Advertisement
E-Paper

শূন্যের বয়স

তবে প্রদর্শনী শুরুর পূর্বে সংবাদে স্থান অধিকার করিয়াছে প্রথম বিভাগটি। বিশেষ এক আবিষ্কারের সূত্রে। জানা গিয়াছে, ভারতে গণিতের শূন্য(০)-র ব্যবহার তৃতীয় শতাব্দীতে চালু ছিল।

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:০০

লন্ডনস্থ সায়েন্স মিউজিয়মে অক্টোবর মাস জুড়িয়া যে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হইয়াছে, তাহার নাম ‘ইলিউমিনেটিং ইন্ডিয়া’। প্রদর্শনীটি বিশ্বের দরবারে ভারতের গৌরবময় ঐতিহ্য পেশ করিবার এক আন্তরিক প্রচেষ্টা। উদ্যোক্তা ব্রিটিশ কাউন্সিল। এই দেশের স্বাধীনতা অর্জনের সত্তর বর্ষপূর্তিতে আয়োজিত প্রদর্শনীতে থাকিবে দুই বিভাগ। একটি বিভাগের বিষয়, ভারত ভূখণ্ডে ৫০০০ বৎসরকালের জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চা। দ্বিতীয় বিভাগটি কিঞ্চিৎ স্বতন্ত্র: ফোটগ্রাফি ১৮৫৭-২০১৭। ব্রিটেনে ফোটগ্রাফি বড় আকারে আত্মপ্রকাশ করে ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে। অনতিকাল পরে ভারতেও ক্যামেরা যন্ত্রের আবির্ভাব ঘটে। প্রথমে ব্রিটিশ চিত্রগ্রাহকদের উৎসাহে ফোটগ্রাফি চর্চা শুরু হইলেও, ওই কার্যে দক্ষ হইয়া উঠিতে ভারতীয়গণ দেরি করে নাই। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিপাহি বিদ্রোহ এবং ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা অর্জনকালে চিত্রগ্রহণ শিল্পবিচারে যে উচ্চ মাত্রায় পৌঁছাইয়াছিল, তাহার নমুনা পেশ হইবে প্রদর্শনীতে। আশা করা যায়, নমুনাগুলি দর্শককুলের প্রশংসা অর্জনে ব্যর্থ হইবে না।

তবে প্রদর্শনী শুরুর পূর্বে সংবাদে স্থান অধিকার করিয়াছে প্রথম বিভাগটি। বিশেষ এক আবিষ্কারের সূত্রে। জানা গিয়াছে, ভারতে গণিতের শূন্য(০)-র ব্যবহার তৃতীয় শতাব্দীতে চালু ছিল। ইতিপূর্বে বিশেষজ্ঞদের ধারণা ছিল, ভারতে শূন্যের ব্যবহার নবম শতাব্দীর ব্যাপার। কিন্তু অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বডলিয়ান গ্রন্থাগারে ভূর্জপত্রে লিখিত যে বাখশালি পাণ্ডুলিপি রক্ষিত আছে, সংস্কৃতে রচিত হইলেও যাহার মধ্যে সংখ্যার উল্লেখ দেখা যায়, শূন্য সেখানে ডট বা বিন্দু চিহ্ন হিসাবে উপস্থিত। ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে পেশওয়ারের নিকট বাখশালি গ্রামে মাটির নীচে ওই পাণ্ডুলিপির সন্ধান মিলে। ভারতবিদ অগস্টাস ফ্রেডরিখ রুডলফ হর্নলে ওই পাণ্ডুলিপি হস্তগত করিবার পর ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে উহা বডলিয়ান গ্রন্থাগারে অর্পণ করেন। ১১৫ বৎসর কাল ওই স্থানে রক্ষিত পাণ্ডুলিপিটি কোন সময়ে রচিত, সেই প্রশ্নে পণ্ডিতেরা এত কাল স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছাইতে পারেন নাই। লিপি অঙ্কনের কায়দা এবং রচনার প্রকরণ বিচার করিয়া জাপানি পণ্ডিত হায়াশি তাকাও বলিয়াছিলেন, রচনাকাল অষ্টম এবং দ্বাদশ শতাব্দীর কোনও এক সময়। বিজ্ঞানের যে পরীক্ষায় প্রত্নবস্তুর বয়স নির্ধারিত হয়, সেই পরীক্ষা সদ্য বলিয়াছে বাখশালি পাণ্ডুলিপি তৃতীয় শতাব্দীতে রচিত হয়। সুতরাং, ভারতে গণিতের চিহ্ন হিসাবে শূন্যের ব্যবহার যে সময়ের বলিয়া গণ্য হইত, তাহা তদপেক্ষা অনেক প্রাচীন।

আসন্ন প্রদর্শনীতে বাখশালি পাণ্ডুলিপি নিশ্চয়ই দর্শকবৃন্দের মন কাড়িবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাখশালি পাণ্ডুলিপিতে উপস্থিত বিন্দুবৎ ওই চিহ্নটিই আধুনিক শূন্যের পূর্বসূরি। গণিতে শূন্য আবিষ্কার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। সংখ্যা লিখিবার কাজে ইহাতে নূতন যুগের সূচনা হয়। যাহার পরিণামে উপকৃত হয় ব্যবসা। শূন্যের আবিষ্কার যে ভারত ভূখণ্ডের কৃতিত্ব, এবং তৎপরে ওই আবিষ্কারের সুফল যে আরব-মারফত পাশ্চাত্যে পৌঁছাইয়াছিল, তাহা এক প্রচলিত ধারণা। সম্প্রতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কোনও কোনও দেশ ওই কৃতিত্ব নিজেদের বলিয়া দাবি করিয়াছে। বাখশালি পাণ্ডুলিপি-সম্পর্কিত সাম্প্রতিক আবিষ্কার প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চাকে গৌরবান্বিত করিবেই।

London Science Museum Illuminating India Exhibition Zero
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy