Advertisement
E-Paper

ঋণং কৃত্বা

অমিত মিত্র মহাশয় বিরোধীদের প্রশ্নের উত্তরে পরিসংখ্যান পেশ করিতেছেন, এমন ঘটনা পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় প্রাত্যহিক নহে। বাম-বিজেপির সম্মিলিত আক্রমণে মিত্রমহাশয়ের বুঝি ধৈর্যচ্যুতি হইল। বাম আমলের যে ‘পাপের বোঝা’ তাঁহাকে ন্যূব্জ করিয়া ফেলিয়াছে, সেই বোঝার ভিতরকার হিসাবনিকাশ তিনি বিরোধীদের শুনাইয়া দিলেন।

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৫ ০০:০০

অমিত মিত্র মহাশয় বিরোধীদের প্রশ্নের উত্তরে পরিসংখ্যান পেশ করিতেছেন, এমন ঘটনা পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় প্রাত্যহিক নহে। বাম-বিজেপির সম্মিলিত আক্রমণে মিত্রমহাশয়ের বুঝি ধৈর্যচ্যুতি হইল। বাম আমলের যে ‘পাপের বোঝা’ তাঁহাকে ন্যূব্জ করিয়া ফেলিয়াছে, সেই বোঝার ভিতরকার হিসাবনিকাশ তিনি বিরোধীদের শুনাইয়া দিলেন। এই বত্‌সর ৩১ মার্চে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়াইবে ২.৭৫ লক্ষ কোটি টাকা। তাহার মধ্যে ৮২,৯৬৪ কোটি টাকা তৃণমূল কংগ্রেস জমানায় ধার করা হইয়াছে। অর্থমন্ত্রী বলিয়াছেন, সেই টাকার সিংহভাগ বাম আমলের ঋণ পরিশোধেই গিয়াছে। তিনি ২৬,০০৯ কোটি টাকা মূলধন শুধিয়াছেন, আর ৫০,৩৩৭ কোটি টাকা সুদ গনিয়া দিয়াছেন। অর্থমন্ত্রী নিশ্চিত, এই হিসাব দেখিবার পর কাহারও মনে আর কোনও প্রশ্ন থাকিবে না। তাঁহার মনেও নাই। নচেত্‌, ভাবিয়া দেখিতেন, বাম সরকার এত টাকা ধার করিয়া কী করিল? ক্লাবে-ক্লাবে টাকা বিলি হয় নাই, ইমামদেরও ভাতা দেওয়া হয় নাই। তবে, ঋণের টাকা গেল কোথায়? সেই হিসাবটি এক বার দেখিলে হইত। যদি দেখা যাইত, টাকা সত্যই উন্নয়নের খাতে খরচ হইয়াছে, তবে আর মনোযাতনা থাকিবার কথা নহে। এইটুকু অন্তত জানিবেন, যে টাকা তাঁহারা শুধিতেছেন, তাহা নয়ছয় হয় নাই। হিসাবটি এক বার কষিয়া দেখিলে হইত না?

তৃণমূলের সর্বাধিনায়িকা মহাকরণ দখল করা ইস্তক বাম জমানার ঋণ লইয়া অভিযোগ করিয়া চলিতেছেন। পূর্বতন সরকারের নীতি এবং কার্যকলাপের সমালোচনা করা গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু, অভিযোগ করা এক জিনিস, আর সেই দায়ের বোঝা অস্বীকার করা আর এক। পূর্বসূরির উত্তরাধিকার বহন করাও কিন্তু গণতান্ত্রিক কর্তব্য। কাজেই, বাম জমানার এই ঋণ বঙ্গেশ্বরীর অনস্বীকার্য বাস্তব। ভোটে জিতিয়া শক্তিশেল খাইলেন তিনি, আর বিশল্যকরণী আনিতে কেন্দ্রীয় সরকার এক লাফে সমুদ্র পার করিবে, এতখানি রামরাজত্বের আশা কিঞ্চিত্‌ বাড়াবাড়ি। ইউপিএ তাঁহার ঋণের বোঝা লাঘব করে নাই। নরেন্দ্র মোদীও নহেন। চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশেও সেই ব্যবস্থা হইল না দেখিয়া বঙ্গেশ্বরীর মনে আঘাত লাগিয়াছে। কোনও ট্রাফিক সিগনালে কি তিনি কখনও শোনেন নাই, ‘বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা’? ঋণের বাস্তবটি মানিয়া তাহার সমাধানের চেষ্টা করাই কি উচিত ছিল না? অবশ্য, সেই কাজ শুধু রাজনীতিতে হইবার নহে। তাহার জন্য অর্থনীতি নামক বিষয়টির দ্বারস্থ হইতেই হয়।

ঋণ শোধ করিবার কাজটি কখনও চিত্তাকর্ষক নহে। বিশেষত, যে ঋণের অর্থ অন্য কেহ ব্যয় করিয়াছে, তাহার কিস্তি মেটানো আরও দুঃসহ। কিন্তু, দায়টি যখন ঝাড়িয়া ফেলিবার উপায় নাই, তখন ব্যাঙটি গোড়াতেই গিলিয়া ফেলা উচিত ছিল। বঙ্গেশ্বরী রাজস্ব বৃদ্ধির দিকে নজর দিতে পারিতেন। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলিয়াছেন, টাকার এমন বিপুল অভাব সত্ত্বেও তিনি জমি না ছাড়িবার জেদটি আঁকড়াইয়া আছেন কেন? রাজ্যে শিল্প আসিলে রাজস্ব বাড়িত। সরকারের হাতে টাকা আসিলে ঋণ শোধ করিতে কম কষ্ট হইত। এমনিতেও, রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ একেবারে পিছনের সারিতে। অন্য দিকে, এই সরকারের অবান্তর ব্যয় সীমাহীন। যাঁহাদের স্কন্ধে এমন ঋণের বোঝা, তাঁহাদের কি এই রূপ অবিমৃশ্যকারিতা মানায়? গত চার বত্‌সরে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কী করিল, এই প্রশ্নের উত্তর মিত্রমহাশয় বা তাঁহার মহানায়িকা দেন নাই। অবশ্য, উত্তরের প্রয়োজন নাই। সত্যই কিছু করিলে আজ আর ঋণের বোঝা লইয়া এত অভিযোগের প্রয়োজন থাকিত না।

anandabazar editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy