Advertisement
E-Paper

একঘরে, তাই মরিয়া?

জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভার ভোটগণনার ৪৮ ঘণ্টা আগে মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা সহসা কেন্দ্রে গদিচ্যুত ইউপিএ সরকারের সমালোচনা করিলেন এই বলিয়া যে, ওই সরকার অটলবিহারী বাজপেয়ীকে ভারতরত্ন উপাধিতে ভূষিত না করিয়া রাজনৈতিক সংকীর্ণতার পরিচয় দিয়াছে। ওমর আবদুল্লার ন্যাশনাল কমফরেন্স দল ইউপিএ জোট আনুষ্ঠানিক ভাবে ছাড়িয়াছে কি না, এখনও স্পষ্ট নয়।

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০১

জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভার ভোটগণনার ৪৮ ঘণ্টা আগে মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা সহসা কেন্দ্রে গদিচ্যুত ইউপিএ সরকারের সমালোচনা করিলেন এই বলিয়া যে, ওই সরকার অটলবিহারী বাজপেয়ীকে ভারতরত্ন উপাধিতে ভূষিত না করিয়া রাজনৈতিক সংকীর্ণতার পরিচয় দিয়াছে। ওমর আবদুল্লার ন্যাশনাল কমফরেন্স দল ইউপিএ জোট আনুষ্ঠানিক ভাবে ছাড়িয়াছে কি না, এখনও স্পষ্ট নয়। তথাপি তিনি যে আগ বাড়াইয়া বাজপেয়ীর জন্য ভারতরত্নের সওয়াল করিলেন, তাহার পিছনে কেন্দ্রের বর্তমান শাসক দল এবং রাজ্যে শাসনক্ষমতার অভিমুখী বিজেপিকে তুষ্ট করার অভিপ্রায় স্পষ্ট। আর সেই অভিপ্রায়ের নেপথ্যে রহিয়াছে রাজ্য-রাজনীতিতে দ্রুত জনপ্রিয়তা হারানো এবং অপ্রাসঙ্গিক হইয়া পড়ার শঙ্কা। সদ্য-সমাপ্ত নির্বাচনের বুথফেরত সমীক্ষার পূর্বাভাস: ওমর আবদুল্লার দল কার্যত নিশ্চিহ্ন হইতে চলিয়াছে এবং একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে পিডিপি-র উঠিয়া আসার সম্ভাবনা। ওমর স্বভাবতই মরিয়া। এখন ডুবন্ত মানুষের মতো খড়কুটা আশ্রয় করিয়াও বাঁচিবার আকুতি।

প্রায় সমসময়ে পূর্ব ভারতের রাজনৈতিক দল তৃণমূল কংগ্রেসকেও দেখা যাইতেছে তামিলনাড়ুতে এমডিএমকে-র নেতা ভাইকো-র কেন্দ্রবিরোধী সমাবেশে যোগ দিতে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে পাঠাইতে। সংসদে ভাইকো-র এক জন সাংসদও নির্বাচিত হইতে পারেন নাই। তামিলনাড়ুর রাজনীতিতেও তিনি একটি অতিশয় প্রান্তিক শক্তি। তথাপি বিজেপি-বিরোধী সমাবেশের আয়োজন করিয়াছেন বলিয়াই তাঁহার সভায় দলের মহাসচিবকে প্রেরণের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিঃসঙ্গতাপ্রসূত মরিয়া ভাবটিই স্পষ্ট। ভাইকোকে লইয়া তিনি কী করিবেন? ভাইকো শ্রীলঙ্কার তামিলদের প্রতি ভারত সরকারের মনোভাব ও অবস্থানের বাহিরে অন্য কোনও বিষয় চর্চা করেন না। আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতিতে শ্রীলঙ্কাবাসী তামিলদের বিষয়ে কোনও মাথাব্যথা নাই, মহিন্দা রাজাপক্ষে সরকারের তামিল নীতি লইয়াও তিনি কখনও ভাবিত ছিলেন, মনে পড়ে না। তথাপি তাঁহার এই ভাইকো-বন্দনা স্পষ্টতই জাতীয় রাজনীতিতে বর্তমান একঘরে দশা হইতে বাহির হইতে মিত্র-অন্বেষণের তাগিদই দেখাইয়া দেয়। ইতিপূর্বে এনডিএ-বিরোধী ‘ফেডারেল ফ্রন্ট’ গড়িতে তাঁহার প্রস্তাব বিশেষ সমাদৃত হয় নাই। বর্তমানে ‘জনতা পরিবার’ যন্তরমন্তরে যে মোদী-বিরোধী বিক্ষোভ-ধর্না করিতেছে, মমতা তাহাতেও প্রতিনিধি পাঠাইয়া প্রতীকী যোগদানে সচেষ্ট। কিন্তু সংসদ-ভবনের ভিতরে ও বাহিরে সারদা কেলেংকারিতে জড়িত থাকার অভিযোগ খণ্ডনে দলীয় সাংসদদের ধর্না অন্য দলকে আকৃষ্ট করে নাই। এই নিঃসঙ্গতা দূর করিতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতস্তত অশ্বমেধের ঘোড়া পাঠাইতেছেন।

রাজনীতিকদের জনপ্রিয়তা ও ভাবমূর্তি যখন প্রশ্নলাঞ্ছিত হইয়া পড়ে, তাঁহাদের সততা হয় সংশয়কণ্টকিত, গণভিত্তি দ্রুত আল্গা হইতে থাকে, তখনই তাঁহারা যাঁহাকে পান কাছে টানিয়া দল ভারী করিতে উদ্যত হন। ওমর আবদুল্লা ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কি সেই কারণেই এত অসহায় দেখাইতেছে? মরিয়া জোট গড়ার প্রয়াসে কি সেই অসহায়তার প্রতিফলন? এই ধরনের জোট কেবল সংকীর্ণ সুবিধাবাদ নয়, ক্ষণপ্রভ এবং নষ্টপরমায়ু, যাহা অচিরেই আপন প্রাসঙ্গিকতা হারাইয়া ফেলে। আপন দুর্গ রক্ষা করিতে না পারিলে রাজনীতির যুদ্ধে জয়ী হওয়া দুষ্কর।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy