Advertisement
E-Paper

ইচ্ছে + উদ্যোগ = গ্রিন করিডর

রোগী এবং হৃদযন্ত্রের মধ্যে দূরত্ব ছিল জ্যাম-জর্জর ৩২ কিলোমিটার। অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছল ২৯ মিনিটে। ভারতে।দক্ষিণ দিল্লির হাসপাতালে শুয়ে থাকা ছেলেটার খুব দরকার ছিল তরতাজা একটা হার্ট। পাওয়াও গেল, বত্রিশ কিলোমিটার দূরে গুড়গাঁওয়ের আর একটা হাসপাতালে। কিন্তু আনা হবে কী করে? দূরত্ব ওইটুকু হলেও সে যে অসম্ভব জ্যাম-জর্জর একটা রাস্তা! সহায় হল গুড়গাঁও-দিল্লি পুলিশ। হার্ট উঠল অ্যাম্বুলেন্সে, সামনে দুটো পাইলট কার আর বাইক।

শিশির রায়

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:০০

দক্ষিণ দিল্লির হাসপাতালে শুয়ে থাকা ছেলেটার খুব দরকার ছিল তরতাজা একটা হার্ট। পাওয়াও গেল, বত্রিশ কিলোমিটার দূরে গুড়গাঁওয়ের আর একটা হাসপাতালে। কিন্তু আনা হবে কী করে? দূরত্ব ওইটুকু হলেও সে যে অসম্ভব জ্যাম-জর্জর একটা রাস্তা! সহায় হল গুড়গাঁও-দিল্লি পুলিশ। হার্ট উঠল অ্যাম্বুলেন্সে, সামনে দুটো পাইলট কার আর বাইক। তত ক্ষণে ফোন চলে গেছে মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক সার্জেন্টদের কাছে। তাঁরা সব সিগনাল সবুজ করালেন, দাঁড়িয়ে থেকে নিশ্চিত করলেন অ্যাম্বুলেন্সের অবাধ-গতি। ব্যস্ত গাড়িবোঝাই রাস্তার মধ্য দিয়ে আশি, কখনও একশো কুড়ি কিলোমিটার বেগে ছুটে ঊনত্রিশ মিনিটে গন্তব্যে পৌঁছল গাড়ি। দুটো অপারেশনই সাকসেসফুল হয়েছিল।

ইউরোপ-আমেরিকায় নয়। এই ঘটনা ভারতেই ঘটছে। দিল্লির আগেও হয়েছে, গত বছর জুনে, চেন্নাইয়ে। বার বার ঘটতে থাকা ঘটনাই জ্বলজ্বলে প্রমাণ: চাইলে হয়। ‘অসাধ্য’ ট্যাগ ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কাজগুলো ঠিক করে ফেলা যায়, ‘অসম্ভব’ পরিস্থিতিও আনা যায় মুঠোয়। বছরভর না পড়ে পরীক্ষার আগের রাতে গোটা কেমিস্ট্রি বইটা পেড়ে ফেলার সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। সেটাও হার্ডল, কিন্তু ব্যক্তিগত। খাদের ধারে থাকা, মরিয়া মানুষ এক লাফে হার্ডল টপকে যেতেও পারে। কিন্তু যখন একটা সংকট-মুহূর্তের সঙ্গে অনেক মানুষ, অনেক যদি-কিন্তু-হয়তো জড়িয়ে থাকে, সেই চ্যালেঞ্জটা হাতে নিয়ে সেটা উতরোনো ঢের বেশি ধকের।

চাই শুধু কয়েকটা জিনিস। প্রথমেই যেমন চাই করবার ইচ্ছেটা। এই মুহূর্তে এই কাজটা না করলে হয়তো একটা মানুষ মরে যাবে, বা একটা পরিবার অপমানিত হবে, বা একটা জাতি তার হকের জিনিসটা পাবে না। তাই আমি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ছুটব, বাসভর্তি কেউ রা কাড়ছে না জেনেও একটা অন্যায়ের প্রতিবাদ করব, ফেসবুকে আমার জলজ্যান্ত ইচ্ছেটা লিখে কয়েক ঘণ্টায় বানিয়ে ফেলব ‘হোক কলরব’ বা ‘আমিই শার্লি’! ‘আমি সবার, সবের ভাল চাই’ ভাবলেই কিন্তু ভালটা ঘটে না। বিবেকানন্দ বলেছিলেন: গরু সচরাচর কারও অনিষ্ট করে না, কিন্তু চির কাল গরুই থাকে! সদিচ্ছাকে তাই ঠিক পথে গড়িয়ে দিতে হয়। গুড়গাঁওয়ের অ্যাম্বুলেন্স-চালক যেমন প্রথমেই ঠান্ডা মাথায় ভেবে ঠিক করে নিয়েছিলেন, এই এই রাস্তা দিয়ে আমি গন্তব্যে পৌঁছতে পারি, কিন্তু অমুক রুটটা আমার সংক্ষিপ্ততম পথ, ওই পথে গেলেই একমাত্র কাজটা ঠিক সময়ে হওয়া সম্ভব। আর ঠিক পথের সওয়ারি হলেই দেখবেন, সহৃদয় বন্ধুরাও এসে বাধাবিপত্তি সরাতে হাত লাগিয়েছে, আপনি একটার পর একটা ট্রাফিক সিগন্যাল পেরিয়ে যাচ্ছেন আর দেখছেন সব কী সবুজ কী সবুজ, রোজকার ঝঞ্ঝাটওলা রাস্তাটা হয়ে গেছে ‘গ্রিন করিডর’, শুধু আপনি একটা দারুণ অর্থবহ কাজ করার জন্য পথে নেমেছেন বলে!

post editorial sisir roy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy