও থাকতে পারে। হঠাৎ একদিন হয়ত আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্ব মিথ্যা হয়ে যেতে পারে বা হরপ্পার কাহিনী ইতিহাস থেকে মুছে যেতে পারে বা এভারেস্টের উচ্চতা ২৯ হাজার ২ ফুট নাও থাকতে পারে।

অ্যালবার্ট আইনস্টাইন আদৌ বিজ্ঞানী ছিলেন? যদি আচমকা এই রকম একটা প্রশ্ন উঠে যায়, কী হবে? বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে নাকি? আইনস্টাইনের সঙ্গে বিজ্ঞানের সম্পর্ক যদি প্রশ্নের মুখে পড়ে, আপেক্ষিকতাবাদের সারবত্তা নিয়েই তা হলে সংশয় তৈরি হয়ে যায়।

একই ভাবে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন— রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়টা আবার কে ছিলেন? অথবা রাধানাথ শিকদার আবার কবে অঙ্ক শিখলেন? সে ক্ষেত্রে মহেঞ্জো দড়ো-হরপ্পায় আবিষ্কৃত নিদর্শনের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এভারেস্টের সঠিক উচ্চতা নির্ণীত হয়েছিল কি না তা নিয়েও সংশয় তৈরি হবে।

আরও পড়ুন: কবি তো জানি রবীন্দ্রনাথ-নজরুল, এ আবার নতুন কোন কবি: কেষ্ট

বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল প্রায় সেই ধাঁচেরই এক সংশয়ের বাতাবরণ তৈরি করে দিয়েছেন। শঙ্খ ঘোষ আবার কোন কবি? কোথা থেকে উদয় হল তাঁর? অনেকটা এমনই প্রশ্ন তুলেছেন অনুব্রত মণ্ডল।

যে সে নেতা নন অনুব্রত। রাজ্যের দাপুটে শাসকদলের ততোধিক দাপুটে জেলা সভাপতি তিনি। অতএব পত্রপাঠ ফেলে দেওয়া যায় না তাঁর কোনও কথাই। শঙ্খ ঘোষ সম্পর্কে অনুব্রত মণ্ডলের মন্তব্য বা প্রশ্ন অতএব জোর হইচই ফেলে দিয়েছে গোটা রাজ্যে। শঙ্খ ঘোষ আদৌ কবি তো? প্রশ্ন উঠে গিয়ে থাকতেই পারে অনেকের মনে। সে ক্ষেত্রে তাঁর সুদীর্ঘ কাব্যচর্চা কিন্তু মিথ্যা হয়ে যেতে পারে।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

দশক-দশকের সাহিত্য সাধনা। কাব্যচর্চায় গোটা জীবন অতিবাহিত। কখনও জ্ঞানপীঠ, কখনও সাহিত্য অকাদেমিতে সম্মাণিত। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এমন এক স্তরে তিনি উপনীত, যেখানে স্থান শুধু অভিভাবকদের, পথ প্রদর্শকদের। এ হেন শঙ্খ ঘোষ সম্পর্কে প্রশ্ন— এ আবার কোন কবি? বিস্মিত হওয়া উচিত, নাকি অসম্ভব ক্রুদ্ধ, নাকি তীব্র নিন্দায় সরব, নাকি গভীর দুঃখে নিমজ্জিত— বুঝে ওঠা যায় না। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়তে হয়।

অনুব্রত মণ্ডল, আপনি অত্যন্ত দায়িত্বশীল পদে থেকে রাজনীতি করছেন। আপনার কথাবার্তায়, আচার-আচরণে অবশ্য দায়িত্বশীলতার কোনও পরিচয় মেলে না। তবে সে অন্য কথা। এ বারে দায়িত্বজ্ঞানহীনতা সে সবকেও যেন ছাপিয়ে গেল। শঙ্খ ঘোষ সম্পর্কে মন্তব্য আপনি করতেই পারেন। কিন্তু মন্তব্য করার আগে আর একটু ভেবে নেওয়া উচিত ছিল। কী বলছেন, কার সম্পর্কে বলছেন, কেনই বা বলছেন, সে সব ভেবে নেওয়া জরুরি ছিল। বেলাগাম কথাবার্তা অনুব্রত মণ্ডলের ‘সাম্রাজ্যে’ নতুনও নয়, বিরলও নয়। কিন্তু কোথাও তো একটা সীমা থাকা দরকার। শালীনতার একটা ন্যূনতম বোধ তো থাকা জরুরি। শেষ সীমাটাও পার করে ফেলছেন সম্ভবত আপনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE