Advertisement
E-Paper

অর্থ সত্য

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের আবেগ প্রকাশ করিতে অভ্যস্ত নহেন। তবু, ১৬ মে তিনি একটি টুইট করিয়াছিলেন: ‘নরেন্দ্র মোদী, আপনাকে টোকিয়োয় স্বাগত জানাই। আশা করি, আমাদের সৌহার্দ্যের সম্পর্ক আরও অগ্রসর হইবে।’ কোনও গুরুত্বপূর্ণ দেশে নূতন রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হইলে তাঁহাকে নিজের দেশে আমন্ত্রণ জানানো কূটনীতির দুনিয়ায় স্বাভাবিক। কিন্তু, জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বার্তায় সেই স্বাভাবিকতার অতিরিক্ত উষ্ণতা ছিল। তাহার দুইটি কারণ। প্রথম, নরেন্দ্র মোদী বহু পূর্বেই গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী রূপে জাপানের ন্যায় কিছু দেশের সহিত সুসম্পর্ক গড়িয়া তুলিয়াছিলেন।

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৪ ০০:০৫

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের আবেগ প্রকাশ করিতে অভ্যস্ত নহেন। তবু, ১৬ মে তিনি একটি টুইট করিয়াছিলেন: ‘নরেন্দ্র মোদী, আপনাকে টোকিয়োয় স্বাগত জানাই। আশা করি, আমাদের সৌহার্দ্যের সম্পর্ক আরও অগ্রসর হইবে।’ কোনও গুরুত্বপূর্ণ দেশে নূতন রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হইলে তাঁহাকে নিজের দেশে আমন্ত্রণ জানানো কূটনীতির দুনিয়ায় স্বাভাবিক। কিন্তু, জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বার্তায় সেই স্বাভাবিকতার অতিরিক্ত উষ্ণতা ছিল। তাহার দুইটি কারণ। প্রথম, নরেন্দ্র মোদী বহু পূর্বেই গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী রূপে জাপানের ন্যায় কিছু দেশের সহিত সুসম্পর্ক গড়িয়া তুলিয়াছিলেন। সেই সম্পর্ক আজ তাঁহার এবং ভারতের নিকট অমূল্য। দ্বিতীয় কারণ, ভারত জাপানের নিকট একাধিক কারণে অতি গুরুত্বপূর্ণ। এক দিকে ভারতে বিপুল বিনিয়োগের সুযোগ রহিয়াছে, অন্য দিকে এশিয়ায় চিনের প্রতিস্পর্ধী শক্তিকেন্দ্র গড়িয়া তুলিতে হইলে ভারতই অপরিহার্য দোসর। কাজেই, মোদীকে দেশে উষ্ণ আমন্ত্রণ জানাইতে শিনজো আবে বিলম্ব করেন নাই। মোদীরও তাঁহাকে দেওয়ার অনেক কিছুই আছে। দিল্লি-মুম্বই শিল্প করিডরে বিশেষ আর্থিক অঞ্চল, বন্দর বা রেলের ন্যায় পরিকাঠামোয় বিনিয়োগের সুযোগ— ভারতের দরজা জাপানের জন্য খুলিলে সম্ভাবনার নূতন দিগন্ত উন্মোচিত হইতে পারে।

জাপান ব্যতিক্রম নহে। একবিংশ শতকে কূটনীতির চালকের আসনে যে অর্থনীতিই অধিষ্ঠিত, তাহা স্পষ্ট। ফলে, চিন হইতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সার্ক-ভুক্ত দেশগুলি, সকলেই ভারতের সহিত আর্থিক সম্পর্ক মজবুততর করিয়া তুলিতে চাহে। জাপান যেমন ভারতের সহিত একযোগে সমুদ্রপথে ‘এশিয়ান সাপ্লাই চেন নেটওয়ার্ক’ গড়িয়া তুলিতে চাহে, প্রধানত চিনের সিল্ক রুট প্রকল্পের জবাব হিসাবে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিকটও ভারত অতি জরুরি; এশিয়ায় নিজের উপস্থিতি প্রসারিত করিতে চাহিলে ভারত অপেক্ষা যোগ্যতর কৌশলগত সঙ্গী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাই। সেপ্টেম্বরে মোদীর মার্কিন সফর নিশ্চিত। আবার, মোদী-সরকার ক্ষমতায় আসিবার পরেই চিনও দেশের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং য়ি-কে ভারত সফরে পাঠাইয়াছে। এই সুযোগ লওয়া ভারতের কর্তব্য। কূটনীতির দুনিয়ায় কেহ চিরন্তন বন্ধু বা শত্রু নহে। অর্থনীতির বাস্তবেও বন্ধুত্ব কৌশলগত। এশিয়ায় আর্থিক কূটনীতির মাধ্যমে নিজের অবস্থান দৃঢ় করিয়া ক্রমে বিশ্বমঞ্চে প্রতিষ্ঠা অর্জনই ভারতের লক্ষ্য হওয়া বিধেয়। জাপান, চিন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র— সকলেরই যেমন ভারতকে প্রয়োজন, ভারতেরও তেমনই এই দেশগুলিকে প্রয়োজন। দ্বিপাক্ষিক প্রয়োজনের ভিত্তিতেই সমানে সমানে সম্পর্ক রচিত হয়।

শুধু যে আর্থিক লাভের কারণেই আর্থিক কূটনীতি প্রয়োজন, তাহা নহে। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কই যেমন। অর্থনীতির দাঁড়িপাল্লায় ভারত আর পাকিস্তানের কোনও তুলনা হয় না। পাকিস্তানের সহিত বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হইলে ভারতের যতখানি লাভ, পাকিস্তানের লাভ তাহার তুলনায় বহু গুণ। তবুও, পাকিস্তানের সহিত আর্থিক সম্পর্ক প্রসারে তৎপর হওয়া নরেন্দ্র মোদীর অবশ্যকর্তব্য। কেবল প্রতিবেশীর কল্যাণকামনায় নহে, আপন স্বার্থেও। ভারতের সহিত পাকিস্তান যত বেশি বাণিজ্যিক স্বার্থে জড়াইয়া যাইবে, সে দেশের বাণিজ্যমহলের নিকটও ভারতের গুরুত্ব ততই বাড়িবে। ফলে, যে কারণগুলিতে ভারতের সহিত সম্পর্ক বিষাইয়া যায়, পাকিস্তানের অভ্যন্তরেই তাহার বিরোধিতা তৈরি হইবে। সে দেশের বণিকমহল জানিবে, ভারতে শান্তি বজায় থাকিলে তাহাদেরও লাভ। ভারতের নিকট ইহা বড় প্রাপ্তি। আর্থিক কূটনীতিই এই প্রাপ্তি নিশ্চিত করিতে পারে।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy