Advertisement
E-Paper

অনন্ত সময়

খ ই ভাজিবার কাজটুকুও না থাকিলে সময় কাটে কীসে? ভারতীয় রাজনীতিকরা সমস্বরে এই প্রশ্নের উত্তর দিবেন: সম্পূর্ণ অবান্তর কিছু কারণে রাজনীতির ময়দান গরম করিয়া।

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৬ ০০:০০

খ ই ভাজিবার কাজটুকুও না থাকিলে সময় কাটে কীসে? ভারতীয় রাজনীতিকরা সমস্বরে এই প্রশ্নের উত্তর দিবেন: সম্পূর্ণ অবান্তর কিছু কারণে রাজনীতির ময়দান গরম করিয়া। বিজেপি অগুস্তা-কাণ্ডে কোনও তদন্তের ধার না ধারিয়াই সনিয়া গাঁধীকে দোষী সাব্যস্ত করিয়া রাজনৈতিক আক্রমণ শানাইতেছে। অরবিন্দ কেজরীবালও— বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ভাষায়— বিজেপির মুদ্রাই তাহাদের ফিরাইয়া দিতে ব্যস্ত। তিনি নরেন্দ্র মোদীর ডিগ্রি লইয়া নাটক খাড়া করিয়াছেন। যে প্রশ্নটিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করাই বিধেয় ছিল, তাহার উত্তর দিতে বিজেপি অরুণ জেটলি ও অমিত শাহকে ময়দানে নামাইয়া দিয়াছে। তাঁহারা সাংবাদিক সম্মেলনে নরেন্দ্র মোদীর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের মার্কশিট দেখাইয়া যুদ্ধজয়ের হাসি হাসিতেছেন। বুঝা যায়, কাহারও কোনও কাজ নাই। তাঁহারা বরং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখিয়া শিখিতে পারিতেন। কাজ না থাকিলে তিনি টেলিভিশনের অভিনেতাদের পুরস্কার বিলাইতে যান, অথবা রাস্তায় দাঁড়াইয়া যান নিয়ন্ত্রণ করেন। কিন্তু, ইস্ট জর্জিয়া ইউনিভার্সিটির ডিগ্রির খোঁজে নামেন না। নরেন্দ্র মোদী দশম শ্রেণির পরই প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যাচর্চার পাট সাঙ্গ করিয়াছিলেন, না কি সত্যই তিনি এমএ পাশ, এই প্রশ্নটিকে কোনও গুরুত্ব দেওয়ারই প্রয়োজন ছিল না। সত্য, তিনি মনমোহন সিংহের পর প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসিয়াছেন। সত্য, তাঁহার কিছু কথায়, আচরণে বোধ হয়, আরও খানিক শিক্ষা থাকিলে বুঝি মন্দ হইত না। কিন্তু, তাঁহার শিক্ষাগত যোগ্যতাকে রাজনৈতিক প্রসঙ্গে পরিণত করিবার চেষ্টাটিকে বিন্দুমাত্র স্বীকৃতি না দেওয়াই বিধেয় ছিল। কিন্তু, হাতে কাজ না থাকিলে যাহা হয়।

মোদী সরকারের হাতে কাজ নাই কেন? সংস্কার কি সারা হইয়া গিয়াছে? তাঁহারা কি ‘ন্যূনতম সরকার’-এর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করিয়া ফেলিয়াছেন? ভারতের উৎপাদন ক্ষেত্রে নূতন জোয়ার আসিয়াছে, কৃষিক্ষেত্র পুষ্পে-পত্রে বিকশিত হইয়া উঠিয়াছে? আর্থিক বৃদ্ধির হার উচ্চতর কক্ষপথে পৌঁছাইয়া গিয়াছে? একটি প্রশ্নের উত্তরও ইতিবাচক নহে। যে প্রতিশ্রুতি তাঁহাকে ভারতের মসনদে বসাইয়াছিল, নরেন্দ্র মোদী তাহার কোনওটি এখনও পূর্ণ করিয়া উঠিতে পারেন নাই। বস্তুত, তিনি সংস্কারের গুরুত্ব বোঝেন, এমন কোনও প্রমাণ এখনও অবধি মেলে নাই। কাজগুলি সহজ নহে। তাহার জন্য অখণ্ড মনোযোগ প্রয়োজন, প্রচুর সময় প্রয়োজন। অবান্তরের চর্চায় নষ্ট করিবার মতো সময় তাঁহার নাই। আশঙ্কা হয়, তাঁহার আরও অনেক প্রতিশ্রুতির ন্যায় অর্থনীতির চেহারা বদলাইয়া দেওয়ার প্রতিশ্রুতিটিও বুঝি শুধু নির্বাচনী বৈতরণী পার হইবার জন্যই ছিল। ২০১৯ সাল দরজায় কড়া নাড়িলে তিনি ফের তোরঙ্গ হইতে অর্থনীতির প্রশ্নগুলিকে বাহিরে আনিবেন।

নরেন্দ্র মোদী নিজের কর্তব্য সম্বন্ধে যথাবিধি অবহিত, এমন কথা মনে করিবার বিন্দুমাত্র কারণ তিনিই রাখেন নাই। আশা করা গিয়াছিল, তিনি বুঝি সঙ্ঘ পরিবারের সহিত দূরত্ব বজায় রাখিতে পারিবেন, হিন্দুত্ববাদী কর্মসূচিকে মাথা তুলিতে দিবেন না। কিন্তু, ক্রমে স্পষ্ট হইতেছে, জাতীয়তাবাদের মোড়কে হিন্দুত্বের প্রসারই তাঁহার একমাত্র লক্ষ্য। হায়দরাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আগুন না নিভিতেই তাঁহারা জেএনইউ-এ যুদ্ধক্ষেত্র খুলিয়া বসিলেন। তাহার ধাক্কা সামলাইবার পূর্বেই যাদবপুর। গোমাংস হইতে ভারতমাতা, নরেন্দ্র মোদী এত বিচিত্র বিষয় লইয়া ভাবিয়াই চলিয়াছেন যে অর্থনীতি তাঁহার মনের চৌকাঠ পার করিতে পারে না। বিদেশ ভ্রমণের ফাঁকে ফাঁকে তিনি যতটুকু সময় পান, তাহা এই অবান্তরের চর্চাতেই যায়। সেই তালিকায় ডিগ্রির আখ্যানটিও যোগ হইল, এইমাত্র।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy