Advertisement
E-Paper

প্রমাদ ও প্রমোদ

দিনের পর দিন ধরিয়া শিশুগণ কাগজে লিখিয়াছে সান্তার নিকটে তাহারা কোন উপহার চাহে, রুদ্ধশ্বাস প্রতীক্ষা করিতেছে সত্যই উপহারগুলি আবির্ভূত হয় কি না দেখিবার জন্য, মাধুর্যমণ্ডিত এই কল্পনায় জল ঢালিয়া এই বয়সেই জ্ঞানশলাকার খোঁচা দিবার দরকার কী ছিল?

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:০৯

বৎসরের এই সময়টাই পাশ্চাত্যে কিছু শিক্ষকের চাকুরি যাইবার সময়। কারণ তাঁহারা এক শ্রেণিকক্ষ বোঝাই শিশুগণের সম্মুখে স্পষ্ট করিয়া বলিয়া দিয়াছেন, সান্তা ক্লজ় বলিয়া কেহ বাস্তবে নাই। শুনিবার পর শিশুদের মস্তকে বজ্রাঘাত, তাহাদের ক্রন্দন ও নালিশ, ক্রুদ্ধ অভিভাবকগণের অভিযোগ ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দ্রুত শিক্ষক-বিতাড়ন। সম্প্রতি নিউ জার্সিতে এমন একটি ঘটনা ঘটিল। অভিভাবকদের বিরক্তি আন্দাজ করা সহজ। দিনের পর দিন ধরিয়া শিশুগণ কাগজে লিখিয়াছে সান্তার নিকটে তাহারা কোন উপহার চাহে, রুদ্ধশ্বাস প্রতীক্ষা করিতেছে সত্যই উপহারগুলি আবির্ভূত হয় কি না দেখিবার জন্য, মাধুর্যমণ্ডিত এই কল্পনায় জল ঢালিয়া এই বয়সেই জ্ঞানশলাকার খোঁচা দিবার দরকার কী ছিল? শিশুরা বহু অলীক ব্যাপারকে বাস্তব বলিয়া বিশ্বাস করে, তাহাদের শয্যার নিম্নে খোক্কস বসিয়া থাকে, পড়িয়া যাওয়া দাঁত পরি আসিয়া লইয়া যায় ও বালিশের ফাঁকে চকোলেট রাখিয়া যায়। ইহার মধ্যে বাস্তব আসিয়া হানা দিবেই এক দিন না এক দিন, কিন্তু দিনটিকে ত্বরান্বিত করিবার প্রয়োজন কী? অপর পক্ষে, অনেকেরই মনে হইতে পারে, এই প্রকারের উদ্ভট কল্পনায় বিশ্বাস ও তজ্জনিত প্রসন্নতা এক প্রকার ফাঁকি, যত শীঘ্র সম্ভব মনুষ্যশাবককে অজ্ঞতা হইতে জ্ঞানে টানিয়া আনা প্রকৃত শিক্ষকের কর্তব্য। সত্য কঠিন, কিন্তু সত্যেরে ভালবাসিতেই হইবে। এই শিক্ষাদানে ক্ষতি কী? অভিভাবকেরা বলিতেছেন, ক্ষতি হইল, তাড়াহুড়া করিয়া শৈশবটি নষ্ট করিয়া দেওয়া। শৈশব মানুষের সর্বাপেক্ষা অানন্দময় কাল, কারণ তখন মানুষ রোগ জরা মৃত্যু দূষণ দুর্নীতি কিছু সম্পর্কেই সচেতন নহে, তুষ্টিপূর্ণ বুদ্বুদের মধ্যে যাপন সারিতে ব্যস্ত। আজিকার প্রযুক্তির বিস্ফোরণের ফলে পূর্বের শিশুদের তুলনায় দ্রুতই আধুনিক শিশুর রূপকথার আড়াল ছিন্ন হইবে, হয়তো সেই জন্যই কল্পনা-আবরণ রক্ষা অধিক জরুরি। আর, কল্পনায় মত্ত থাকিবার মধ্যে কি কল্পনাশক্তির বিকাশেরও ব্যায়াম লুক্কায়িত নাই?

আইনস্টাইনের এক পত্র নিলাম হইল গত সপ্তাহে, যেখানে তিনি লিখিয়াছেন, ‘‘তা সে যে ধর্মই হোক, আদতে তা আমাদের আদিম কুসংস্কারই। আমি মনে করি, ঈশ্বর শব্দটা মানুষের দুর্বলতার প্রকাশ আর সেই দুর্বলতা থেকেই তার জন্ম।’’ এক মহান বিজ্ঞানী যখন মানুষের আজন্মলালিত ললিত বিশ্বাস নিষ্ঠুর ভাবে ভাঙিয়া দেন, তখন বিশ্বাসী চিত্তে কি ওই শিশুদের ন্যায়ই আঘাত লাগে না? মনে হয় না, যাঁহার হাত ধরিয়াছিলাম, তিনি বিশ্বাসঘাতকতা করিলেন? এক জন আস্তিক যখন এই চিঠি সম্পর্কে জানিবেন, তাঁহার তো মনে হইবে, জীবনের মূল আশ্রয়টিই চূর্ণ হইয়া যাইল! জীবনের সঙ্কটমুহূর্তগুলিতে ঈশ্বরের শরণ লইবার কালে তাঁহার আইনস্টাইনের সহাস্য জিভ-বাহির-করা চিত্রটি মনে পড়িবে, যেন তিনি আস্তিকের আত্মার আনন্দকেই ভেংচি কাটিতেছেন! প্রশ্ন হইল, যদি বিশ্বময় মনীষীগণ চিন্তা ও যুক্তি দিয়া যুগ যুগ ধরিয়া মানুষকে আঘাত করিয়া যান, নড়া ধরিয়া নাড়িয়া নূতন ও অস্বস্তিকর ধারণাবলির সহিত পরিচিত করান, এবং এই কার্যের ফলে বিশ্বের ভাবনা-বলয় ও চৈতন্য-দিগন্ত প্রসারিত হয়, তাহা হইলে শিক্ষকের সান্তা-ঘাতী কথাবার্তা কি আদপে শিশুগুলিকে ঘা মারিয়া বাঁচাইবারই উপক্রম করে নাই? তাহাদের মানসিক বয়স কম, কিন্তু তাহা ভাবিয়া তো টিকার সুচের তীক্ষ্ণতা কম করা হয় না!

কিন্তু প্রবল প্রগতিপ্রাপ্ত মানুষেরাও তো নেশা করিয়া নিজ যুক্তিবিন্যাসকে সাময়িক বহিষ্কার করিতেছেন, কখনও সত্য গোপন করিয়া ভালবাসার অভিনয় করিয়া সংসার অখণ্ড রাখিতেছেন। যুক্তি যেমন শিখিতে হইবে, তেমনই তাহাকে বাদ দিয়া বিশ্বের প্রমোদগুলিকে সম্যক আস্বাদন করাও কি শিখিতে হইবে না? মানুষের হৃদয় যুক্তির অপেক্ষা আবেগকে কখনও অধিক মূল্য দেয় বলিয়াই সে দেশের জন্য প্রাণ ত্যাগ করিতে পারে, রুটির পরিবর্তে কাব্যগ্রন্থ কিনিয়া আনে। যাহা কিছু মহান, তাহা কেবল জ্ঞান ও সত্যে নিহিত নাই, বহু ক্ষেত্রে যৌক্তিকতাকে পরিহারের মধ্যেও রহিয়াছে। দইওয়ালা অমলকে ‘‘তুই তো শীঘ্রই মরিয়া যাইবি!’’ বলিয়া খেঁকাইয়া উঠিলে তাহা সত্যাবলম্বী হইত হয়তো, কিন্তু পৃথিবীর এক পরম স্নিগ্ধ অশ্রুসজল আখ্যান অন্তর্হিত হইত। যথার্থ শিক্ষককে হয়তো এই ভারসাম্যগুলিই প্রথমে অনুধাবন করিতে হইবে। তাহার পর কাল্পনিক চরিত্রের শ্মশ্রু উপড়াইবার কুচকাওয়াজ!

যৎকিঞ্চিৎ

লন্ডনে ‘চ্যাম্পিয়নস টেনিস টুর্নামেন্ট’-এ, একটি ডাবলস ম্যাচে, বল-বয় এবং বল-গার্লদের পাশাপাশি, তিনটি কুকুর ‘বল-ডগ’-এর কাজ করল, কোর্টের বাইরে যাওয়া বলগুলোকে কুড়িয়ে এনে দিল। কুকুরগুলি বিশেষ প্রশিক্ষণ পেয়েছে, তারা এমনিতে প্রতিবন্ধীদের সাহায্য করে। তারা বহু কিছুই পারে, যেমন ওয়াশিং মেশিনে কাপড় কাচতে দেওয়া ও তা বার করে নেওয়া, সঙ্গী-মানুষ বিপদে পড়লে সাহায্য জোগাড় করা। তা হলে আর রোবট নিয়ে এত আদিখ্যেতা কেন?

Fantasy Santa Claus Winter Christmas
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy