Advertisement
E-Paper

আরও একটি ‘ষড়যন্ত্র’

শুধু যে ষড়যন্ত্রের চক্রে পড়িয়াই বাঙালির যাবতীয় সম্ভাবনার অঙ্কুর শুকাইয়া গেল, ১৪২১ বঙ্গাব্দে দাঁড়াইয়া আর কাহারই বা সে বিষয়ে সংশয় থাকিতে পারে? লোকসভা নির্বাচন চলিতেছে, কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারের হাতে আর দিনকয়েক মাত্র পড়িয়া আছে। এমন সময় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের দল পাঠাইয়া সারদা কাণ্ডের তদন্তে গতি আনিবার কেন্দ্রীয় সরকারি চেষ্টাতেও পশ্চিমবঙ্গের শাসকরা ‘কেন্দ্রীয় ষড়যন্ত্র’ দেখিতে পাইয়াছেন। গত এক বৎসর যাবৎ এই কেলেঙ্কারির তদন্তের গতি যে শম্বুককেও হার মানাইয়াছে, সেই সত্য লুকাইবার জায়গা যদিও নাই।

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৪ ০০:০৫

শুধু যে ষড়যন্ত্রের চক্রে পড়িয়াই বাঙালির যাবতীয় সম্ভাবনার অঙ্কুর শুকাইয়া গেল, ১৪২১ বঙ্গাব্দে দাঁড়াইয়া আর কাহারই বা সে বিষয়ে সংশয় থাকিতে পারে? লোকসভা নির্বাচন চলিতেছে, কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারের হাতে আর দিনকয়েক মাত্র পড়িয়া আছে। এমন সময় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের দল পাঠাইয়া সারদা কাণ্ডের তদন্তে গতি আনিবার কেন্দ্রীয় সরকারি চেষ্টাতেও পশ্চিমবঙ্গের শাসকরা ‘কেন্দ্রীয় ষড়যন্ত্র’ দেখিতে পাইয়াছেন। গত এক বৎসর যাবৎ এই কেলেঙ্কারির তদন্তের গতি যে শম্বুককেও হার মানাইয়াছে, সেই সত্য লুকাইবার জায়গা যদিও নাই। আজ রাজ্যের ‘বিশেষ তদন্তকারী দল’-এর বয়ঃক্রম এক বৎসর পূর্ণ হইল। এই ৩৬৫ দিনে তাহারা মোট ৫৫০টি মামলার তদন্তের কাজ আরম্ভ করিতে পারিয়াছে। দিনে দেড়টি মামলার সামান্য বেশি। তবে, এই একই সময়কালে রাজ্য সরকারের দ্বারা নিযুক্ত শ্যামল সেন কমিশন প্রায় চার লক্ষ আমানতকারীর অর্থ ফিরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত করিয়া ফেলিয়াছে। প্রায় সতেরো লক্ষ আবেদন জমা পড়িয়াছিল। বিশেষ তদন্তকারী দলের কাজের গতি লইয়া যদি আর প্রশ্ন না থাকে, তবে কাজের ধরন লইয়া কথা চলিতে পারে। রাজ্য পুলিশ গত এক বৎসরে যাঁহাদের থানার চৌহদ্দিতে আনিতে পারে নাই— পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, তাঁহারা নিখোঁজ থাকাতেই এই ব্যর্থতা— ইডি মাত্র কয়েক দিনে তাঁহাদের খুঁজিয়া পাইয়াছে। গত এক বৎসরে রাজ্য সরকার বা তাহার পুলিশ কিঞ্চিৎ সক্রিয় হইলে লোকসভা নির্বাচনের মুখে এমন বিড়ম্বনায় পড়িতে হইত না। কিন্তু, গতস্য শোচনা নাস্তি।

তর্কের খাতিরে ধরিয়া লওয়া যাউক, কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্য অসৎ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁহার সরকারকে হয়রান করিতেই এই ইডি-অভিযান, মতান্তরে ষড়যন্ত্র। তাহাতেই বা কী? এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে, গণমাধ্যম-নিবিড় সময়ে ইডি আসিয়া অন্য কাহারও দায় মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁহার সহকর্মীদের স্কন্ধে চাপাইয়া দিবে, এমন আশঙ্কা নেহাত কষ্টকল্পনা। রাজ্য সরকারের বা শাসক দলের কোনও মন্ত্রী-নেতাই যে সারদা কাণ্ডে জড়িত নহেন, গত এক বৎসরে এই কথাটি তাঁহারা বহু বার জানাইয়াছেন। তবে আর ভয় কী? বরং, ভালই তো। সারদা-কাণ্ডের তদন্তভার স্পষ্টতই রাজ্য পুলিশের পক্ষে দুর্বহ, হয়তো বা অবহ। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল যদি সেই বোঝা লাঘব করিতে পারে, অপরাধীদের দ্রুত চিহ্নিত করিতে পারে, তবে শাসক দলেরই লাভ। তাঁহাদের নির্দোষ হইবার দাবির সত্যতা প্রমাণের এই সুবর্ণসুযোগে তাঁহারা চটিয়া উঠিলেন কেন? যে ভঙ্গিমায় তাঁহারা ইডি-র বিরোধিতা শুরু করিয়াছেন, তাহাতে দুর্জনের জিভ সুড়সুড় করিবে, বন্ধুদের বুক কাঁপিবে সত্যই এই দুর্যোগে নেতা-মন্ত্রীদের হাত নাই তো?

তবে, মুখ্যমন্ত্রী যে এই প্রথম ‘ষড়যন্ত্র’ খুঁজিয়া পাইলেন, তাহা নহে। গত তিন বৎসরে অনেক কিছুই তাঁহার ‘সাজানো’ বলিয়া বোধ হইয়াছে। ষড়যন্ত্রের শিকার হইবার হিমশীতল অনুভূতিটি সম্ভবত বাঙালির ডিএনএ-তে আছে। সেই কারণেই কি রাজনীতিতে নবাগত, দীর্ঘদিন কর্পোরেট দুনিয়ার অভিজ্ঞ কর্তা অমিত মিত্রও ষড়যন্ত্রের তত্ত্বে মাতিলেন? না কি, সকলই তাঁহারই ইচ্ছা? বামপন্থীরাও কেন্দ্রীয় বঞ্চনার ষড়যন্ত্র-তত্ত্বের আড়ালে নিজেদের ব্যর্থতা লুকাইতে পারদর্শী ছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বহু অর্থেই তাঁহাদের উত্তরসূরি। তবে, মনে হইলেও সব কথা বলিতে নাই। তাহাতে ভুল বার্তা পৌঁছায়। বিরোধী থাকাকালীন যে সিবিআই তদন্তের দাবিতে তিনি বহু বার সরব হইয়াছেন, আজ তাহাকেই চক্রান্ত ঠাওরাইলে দৃষ্টিকটু ঠেকে। তদন্তে সব সত্য জনসমক্ষে আসুক না। ক্ষতি কী? ভয়ই বা কীসের? ‘সাহস থাকিলে আমায় স্পর্শ করিয়া দেখুক’— এই সকল হুমকি তো বোধ করি টলিউডেও অধুনা অচল হইয়াছে।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy