Advertisement
E-Paper

অনাস্থা

রাজ্যের শাসক দলের নেতারা সিবিআই প্রসঙ্গে দলনেত্রীর মনোভাবে অটল। বিভিন্ন ভাষায়, এবং ভঙ্গিতে, তাঁহারা বলিতেছেন, সিবিআই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করিতেই এমন তৎপর হইয়া উঠিয়াছে। সিবিআই-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ‘খেলা’টিকে তৃণমূল নেতৃত্ব অতঃপর পরিচিত ময়দানে আনিয়া ফেলিলেন। কলিকাতায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বিভাগের দফতরের সম্মুখে মহিলা তৃণমূল কংগ্রেস ধরনা আরম্ভ করিল।

শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:০১

রাজ্যের শাসক দলের নেতারা সিবিআই প্রসঙ্গে দলনেত্রীর মনোভাবে অটল। বিভিন্ন ভাষায়, এবং ভঙ্গিতে, তাঁহারা বলিতেছেন, সিবিআই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করিতেই এমন তৎপর হইয়া উঠিয়াছে। সিবিআই-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ‘খেলা’টিকে তৃণমূল নেতৃত্ব অতঃপর পরিচিত ময়দানে আনিয়া ফেলিলেন। কলিকাতায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বিভাগের দফতরের সম্মুখে মহিলা তৃণমূল কংগ্রেস ধরনা আরম্ভ করিল। যে দল মা-মাটি-মানুষের স্বার্থরক্ষার প্রতিশ্রুতির জোরে শাসনক্ষমতা অর্জন করিয়াছে, রাজ্যের ১৭ লক্ষ মানুষের চরম আর্থিক ক্ষতির ঘটনার তদন্তটি সেই দলের নিকট আপত্তিজনক ঠেকিতেছে কেন, প্রশ্ন উঠিতে পারে। রজত মজুমদারের গ্রেফতারির পরেই আপত্তির সুর চড়িল কেন, সেই প্রশ্নটিও গুরুতর। কিন্তু, আপত্তি প্রকাশের যে পন্থা তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব বাছিয়া লইয়াছেন, তাহা অকল্পনীয়। সিবিআই-এর দফতরের সম্মুখে ধরনাটি হয়তো বে-আইনি নহে, যদিও ইচ্ছাকৃত ভাবে সরকারি কর্মীদের কাজে বাধা সৃষ্টি করিবার চেষ্টা আইনের চোখে আপত্তিকর ঠেকিতে পারে। কিন্তু, আইন আর নৈতিকতার গণ্ডি এক নহে। তৃণমূলের এই আচরণ সম্পূর্ণ অনৈতিক তো বটেই, অ-সভ্যও। কে জানে, হয়তো তদন্তের গতির তীব্রতায় শাসক দলের ণত্ব ষত্ব গুলাইয়া গিয়াছে।

সিবিআই-এর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চালিত হওয়ার অভিযোগ এই প্রথম নহে। বহু বার অভিযোগ উঠিয়াছে, এই কেন্দ্রীয় সংস্থাটি রাজনৈতিক প্রভুদের নিকট আত্মসমর্পণ করিয়াছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সিবিআই-কে খাঁচার তোতার সহিতও তুলনা করিয়াছে। কিন্তু, এই কথাটিও সত্য যে ইউপিএ-র শাসনকালেই সিবিআই কংগ্রেস এবং তাহার সহযোগী দলগুলির বহু নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত করিয়াছে। পশ্চিমবঙ্গের শাসকরা প্রশাসক রূপে, অথবা রাজনৈতিক দল হিসাবে, সিবিআই-এর নিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী না-ই হইতে পারেন। কিন্তু, সিবিআই-এর দফতরের সম্মুখে ধরনা সেই অবিশ্বাস জ্ঞাপনের পন্থা হইতে পারে না। সভ্য, শালীন ও সাংবিধানিক ভাবে নিজেদের অনাস্থার কথা প্রকাশ করিবার ও প্রতিবাদ জানাইবার পথ সন্ধান করা তৃণমূল নেতৃত্বের কর্তব্য ছিল। পরিবর্তে তাঁহারা মেঠো রাজনীতির পথ বাছিয়াছেন। ভুলিয়া গিয়াছেন, সিবিআই তাঁহাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নহে, তাহা একটি সাংবিধানিক সংস্থা। অথবা, সব কিছুকেই রাজনীতির চশমা পরিয়া দেখিতে অভ্যস্ত তৃণমূল নেতৃত্ব হয়তো অন্য ভাবে দেখিতে ভুলিয়াছেন।

সিবিআই-এর প্রতি রাজ্যের শাসকদের যে অনাস্থা, তাহার কোনও সুযুক্তি আছে কি? সারদা-কাণ্ডের তদন্তে সংস্থাটি এখন অবধি যতখানি অগ্রসর হইয়াছে, তাহাতে কোথাও অধিকারের সীমা লঙ্ঘন করে নাই, কাহারও বিরুদ্ধে কোনও ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলে নাই। সিবিআই যতগুলি সূত্র প্রকাশ করিয়াছে, তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে কোনওটিকেই খণ্ডন করা সম্ভব হয় নাই। ফলে, সত্যসন্ধান ব্যতীত অন্য কিছুর তাড়নায় তদন্ত চলিতেছে, এমনটা বলিবার যথার্থ কোনও হেতু নাই। তবুও শাসক দল যে ভাবে সিবিআই-এর বিরুদ্ধে মুখর হইয়াছে, তাহাতে কেহ সন্দেহ করিতে পারেন, শাসকরা হয়তো সব সত্য প্রকাশ্যে আসিবার সম্ভাবনাতেই বিচলিত। রাজ্য পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) এক বৎসরাধিক সময় ধরিয়া সারদা-তদন্তের দুই গোত্রের ক্ষতি করিয়াছে, এমন অভিযোগ উত্তরোত্তর বাড়িতেছে। এক দিকে, যে প্রশ্নগুলির অনুসন্ধান বিধেয় ছিল, সিট তাহা করে নাই। অন্য দিকে, বহু নথি নষ্ট করিবার, সরাইয়া ফেলিবার অভিযোগও তাহাদের বিরুদ্ধে উঠিতেছে। পারিপার্শ্বিক প্রমাণ বলিতেছে, সেই অভিযোগগুলিকে উড়াইয়া দেওয়ার উপায় নাই। সিট-এ ভরসা এবং সিবিআই-এ অনাস্থা, শাসক দলের এই যুগল অবস্থান আরও অনেক সন্দেহের জন্ম দিতে পারে বলিয়াই আশঙ্কা।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy