Advertisement
E-Paper

একান্ত ব্যক্তিগত

ভারতীয় জনতা পার্টি একই সঙ্গে ঠিক এবং ভুল। ধর্মান্তরের অধিকার স্বীকার করিলে তাহা যে প্রতিটি ধর্মের ক্ষেত্রেই স্বীকার করা বিধেয়, এই কথাটিতে দ্বিমত হইবার অবকাশ নাই। সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরুর সূক্ষ্মবিচার এ ক্ষেত্রে অবান্তর। নিজের ধর্ম চয়ন এবং অনুশীলনের অধিকার মৌলিক, সংবিধানস্বীকৃত।

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০১

ভারতীয় জনতা পার্টি একই সঙ্গে ঠিক এবং ভুল। ধর্মান্তরের অধিকার স্বীকার করিলে তাহা যে প্রতিটি ধর্মের ক্ষেত্রেই স্বীকার করা বিধেয়, এই কথাটিতে দ্বিমত হইবার অবকাশ নাই। সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরুর সূক্ষ্মবিচার এ ক্ষেত্রে অবান্তর। নিজের ধর্ম চয়ন এবং অনুশীলনের অধিকার মৌলিক, সংবিধানস্বীকৃত। বেঙ্কাইয়া নাইডু, অমিত শাহরা সেই অধিকারের কথা স্মরণ করাইয়াই তাহাকে ছাঁটিয়া ফেলিবার প্রস্তাব করিয়াছেন। এইখানেই তাঁহারা সম্পূর্ণ ভুল। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে নাগরিকের ধর্মাচরণের পরিসরে রাষ্ট্রের প্রয়োজন নাই। আইনেরও নহে। নাইডু দেশে, এবং প্রতিটি রাজ্যে, ধর্মান্তর নিষিদ্ধ করিবার আইনের প্রস্তাব করিয়াছেন। শাহ বিরোধী দলগুলিকে ধর্মান্তরবিরোধী আইন প্রণয়নে সমর্থনের জন্য চ্যালেঞ্জ করিয়াছেন। অথচ ১৯৬৭ হইতে ২০০৮, এই ৪১ বৎসরে ওড়িশা হইতে রাজস্থান, যে আটটি রাজ্যে এমন আইন তৈরি হইয়াছে, সেগুলি বিলোপ করিবার কথা বলা উচিত ছিল। বিজেপি তাহা বলে নাই। বলিবার উপায় নাই। রাজনীতির জ্বালা অনেক।

প্রশ্ন উঠিবে, কেহ যদি কাহাকেও বলপূর্বক ধর্মান্তর করিতে চাহে, তাহা ঠেকাইবার উপায় কী? উপায়টির নাম ভারতীয় দণ্ডবিধি। ধর্মাচরণ নাগরিকের মৌলিক অধিকার। কেহ সেই অধিকারে হস্তক্ষেপ করিলে পুলিশ, আদালত তাহার বিধান করিবে। তাহার জন্য নূতন আইন চাপাইয়া দেওয়ার প্রয়োজন নাই। কিন্তু, লোভ দেখাইয়া ধর্মান্তর করিলে তাহার নিদান দণ্ডবিধিতে নাই। থাকিবার প্রয়োজনও নাই। ঐতিহাসিক ভাবে যত ধর্মান্তর হইয়াছে, তাহার এক বড় অংশেরই চালিকাশক্তি ছিল প্রলোভন। কোথাও অর্থের, কোথাও শিক্ষার, কোথাও সামাজিক স্বীকৃতির। তাহা দোষের নহে। ধর্ম ব্যক্তিগত। তাহা পরিবর্তন করিলে যদি কোনও ঐহিক প্রাপ্তি ঘটে, তাহাও ব্যক্তিগত। এমনকী গোষ্ঠীগত ধর্মান্তরের ক্ষেত্রেও শেষ বিচারে ব্যক্তিই সত্য, কারণ গোষ্ঠী অনেক ব্যক্তির সমন্বয়। যাহার নিকট ধর্মান্তর লাভজনক ঠেকিবে, তিনি ধর্ম পাল্টাইবেন। তাহাতে রাষ্ট্রীয় আপত্তির অবকাশ নাই। আগরায় যে জনগোষ্ঠীর হিন্দুধর্ম গ্রহণ লইয়া বর্তমান তর্কের সূচনা, অভিযোগ— তাঁহাদের ধর্মান্তরের প্রকৃত কারণ রেশন কার্ড লাভ। তাঁহারা নিজ ধর্ম অপেক্ষা রেশন কার্ডকে অধিক জরুরি বোধ করেন কি না, তাহা একান্তই তাঁহাদের বিবেচ্য। সরকার বরং ভাবুক, এখনও কেন সকল দরিদ্র মানুষের হাতে রেশন কার্ড পৌঁছায় নাই। ধর্মান্তর রুখিবার পরিবর্তে দারিদ্র দূর করিবার পথ সন্ধান করা অনেক বেশি জরুরি। ধর্ম নহে, দারিদ্রই সমস্যা। সংসদের কক্ষে এই কথাটি কেহই উচ্চারণ করেন না।

ধর্মান্তর আলোচ্য, কিন্তু তাহার পিছনে থাকা তীব্র দারিদ্র নহে— ইহা ভারতীয় রাজনীতির ছবিটি স্পষ্ট করিয়া দেয়। রাজ্যসভার অধিবেশনেও সেই ছবিটিই দৃশ্যমান। সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতির অভাবনীয় মন্তব্যের ধাক্কায় অচল উচ্চকক্ষ ফের ধর্মান্তরের অলীক তর্কের প্যাঁচে পড়িয়া থমকাইয়া দাঁড়াইল। দেশের উচ্চতম আইনসভা অচল হইয়া থাকা অগ্রহণযোগ্য। আর, এমন সম্পূর্ণ অবান্তর প্রসঙ্গে তো বটেই। যে সময় ও শ্রম সংস্কার বা উন্নয়নের প্রশ্নে ব্যয় করিবার কথা, ভারত কি তাহা (অ)ধর্মের কুনাট্যে অপচয় করিবে? প্রশ্নটি প্রধানমন্ত্রীর নিকট। তিনি দেশের প্রশাসনিক প্রধান বলিয়া; এবং তিনি দেশবাসীকে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখাইয়াছেন বলিয়াও বটে। ভারত কোন পথে হাঁটিবে, তাহা তিনি স্থির করিবেন। উন্নয়ন চাহিলে তাহা স্পষ্ট করিয়া বলিতে হইবে। তিনি তাঁহার দলকে নিয়ন্ত্রণ করুন। সাক্ষী মহারাজদের বুঝাইয়া দিন, একুশ শতকে তাঁহাদের ঠাঁই নাই। ধর্মান্তরের বর্তমান প্রসঙ্গ হইতেই এই সংস্কারের কাজ আরম্ভ হউক। তাঁহার দলের অথবা বিরোধী শিবিরের একাংশের মনের অন্ধকার ভারতটিকে দূর না করিতে পারিলে প্রতিশ্রুত নূতন ভারত নির্মাণ অসম্ভব।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy