Advertisement
০৪ জুন ২০২৪
সম্পাদকীয়

ঈশ্বরের বিপদ

ঈশ্বর বেচারিকে এখন ওভারটাইম খাটিতে হইতেছে। শ্রীনিবাসন মন্দিরে পূজা দিতেছেন, নিঃসন্দেহে সুব্রত রায়ের হিতৈষীরাও দিতেছেন, ধোনির আত্মীয়রাও অবশ্যই পিছাইয়া নাই। বহু বড় বড় মানুষ এই মুহূর্তে মহা গেরোয় ফাঁসিয়া আছেন। ইঁহারা প্রার্থনার সহিত ভেটও দিতেছেন নিশ্চয় বিশাল চুবড়ি ভরিয়া। ঈশ্বরকে ভাবিতে হইতেছে, ভক্তের আকুতিতে গলিবেন, নৈবেদ্যের আকার প্রকার দেখিয়া মজিবেন, না কি সত্য ও ন্যায়ের চুলচেরা বিশ্লেষণ করিয়া তাহার পর পক্ষ অবলম্বন করিবেন।

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৪ ০০:০১
Share: Save:

ঈশ্বর বেচারিকে এখন ওভারটাইম খাটিতে হইতেছে। শ্রীনিবাসন মন্দিরে পূজা দিতেছেন, নিঃসন্দেহে সুব্রত রায়ের হিতৈষীরাও দিতেছেন, ধোনির আত্মীয়রাও অবশ্যই পিছাইয়া নাই। বহু বড় বড় মানুষ এই মুহূর্তে মহা গেরোয় ফাঁসিয়া আছেন। ইঁহারা প্রার্থনার সহিত ভেটও দিতেছেন নিশ্চয় বিশাল চুবড়ি ভরিয়া। ঈশ্বরকে ভাবিতে হইতেছে, ভক্তের আকুতিতে গলিবেন, নৈবেদ্যের আকার প্রকার দেখিয়া মজিবেন, না কি সত্য ও ন্যায়ের চুলচেরা বিশ্লেষণ করিয়া তাহার পর পক্ষ অবলম্বন করিবেন। ইহার মধ্যেই আসিয়া পড়িয়াছে ভোটের ঋতু। প্রার্থনা করিবার মানুষ দ্বিগুণ ত্রিগুণ হইয়া গিয়াছে, ভক্তির প্লাবন সর্বত্র আছড়াইয়া পড়িতেছে। প্রার্থীরা জনগণের নিকট যত ভোট প্রার্থনা করিতেছেন, তাহার সহিত পাল্লা দিয়া মন্দির মসজিদ গির্জা দেখিলেই দৌড়াইয়া গিয়া প্রণাম ও পূজার ঘনঘটা রচিতেছেন। কমিউনিস্টরা অবশ্য এই তালিকা হইতে বাদ পড়িতেছেন, অন্তত প্রকাশ্যে। তাঁহারা নিশ্চয় বিষণ্ণ বদনে ভাবিতেছেন, এই বিধাতা ভদ্রলোকটির সুদৃষ্টি এবং তাঁহার চরণে প্রণত ভক্তকে দেখিয়া এই ধর্মপরায়ণ দেশের মানুষের যে সুদৃষ্টি, যুগপত্‌ সকল হইতেই বঞ্চিত হইয়া কেবল শুকনা আদর্শ-তরী বাহিতে গিয়া তাঁহাদের আজিকার এই দশা। অন্যেরা তত্ত্ব-রজ্জুতে আবদ্ধ নহেন, তাঁহারা সাক্ষাত্‌কারেও ফলাও করিয়া বলিতেছেন, কেহ অমুক দেবতার আশীর্বাদ ব্যতীত এক ইঞ্চিও চলিতে পারেন না, কেহ তমুক দেবীর চরণে জীবন ও ভোটাকাঙ্ক্ষা সকলই নিবেদন করিয়াছেন। গ্যালন গ্যালন ভক্তিবারিসিঞ্চিত এই পথে ঈশ্বরের পা সহসা হড়কাইয়া গেলে বিস্ময়ের কিছু নাই। তাঁহার নিকট জয় চাহিয়া পুরাণকালেও বীরগণ আর্জি জানাইতেন, কিন্তু এত জন প্রার্থী কলস্বরে এত দিক হইতে জয় চাহিলে, কর্ণ ও হৃদয় ঝালাপালা হইয়া তাঁহার দীপ্ত বিচারক্ষমতা বুঝভোম্বল রোগে আক্রান্ত হইতেই পারে।

ঈশ্বরের বৃহত্‌ সমস্যা: হাই-ভোল্টেজ প্রার্থনাকারীদের কাতরতা বাড়িতেছে। পূর্বে রাজা-রাজড়াগণ তাঁহার নিকট পরাজয় এড়াইতে প্রার্থনা করিতেন, কিন্তু সাধারণ মানুষের ছিছিক্কারের ভয় তাঁহাদের ছিল না। এখন মহামহিমগণ এক লহমায় গণমাধ্যমে ও সাধারণ মানসে ভিলেন প্রতিপন্ন হইয়া যাইতে পারেন, তিন মিনিটের মধ্যে ফেসবুকে বা টুইটারে তাঁহাদের নামে তির্যক ছড়া প্রচারিত হইয়া, বিশ মিনিটে আসমুদ্রহিমাচলব্যাপী প্রবচনে রূপান্তরিত হইতে পারে। জনগণের আদালত বড় বিষম বস্তু। ফলে মহাবলীরা হাঁটু ভাঙিয়া, ‘উদ্ধার করো’ মর্মে প্রাণপণ ডাক পাড়িতেছেন। ঈশ্বরের আর এক সমস্যা, ভোটের অঙ্গনে, তাঁহাকে একই কেন্দ্রের সকল যুযুধান পক্ষই জয়ের বাসনা জানাইতেছেন। গণতন্ত্রের নিয়মানুযায়ী, এক জন ব্যতীত অন্যদের প্রার্থনা পূরণ করিবার ক্ষমতা ঈশ্বরের নাই। ফল বাহির হইবার পর তাই পরাজিত পক্ষের প্রার্থীদের শাপশাপান্ত তাঁহাকে হজম করিতেই হইবে। আর এই হট্টগোলের স্তূপে তো চাপা পড়িয়া যাইবেই ঈশ্বরের সনাতন প্রশ্ন ও আক্ষেপ: কে বলিল, আমি রহিয়াছি প্রজাগণের চাহিদা পূরণের নিমিত্ত? নিজস্ব লীলা রচিবার জন্য এই অভাবনীয় বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ও তাহার অন্তর্গত সকলই সৃষ্টি করিয়াছি, তাহাদের নিরন্তর ভাঙিতেছি, গড়িতেছি। অমুক কেন্দ্রের অমুক প্রার্থী কত ভোট পাইবে, তমুক আদালত কী রায় দিবে, রাম-রহিম কেরানির গৃহসমীপস্থ নর্দমা পরিষ্কার হইবে কি না, তাহা লইয়া আমি মাথা ঘামাইব! আমাকে উপাসনা করিবি উন্নত সত্তা লাভের জন্য, হাতে-গরম বস্তুগত প্রাপ্তির জন্য নহে। মুশকিল হইল, কবি বলিয়াছেন, এক বার মানুষকে সৃষ্টি করিয়া ফেলিলে, তাহাকে মাথায় তুলিয়া রাখিতে ঈশ্বর বাধ্য, নহিলে তাঁহার প্রেম হইবে মিছে। আর ঈশ্বর নিজে নিজের সম্পর্কে যাহাই ধারণা করিয়া বসিয়া থাকুন, জীবনধারার ছাপ চেতনাকে গড়ে। এত দিন অপোগণ্ড অঙ্ক-পরীক্ষার্থীকে পাশ করাইয়া আসিয়া এখন কঠিন দর্শন আওড়াইলে চলিবে কেন?

য ত্‌ কি ঞ্চি ত্‌

‘সেল্ফি’-র ফ্যাশন এমন হিট, ডিম পাড়ছে হু-হু। খুব চলছিল ‘সেক্স সেল্ফি’ (সেক্সকালীন নিজের ছবি তুলে নেটওয়ার্কিং সাইটে ছড়িয়ে দেওয়া), এখন এল ‘আফটার সেক্স’ সেল্ফি। ‘ব্যক্তিগত’কে হাটে চড়ানোর তুঙ্গ-মজা হতে জীবনের অন্য ফিল্ড বাদ যাবে কেন, এ বার সেল্ফি তোলা হোক প্রাতঃকৃত্য চলার সময়, ব্যাংক লুট-মুহূর্তে, মা মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, ক্যানসার হয়েছে জানার দু’সেকেন্ডের মাথায়, প্রেমিকাকে খুন করার মোমেন্টে, নিজ গলায় দড়ি গলিয়ে...

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

editorial
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE