Advertisement
E-Paper

কৃষিক্ষেত্রের বিকাশে মহিলাদের অ‌ংশগ্রহণ জরুরি

ভারতে নারী ও পুরুষের অনুপাত প্রায় সমান। সেটা ভারতের কৃষি অর্থনীতিতেও প্রযোজ্য। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো গ্রামীণ অর্থনীতিতে নারীদের বিশেষ ভূমিকা থাকলেও, তাঁরা অনেক ক্ষেত্রেই বঞ্চিত থেকে যান। লিখছেন চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়ভারতে নারী ও পুরুষের অনুপাত প্রায় সমান। সেটা ভারতের কৃষি অর্থনীতিতেও প্রযোজ্য। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো গ্রামীণ অর্থনীতিতে নারীদের বিশেষ ভূমিকা থাকলেও, তাঁরা অনেক ক্ষেত্রেই বঞ্চিত থেকে যান।

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৯ ০৪:৫৬
মাঠের নানা কাজে মহিলারাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। ফাইল ছবি

মাঠের নানা কাজে মহিলারাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। ফাইল ছবি

ভারতের অর্থনীতির মেরুদণ্ড কৃষি। যদিও মোট অভ্যন্তীরণ উৎপাদনের (জিডিপি) ২০ শতাংশ আসে কৃষি ও তার অনুসারী উৎপাদন ক্ষেত্র থেকে, কিন্তু ৭০ শতাংশ ভারতবাসী কৃষিক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত। ৬ লক্ষের বেশি গ্রামে ১৬ কোটি হেক্টরের বেশি চাষযোগ্য জমিতে (অনেক জমি আবার দু’ফসলি, তিন ফসলি) ২৭.৫ কোটি টন খাদ্যশস্য উৎপন্ন হয়।

ভারতে নারী ও পুরুষের অনুপাত প্রায় সমান। সেটা ভারতের কৃষি অর্থনীতিতেও প্রযোজ্য। কিন্তু অনান্য ক্ষেত্রের মতো গ্রামীণ অর্থনীতিতে নারীদের বিশেষ ভূমিকা থাকলেও, তাঁরা অনেক ক্ষেত্রেই বঞ্চিত থেকে যান। কৃষিক্ষেত্রে নারী শ্রমিকেরা পারিশ্রমিকে এবং বিনা পারিশ্রমিকে দু’ভাবেই নিযুক্ত হয়ে থাকেন। চাষের কাজে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাড়ির মহিলারা নিযুক্ত থাকেন। বীজ বোনা, আগাছা তোলা যাকে নিড়ানি বলে, ফসল কাটা, ফসল ঝাড়াই এবং ফসল ঘরে তোলার সময় পুরুষদের পাশাপাশি নারীও পরিশ্রম করেন। তাঁদের এই সব কাজ বিনা মজুরিতেই করতে হয়। আবার এই সব কাজের জন্য মহিলাদের ভাড়াও করা হয়। এই মহিলা শ্রমিকেরা অন্য রাজ্য বা অন্য জেলা থেকে আসেন। আদিবাসী অঞ্চল থেকে অনেক শ্রমিক পাওয়া যায়। গোটা আদিবাসী পরিবার চাষের মরসুমে বাড়ি ছেড়ে চলে আসে। স্বামী, স্ত্রী দু’জনেই চাষের শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু দেখা গিয়েছে, নারী শ্রমিকদের মজুরি, পুরুষ শ্রমিকদের মজুরির তুলনায় কম। চাষের জমির মালিকানার দিকে নজর দিলেও বৈষম্যটা চোখে পড়ে। কিছু চাষের জমির মালিকানা (১৩ শতাংশ) মহিলাদের, তবে সেই জমির পরিমাণ বেশির ভাগই ছোট ও প্রান্তিক (২ হেক্টরের কম)। মহিলারা যখন চাষের পুরো প্রক্রিয়াটা দেখভাল করেন, তখনও তাঁদের বৈষম্যের শিকার হতে হয়। বীজ পাওয়ার ক্ষেত্রে, ঋণ পাওয়ার সময়ে, শ্রমিক ভাড়া করার সময়ে, সেচের ব্যবস্থা করতে গিয়ে এবং সর্বোপরি ফসল বিক্রি করার জন্য বাজারের সংস্থান করতে গিয়ে।

জাতীয় নমুনা সমীক্ষার বিভিন্ন পর্যায় থেকে জানা যায়, ভারতে কৃষি শ্রমিকদের ৩০ শতাংশ নারী শ্রমিক, বাংলাদেশে এই অনুপাত ৫০ শতাংশের মতো। আবার মোট নারী শ্রমিকদের ৫৬ শতাংশ কৃষিকাজে যুক্ত। চাষের কাজ ছাড়াও তাঁরা নিত্যদিনের বাড়ির কাজ করে থাকেন। শিশুদের, বয়স্কদের পরিচর্যা, পানীয় জলের ব্যবস্থা করা, জ্বালানীর জোগাড় করার মতো। তাই চাষ ছাড়া, নিত্যদিনের কাজের সময় যোগ করলে নারী, পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি শ্রম দান করে থাকেন। এবং সেটা বিনা মজুরিতেই। তবে সমীক্ষায় এটাও দেখা যাচ্ছে, কৃষিতে নারীদের অংশগ্রহণ ক্রমশ কমছে। এর কারণ, হিসেবে বলা যেতে পারে, জাতীয় স্তরে মেয়েদের শিক্ষার হার বাড়ছে, কম বয়সী মেয়েরা স্কুল যাওয়ার জন্য চাষের কাজে থাকতে পারছে না বা শিক্ষা পেয়ে তারা অন্য অন্য কাজ পাচ্ছেন। আরও একটি কারণ, গৃহস্থালির কাজে বেশি সময় দেওয়া। যেমন সমীক্ষা দেখাচ্ছে, পানীয় জলের জোগাড় করতে গড়ে প্রতি দিন এক জন নারীকে এক কিলোমিটারের বেশি যাতায়াত করতে হয়। সে জন্য তাঁর গড়ে ৩০ মিনিট সময় ব্যয় হয়। জ্বালানী জোগাড়ের ক্ষেত্রেও এ কথা বলা যায়।

২০০০ সালে সহস্রাব্দ উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা এবং পরে ২০১৫ সালে স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে দারিদ্র দূর করা, অপুষ্টি রোধ করা, ক্ষুধা হ্রাস করা, পানীয় জলের সরবরাহ এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা ইত্যাদি স্থির হয়েছিল। গ্রামীণ নারীদের জমি, জল, বীজ, ঋণ, বাজার ইত্যাদি ঠিক ভাবে ব্যবস্থা করলে, সঙ্গে ঠিক ভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং ঠিক তথ্য সরবরাহ করলে তাঁদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে এবং সেটা উপরোক্ত লক্ষ্যমাত্রাগুলি পূরণের সহায়তা করবে। এ বারের অর্থনৈতিক সমীক্ষায় আশঙ্কা করা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অনিয়মিত বৃষ্টির জন্য, তাপমাত্রা অত্যধিক বৃদ্ধির জন্য সেচবিহীন চাষে বার্ষিক কৃষি আয়ের পরিমাণ ২০% থেকে ২৫% পর্যন্ত কমতে পারে। আমাদের দেশে ৩৬ শতাংশ কৃষিজমিতে সেচ ব্যবস্থা আছে; তা হলে আগামী দিনে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য কৃষি অর্থনীতি ব্যপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

কৃষিক্ষেত্রে আয়ের অনিশ্চয়তার দরুন এবং গ্রামাঞ্চলে বিকল্প কাজের সুযোগের অভাব থাকায় পুরুষেরা গ্রাম থেকে শহরে কাজের সন্ধানে যাচ্ছেন। এর ফলে গ্রামীণ কৃষিক্ষেত্রে কখনও চাষি হিসাবে, কখনও শ্রমিক হিসাবে আবার কখনও উদ্যোগপতি হিসেবে মহিলাদের ক্ষমতায়ণ হয়েছে। চাষ শুরুর সময় থেকে ফসল কাটা, মজুত করা এবং বাজারজাত করার সময় মহিলাদের ভুমিকা ক্রমে বাড়ছে। তাই মহিলাকেন্দ্রিক প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে এবং বাজেটে সেই মতো বরাদ্দ বাড়াতে হবে। গ্রামে মহিলাদের ক্ষমতায়ণের জন্য স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীগুলোকে আরও কার্যকরী হতে হবে। কৃষিক্ষেত্রে গ্রামের মহিলাদের এই ক্রমবর্ধমান ভূমিকার জন্য কৃষি দফতর প্রতি বছর ১৫ অক্টোবর মহিলা কৃষক দিবস হিসেবে পালন করে। কেবলমাত্র গ্রামীণ মহিলাদের জন্যই নয়, সমাজের সর্বস্তরে মহিলাদের সুরক্ষার জন্য এবং ক্ষমতায়ণের জন্য আজ ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবস হিসাবে পালিত হয়। তাই আজকের দিনটি, কৃষিক্ষেত্রে কর্মরত মহিলাদের ভূমিকা কুর্নিশ করার দিন।

লেখক কাজী নজরুল ইসলাম মহাবিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক

Women's Day Special International Women's Day Feminism
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy