Advertisement
E-Paper

আদালত ও নারী

এক প্রৌঢ়াকে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ হইতে এক পুরুষকে মুক্তি দেওয়া হইল, কারণ, প্রৌঢ়ার সহিত আগ্রাসী যৌনতা যে তাঁহার সম্মতি ব্যতিরেকেই হইয়াছিল, ইহার কোনও প্রমাণ আদালত পায় নাই। তিনি মারা গিয়াছেন আগ্রাসী যৌনতার ফলে, না তাহার পূর্বে অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে, তাহাও নিশ্চিত নহে। এই রায় লইয়া নানাবিধ তর্ক উঠিয়াছে, কিন্তু শাস্তি ও অব্যাহতির প্রশ্ন বাদ দিয়া, ঈষৎ অন্য নজর চালাইলে দেখা যাইবে, ইহার মধ্যে এক স্বীকৃতি নিহিত: এক প্রৌঢ়াও আগ্রাসী যৌনতা স্বেচ্ছায় চাহিতে পারেন, সেই বিষয়ে উদ্যোগী হইতে পারেন এবং প্রচুর মদ্যপান করিয়া সেই যৌনতা ভোগ করিতে পারেন।

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০৫

এক প্রৌঢ়াকে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ হইতে এক পুরুষকে মুক্তি দেওয়া হইল, কারণ, প্রৌঢ়ার সহিত আগ্রাসী যৌনতা যে তাঁহার সম্মতি ব্যতিরেকেই হইয়াছিল, ইহার কোনও প্রমাণ আদালত পায় নাই। তিনি মারা গিয়াছেন আগ্রাসী যৌনতার ফলে, না তাহার পূর্বে অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে, তাহাও নিশ্চিত নহে। এই রায় লইয়া নানাবিধ তর্ক উঠিয়াছে, কিন্তু শাস্তি ও অব্যাহতির প্রশ্ন বাদ দিয়া, ঈষৎ অন্য নজর চালাইলে দেখা যাইবে, ইহার মধ্যে এক স্বীকৃতি নিহিত: এক প্রৌঢ়াও আগ্রাসী যৌনতা স্বেচ্ছায় চাহিতে পারেন, সেই বিষয়ে উদ্যোগী হইতে পারেন এবং প্রচুর মদ্যপান করিয়া সেই যৌনতা ভোগ করিতে পারেন। এই ধারণাটি, ভারতের ন্যায় রক্ষণশীল দেশে, যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এই দেশে বহু নরনারী প্রকাশ্যে চুম্বন করিয়া নীতি-পাহারাদারির প্রতিবাদ আয়োজন করিলে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে মৌলবাদীগণ তাহাদের পিটাইতে ব্যস্ত হইয়া পড়ে। প্রেমিকের বা যৌনতা-লিপ্ত মানুষের অধিকার লইয়া কথা বলিলে সাধারণ মানুষেরও ভ্রু কুঞ্চিত হইয়া উঠে। আর নারীগণ সম্পর্কে তো ঔচিত্য-রঞ্জিত ধারণা: তাহারা যৌনতায় সর্বদা নিশ্চেষ্ট ও বশংবদ থাকিবে, কাজটি করিতে পুরুষ উদ্যমী হইলে, স্মিত প্রশ্রয়-হাস্যে আত্মদান করিবে মাত্র। তাহাদের যৌন আকাঙ্ক্ষা থাকিতে নাই, থাকিলেও তাহার রূপায়ণে সক্রিয় হওয়া মহাপাপ। তাই ভারতীয় ছবিতে নায়িকাগণ নায়কের সনির্বন্ধ আবদার শুনিয়া ‘যাঃ, অসভ্য’ বলিয়া পলায় ও ভ্যাম্পগণ নায়ককে শয্যায় আহ্বান করে। ইদানীং নায়িকা ও ভ্যাম্প কিঞ্চিৎ মিশিয়া যাইতেছে বটে, কিন্তু সেই ফিল্মগুলি কেবল ইংরেজিপনা-গ্রস্ত মাল্টিপ্লেক্স-ভিড়কে লক্ষ্য করিয়া নির্মিত। তাহারাও ফেসবুকে চমকপ্রদ সপ্রতিভতায় লিখিয়া চলিয়াছে, যৌনতা বিষয়ে অতিরেক আমাদের ‘ঐতিহ্যের’ পরিপন্থী। সেই প্রেক্ষিতে, এই রায় নারী-অধিকারের বার্তা দেয়।

বার্তাটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ হইয়া উঠে, তাহা এক প্রৌঢ়াকে এই অধিকার দেয় বলিয়া। মদ্যপান করিয়া তুমুল যৌনতা করিবার মধ্যে ভারতীয় মানসে যে লাম্পট্যের দ্যোতনা নিহিত, তাহা নারীর মধ্যে প্রকাশিত হইলেই যথেষ্ট ঝাঁকুনি ঘটে, আর প্রৌঢ়া তাহার ‘শিকার’ না হইয়া ‘সূত্রপাতকারিণী’ বা ‘সমান অংশী’ হইলে তাহা প্রায় অবিশ্বাস্য কাহিনির পর্যায়ে চলিয়া যায়, কারণ বয়স্ক ব্যক্তির যৌনাকাঙ্ক্ষাকে এই দেশে ঘোর অনাচার ও প্রায় প্রকৃতিবিরুদ্ধ বলিয়াই দেখা হয়। অবশ্য কেবল ভারতে এই মানসিকতা সীমাবদ্ধ নহে। পর্তুগালে এক মহিলা আদালতে নালিশ করিয়াছিলেন, ভুল শল্যচিকিৎসার ফলে তাঁহার যৌন জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হইয়া যায়। আদালত সেই ক্লিনিককে যে পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিবার আদেশ দেয়, পুনরাবেদনের ফলে এক উচ্চ আদালত তাহার অঙ্ক প্রচুর কমাইয়া দিয়াছে, কারণ, ঘটনার কালে মহিলার বয়স ছিল পঞ্চাশ, এবং আদালতের মতে, পঞ্চাশের পরে যৌনতা অধিক গুরুত্বপূর্ণ নহে। তদ্ব্যতীত, মহিলা তখন দুই সন্তানের মাতা। এই রায় মানুষের সুস্থতার অধিকারকেই অপমান করে, কিন্তু তাহা অধিক স্পষ্টতায় বিবৃত করে: নারী সন্তানার্থেই মূলত যৌনতা করিবে, এবং একটি নির্দিষ্ট বয়স অতিক্রম করিলে, তাহাও বড় একটা করিবে না। উপযোগিতা বাদ দিয়া, যৌনতার নিখাদ আনন্দের প্রতি নারীর আসক্তিকে সমাজ অনুমোদন করে না, আর বয়স্ক হইয়া গেলে, তথাকথিত সৌন্দর্য অস্তমিত হয় বলিয়া, তাহার যৌন চাহিদার অস্তিত্বটিই অস্বীকার করে। এই রায় লইয়া বহু প্রগতিশীল মানুষ ও সংস্থা ছিছিক্কার-রত হইলেও, প্রাচ্য-পাশ্চাত্য নির্বিশেষে বিশ্বের অধিকাংশ মানুষই হৃদয়ে এই মতের সমর্থনই খুঁজিয়া পাইবেন। মানুষ কখন কী করিবে ও না-করিবে, সেই বিষয়ে অধিকাংশ সমাজে অতি স্পষ্ট তালিকা রহিয়াছে, কারণ ব্যক্তিস্বাধীনতাকে ও ব্যক্তিভিন্নতাকে গুলি মারিয়া সর্ব-আচ্ছাদক অনুশাসন নির্মাণ নিয়ন্ত্রণকামী সমাজের মূল অভিপ্রায়। ভারতীয় আদালত আপাতত এই স্রোতের বিপরীতে বিহার করিল, শ্লাঘার বিষয়।

য ৎ কি ঞ্চি ৎ

‘হোক কলরব’-এর পর ‘হোক চুম্বন’। এ বার শীত আসছে। তা হলে লাগাও ‘গরিব কেন অনাহারে থাকবে’ জিগির তুলে ‘হোক পিকনিক’, পথ অবরোধ করে এন্তার পাঁউরুটি-ডিমসেদ্ধ ভক্ষণ ও বিতরণ। এ ছাড়া ‘হোক সোয়েটার’, ব্যস্ত মোড়ে ভেড়া জড়ো করে পশম ছাড়িয়ে সরাসরি আলোয়ান বুনে ফুটপাথের ভিখিরিকে ঘাড়ে ধরে পরানো, যতই কুটকুট করুক। কে বলতে পারে, এত সব পেরিয়ে কোন দিন হয়তো শুরু হবে ক্যাম্পাসময় এক আজব প্রকল্প: ‘হোক পড়াশোনা’!

anandabazar editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy