Advertisement
E-Paper

অকল্যাণ

বাঙালির বহু দোষ রহিয়াছে, কিন্তু তাহার সহনশীলতা নামক গুণটিও বর্তমান। অন্য সম্প্রদায়ের প্রতি প্রবল বিদ্বেষ তাহার মধ্যে কোনও দিনই পাকাপোক্ত ভিত গাড়িয়া বসিতে পারে নাই। অনেকে অবশ্য সেইটিকেও দোষ বলিয়া চালাইতে চাহেন, বলেন ইহা বাঙালির আত্মমর্যাদার, অস্মিতার অভাব। ‘আমরা বাঙালি’ নামে একটি সংগঠন বহু দিন লাফাইয়াও আদৌ কল্কে পায় নাই, ইহাকে কেহ জাত্যভিমানের পরিপন্থী বলিয়া কাদা ছুড়িতে পারেন, কিন্তু বাঙালি ইহাকে প্রকৃত সংস্কৃত দৃষ্টিভঙ্গি বলিয়াই গৌরব অনুভব করে।

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৪ ০০:০৫

বাঙালির বহু দোষ রহিয়াছে, কিন্তু তাহার সহনশীলতা নামক গুণটিও বর্তমান। অন্য সম্প্রদায়ের প্রতি প্রবল বিদ্বেষ তাহার মধ্যে কোনও দিনই পাকাপোক্ত ভিত গাড়িয়া বসিতে পারে নাই। অনেকে অবশ্য সেইটিকেও দোষ বলিয়া চালাইতে চাহেন, বলেন ইহা বাঙালির আত্মমর্যাদার, অস্মিতার অভাব। ‘আমরা বাঙালি’ নামে একটি সংগঠন বহু দিন লাফাইয়াও আদৌ কল্কে পায় নাই, ইহাকে কেহ জাত্যভিমানের পরিপন্থী বলিয়া কাদা ছুড়িতে পারেন, কিন্তু বাঙালি ইহাকে প্রকৃত সংস্কৃত দৃষ্টিভঙ্গি বলিয়াই গৌরব অনুভব করে। কিন্তু সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠিল, তাহাতে ভয় হয়, বাঙালির শিক্ষিত মনোভঙ্গির অহংকার অধিক দিন টিকিবে না। সম্প্রতি রবীন্দ্র সরোবরে প্রাতর্ভ্রমণ করিতে গিয়া কল্যাণবাবু নাকি কিছু অবাঙালি বয়স্ক মানুষের কথাবার্তার মধ্যে জোর করিয়া ঢুকিয়া পড়েন ও চিৎকার করিয়া তাঁহাদের যে অপমান করেন, তাহার একটি প্রধান নিশানা ওই মানুষগুলির সম্প্রদায়। তিনি নাকি উঁহাদের দুষিয়া বলিয়াছেন, বিজেপি-কে সমর্থন করিবার ফল তাঁহারা ভুগিবেন। কল্যাণবাবু অবশ্য নিজ আচরণ ও বাক্যাদির ভিন্ন কৈফিয়ত দিয়াছেন, কিন্তু তাঁহার প্রবণতাটি লইয়া প্রশ্ন ও অনাহ্লাদ থাকিয়াই যায়। এই প্রকারের আচরণ কেহ করিলে, তাহা এক আঘাতে তিন সু-পক্ষীকে নিধন করে। ইহাতে ভদ্রতার সীমা লঙ্ঘিত হয়, অন্য মানুষের বাক্যালাপের মধ্যে জোর করিয়া নাক ও মেজাজ গলাইয়া তড়পাইবার কোনও অধিকারই কাহারও নাই। অসাম্প্রদায়িকতার শোভন রেখাটি অতিক্রান্ত হয়, কাহারও মতামতের প্রতিবাদ করিতে গেলে তাহার গোষ্ঠী তুলিয়া গালি দিবার অভ্যাস অতি কদর্য। সর্বোপরি, একটি নির্দিষ্ট দলকে ভোট দিবার জন্য মানুষকে হুমকি প্রদান করিলে, গণতন্ত্রের মূল মর্মটিই কলঙ্কিত হয়।

‘ইন্টারন্যাশনাল মারওয়াড়ি ফেডারেশন’-এর সদস্য ও প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক দীনেশ বাজাজ এই ঘটনা লইয়া মুখ্যমন্ত্রীর সহিত কথা বলিয়াছেন। মুখ্যমন্ত্রী নাকি তাঁহাকে জানাইয়াছেন, এই সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি তাঁহার বিশেষ অনুভূতি রহিয়াছে। মুশকিল হইল, বিশেষ অনুভূতির প্রয়োজন নাই। প্রয়োজন কেবল প্রাথমিক ভদ্রতার। সভ্যতার। স্বাভাবিক উদারতার। একটি সমাজে বহু প্রকারের বিভাজন থাকে। হিন্দু-মুসলিম, বাঙালি-মারওয়াড়ি, ধনী-দরিদ্র, অসংখ্য ভেদরেখা এই বঙ্গকে চিরিয়া কাটিয়া বহিয়া গিয়াছে। শিক্ষিত মানুষ এই বিভেদগুলি জানিবেন-বুঝিবেন, কিন্তু সেইগুলি দ্বারা নিজের মনোবৃত্তি ও আচরণকে নিয়ন্ত্রিত হইতে দিবেন না। ইহার পূর্বে একটি হাসপাতালের দুর্ভাগ্যজনক অগ্নিকাণ্ডকে কেন্দ্র করিয়া একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের প্রতি সরকারের মনোভাব লইয়া বহু অস্বস্তিকর প্রসঙ্গ উঠিয়াছে। পুনরায় সেই গোত্রেরই নালিশ শুনা গেল প্রশাসনে আসীন দলেরই এক কৃষ্ণবিষ্ণু সম্পর্কে। ইহাতে কেহ উদ্বেগ-বার্তা পড়িতে উদগ্রীব হইলে, দোষ দেওয়া যায় কি? আর বাক্স্বাধীনতার বর্ণপরিচয় তো এই রাজ্যে ক্ষমতাসীন বহু মানুষকেই শিখাইতে হইবে। নিজ আড্ডায় আলোচনা করিলেও কেন সকলের সব কথা একটি নির্দিষ্ট দলের পছন্দসই হইতে হইবে, আর না হইলেই এক জন আসিয়া গায়ে পড়িয়া গালি দিতে শুরু করিবে, ইহা বুঝিতে গেলে, সম্প্রতি ভিন্ন ও বিরোধী মতকে এই রাজ্যের মুখ্য ব্যক্তিরা যে ভাবে উৎপীড়ন করিয়াছেন, তাহার সূত্র অনুধাবন করিলেই চলিবে। পূর্বে ভাবা হইত, নেতানেত্রীকে দেখিয়া সাধারণ মানুষ শিখিবেন, আদর্শ আচার-আচরণ কী রূপ হওয়া উচিত। এখন অবশ্য তাঁহাদের ক্ষমতা-উদ্গারের বহর দেখিয়া জনগণ ললাটে করাঘাত করিয়া ভাবিতেছেন, ইঁহাদের বাঙালিসুলভ সহিষ্ণুতায় প্রশিক্ষিত করিবার কি কোনও উপায়ই নাই?

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy