Advertisement
E-Paper

কমিটির পরে

কমিটি গড়িয়া যে আগুন রোখা যায় না, এই কথাটি কলিকাতার প্রাক্তন মেয়র এবং বর্তমান পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানাইয়া দিলেন। মধ্য কলিকাতার চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনাল নামক বহুতলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার ঠিক পরেই যথাবিহিত অগ্নি-নিরাপত্তা বিধানের উদ্দেশ্যে এক সুবৃহৎ কমিটি গড়িয়া দেওয়া হইয়াছে। সেই প্রেক্ষিতে সুব্রতবাবুর এই তির্যক উক্তি। তাঁহার মন্তব্য সত্যানুসারী।

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:০১

কমিটি গড়িয়া যে আগুন রোখা যায় না, এই কথাটি কলিকাতার প্রাক্তন মেয়র এবং বর্তমান পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানাইয়া দিলেন। মধ্য কলিকাতার চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনাল নামক বহুতলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার ঠিক পরেই যথাবিহিত অগ্নি-নিরাপত্তা বিধানের উদ্দেশ্যে এক সুবৃহৎ কমিটি গড়িয়া দেওয়া হইয়াছে। সেই প্রেক্ষিতে সুব্রতবাবুর এই তির্যক উক্তি। তাঁহার মন্তব্য সত্যানুসারী। এই ধরনের কমিটি অগ্নি-নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করিতে যে সকল সুপারিশ করে, সেগুলি কার্যকর করার কোনও লক্ষণ পুর-কর্তৃপক্ষ প্রায়শই দেখায় না। যেমন স্টিফেন কোর্টের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর গঠিত কমিটি শহরের ৪২টি বিপজ্জনক বাড়ির তালিকা দিয়া জানাইয়াছিল, এগুলি কার্যত এক একটি জতুগৃহ, কেননা কোনও রকম ন্যূনতম অগ্নি-বিধি ইহারা মানে নাই। অতএব অবিলম্বে তাহা মানানোর জন্য চাপ দেওয়া হউক, অন্যথায় বাড়িগুলি হইতে ব্যবসায়পত্র চালানো নিষিদ্ধ করা হউক। অথচ পুর-কর্তৃপক্ষ সেই সুপারিশ শিরোধার্য করে নাই। প্রাক্তন মেয়র এই দিকেই ইঙ্গিত করিয়াছেন।

তাঁহার বক্তব্য বর্তমান মেয়রের পছন্দ হয় নাই। তিনি তাই প্রসঙ্গটি এড়াইতে চাহিয়াছেন। আগের কমিটির সুপারিশ কেন মানা হয় নাই, তাহার উত্তরে অবশ্য মেয়র ‘মানবিকতা’র দোহাই দিয়া বলিয়াছেন, ওই সব বিপজ্জনক বহুতলে যাঁহারা ব্যবসা করেন, তাঁহাদের ক্ষতি হইতেছিল, তাই শর্তসাপেক্ষে তাঁহাদের লাইসেন্স মঞ্জুর করা হয়। শর্তগুলি কী, তাহা অবশ্য মেয়র খোলসা করেন নাই। তবে অগ্নিবিধি না-মানা ওই সব ব্যবসায়ীর ছাড়পত্র রদ করায় পুরসভার যে বিলক্ষণ আয় কমিতেছিল, তাহা কবুল করিয়াছেন। তবে কি (পুরসভার) আয় বৃদ্ধির স্বার্থটিই সেই মানবিক স্বার্থ, যাহা সিদ্ধ করিতে মেয়র বিধি-লঙ্ঘনকারী ব্যবসায়ীদের ছাড়পত্র মঞ্জুরে এত তৎপর হইলেন? মেয়রের এই বক্তব্য ও যুক্তি কিন্তু দমকল বিভাগের কর্তাদের বিচারেও গ্রহণযোগ্য হয় নাই। তাঁহারা স্পষ্টই জানাইয়াছেন, ১৯৫০ সালে প্রণীত অগ্নি-বিধি অনুযায়ী শর্তসাপেক্ষে কোনও লাইসেন্স নবীকরণ করা যায় না। তেমন কোনও ধারাই বিধিতে নাই। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে স্বয়ং মহানাগরিকই বিধি লঙ্ঘন করিয়াছেন। বিপদ যেখানে অগ্নিকাণ্ডের এবং তাহার পরিণাম যে বহু মানুষের সর্বনাশ ডাকিয়া আনিতে পারে, তাহা জানিয়াও তিনি কেমন করিয়া ব্যবসায়ীদের মানবিক স্বার্থে নাগরিকদের বিপদের মুখে ঠেলিয়া দিলেন, তাহার জবাবদিহিও মহানাগরিককেই করিতে হইবে।

এমনও হইতে পারে যে, আগের কমিটি যেহেতু বামফ্রন্টের আমলে গঠিত, তাই সেই কমিটির সুপারিশ তিনি ইচ্ছাকৃত ভাবেই অগ্রাহ্য করিয়াছেন। লাইসেন্স কাড়িয়া লওয়ায় তিন বছর ধরিয়া লোকসানের ভারে বিপর্যস্ত ব্যবসায়ীদের নিজেদের দিকে টানিয়া আনার রাজনৈতিক লক্ষ্যও তাহাতে সাধিত হইয়া থাকিতে পারে। দমকলমন্ত্রী বলিয়াছেন বটে, তাঁহার দফতরের অনুমতি ছাড়া কোনও ব্যবসায় করা যাইবে না, কিন্তু শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নিকট তাঁহার মূল্য কি মেয়রের সমতুল? তাঁহার দফতরকে অগ্রাহ্য করিয়াই অগ্নিবিধি লঙ্ঘনকারী ব্যবসায়ীদের মানবিক কারণে পুরসভার লাইসেন্স দেওয়া অব্যাহত থাকিবে, এমন আশঙ্কা অতএব উড়াইয়া দেওয়া কঠিন। ইতিমধ্যে অলিতে-গলিতে বহুতল গড়ার আইন হইয়া গিয়াছে, যাহাদের নিকট মোটা অঙ্কের লাইসেন্স ফি ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক নজরানা আদায় করা হইবে। জরিমানা আদায় করিয়া বেআইনি বহুতলকে আইনসম্মত করার পাকা বন্দোবস্তও চালু হইয়াছে। এই বাজারে কে আর অগ্নিবিধি লইয়া মাথা ঘামায়? দমকলমন্ত্রীকে অতএব বোধহয় এক বার পুর দফতরে, এক বার নির্মীয়মাণ বহুতলে ছোটাছুটি করিয়াই ফিরিতে হইবে। দমকলের মতোই।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy