Advertisement
E-Paper

অ-জ্ঞান

মালয়েশিয়ার যাত্রিবাহী বিমানটির মর্মান্তিক কাহিনি আজ ঠিক চার সপ্তাহের পুরানো হইল। রহস্যের মীমাংসা হয় নাই। হয়তো কোনও দিন হইবে না। এই সূত্রেই একটি প্রশ্ন উঠিয়াছে। ইহা তথ্যপ্রযুক্তির বিস্ফোরণের যুগ। সংযোগ ব্যবস্থা বহুরূপে ঈশ্বরের মতো আমাদের সম্মুখে বিরাজমান। মোবাইল, ই-মেল, সোশাল নেটওয়ার্ক— একটা না লাগিলে আর একটা।

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৪ ০৫:৪১

মালয়েশিয়ার যাত্রিবাহী বিমানটির মর্মান্তিক কাহিনি আজ ঠিক চার সপ্তাহের পুরানো হইল। রহস্যের মীমাংসা হয় নাই। হয়তো কোনও দিন হইবে না। এই সূত্রেই একটি প্রশ্ন উঠিয়াছে। ইহা তথ্যপ্রযুক্তির বিস্ফোরণের যুগ। সংযোগ ব্যবস্থা বহুরূপে ঈশ্বরের মতো আমাদের সম্মুখে বিরাজমান। মোবাইল, ই-মেল, সোশাল নেটওয়ার্ক— একটা না লাগিলে আর একটা। যোগাযোগ ব্যবস্থার দৌলতে তথ্যপ্রযুক্তির বিস্ফোরণে সবাই নজরবন্দি। সেই বিশ্বজোড়া প্রযুক্তি যেন সহস্রমাথা হইয়া অজস্র দৃষ্টিতে আমাদের খবর গ্রহণ করিতেছে। এই দৃষ্টির সম্মুখে কিছুই যেন আর অগোচর নহে। গা ঢাকা দিবার, লুকাইয়া পড়িবার স্বাধীনতা নাই। এই কথাটি নানা ভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার মানুষেরা জ্ঞাপন করিয়া থাকেন। জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনে ছড়াইয়া দেওয়া হয় বার্তা। দুর্গম উচ্চতম পাহাড়, সুদূর মরুভূমি, গভীর সমুদ্র, নির্জন দ্বীপ যেখানেই থাকুন না কেন সভ্যতার সহিত আপনি যোগাযোগবিহীন নন। বার্তা পাইবেন। যদি না-ও চাহেন, সভ্যতার চক্ষু আপনাকে ঠিক খুঁজিয়া লইবে। হারাইয়া যাওয়া বিমানটি এই আধুনিক মিথ ও সভ্যতার সর্বত্রগামী হইবার গর্বটিকে প্রশ্নের মুখোমুখি করিয়াছে। সংযোগ-প্রযুক্তি তবে এখনও সর্বশক্তিমান নয়? এখনও অন্তর্ধান সম্ভব?

প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়া বিজ্ঞানের পক্ষে ভাল। অনেক ঈশ্বরবাদী বলিয়া থাকেন, বিজ্ঞান সকল প্রশ্নের জবাব দিতে পারে নাই বলিয়া বিজ্ঞান হীন, সর্বশক্তিমান ঈশ্বর একমাত্র সত্য। এক ও অদ্বিতীয়। ইহা বিশ্বাসীর প্রলাপ। বিজ্ঞান যে সব কিছুর উত্তর দিতে পারে নাই, এই সত্যটিকে বিজ্ঞানবাদী অন্য ভাবে ব্যাখ্যা করেন। তাঁহার মতে বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত জায়মান। গড়িয়া উঠিতেছে। টিনটিনের চন্দ্রাভিযানের কাহিনিতে বিপরীত দিক হইতে আগত উল্কার মুখোমুখি হইয়া বিজ্ঞানী ক্যালকুলাস ভাবিয়াছিলেন, যদি উল্কার সহিত রকেটের ধাক্কা লাগে তাহা হইলে ফের তাঁহাকে অঙ্ক কষিতে হইবে। ইহাই নির্মোহ বিজ্ঞানীর মনোভাব। রকেট ও উল্কার সংঘাত ঘটিলে তাঁহার প্রাণ যাইবে, ইহা ক্যালকুলাস ভাবেন নাই। ভাবিয়াছেন কী ভাবে, কোন গতিবেগে রকেট সরাইলে উল্কাঘাত হইতে রক্ষা পাওয়া যায় তাহার অঙ্ক। আসলে ইহাই বিজ্ঞানের যাত্রা। ভুল সংশোধন করিতে করিতে অগ্রসর হওয়া। এখন উত্তর নাই, পরে হয়তো পাওয়া যাইবে। এই মনোভাব যাঁহারা পোষণ করেন তাঁহারা বিজ্ঞান ছাড়িয়া ভাগ্যবাদী ও ঈশ্বরাবিষ্ট যেমন হইয়া পড়েন না, তেমনই বিজ্ঞানের দম্ভও তাঁহাদের গ্রাস করে না। ঈশ্বরবাদীদের বিপরীত প্রতিক্রিয়া বিজ্ঞানবাদীদের সবজান্তা দম্ভ। এই দম্ভে ভর করিয়া প্রকৃতিকে জয় ও দখল করিবার লোলুপতায় তাঁহারা মত্ত। ঈশ্বর সম্বন্ধীয় কুসংস্কারের ন্যায় ইহাও বিজ্ঞান সম্বন্ধীয় কুসংস্কার।

দুইয়ের বাহিরে যাইতে হইবে। মালয়েশিয়ার যাত্রিবাহী বিমান প্রমাণ করিল জানা বাকি। নিরাপত্তার জন্য আরও নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক। তাহা করিতে হইবে। দুনিয়া জুড়িয়া বিমান পরিবহণের নিয়ামকরা নিরাপত্তার পরিকাঠামো উন্নত করিতে তৎপর হইতেছেন। তাহা অত্যন্ত জরুরি। হতাশ হইবার কোনও হেতু নাই। ঈশ্বরে মন সমর্পণ করিয়া হাত গুটাইয়া লইলেও চলিবে না। বস্তুত, তাহার প্রয়োজনও নাই। হাত গুটাইয়া বসিয়া না থাকাই বিজ্ঞানের ধর্ম। সে আপন সীমা জানে বলিয়াই সেই সীমাকে প্রসারিত করিবার জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকে। সর্বশক্তিমান নহে বলিয়াই তাহার শক্তিবৃদ্ধির সম্ভাবনা অনন্ত। বিজ্ঞানের কাজ মানব ও প্রকৃতির মধ্যে নিরাপদ সহাবস্থানের সূত্র আবিষ্কার। সেই যাত্রা চলিতেছে। চলিবে।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy