Advertisement
E-Paper

গজেন্দ্রগামিনী

এক, চিনের নাগরিকরা ভারতীয় দূতাবাসে ইলেকট্রনিক ভিসার জন্য আবেদন করিতে পারিবেন। দুই, ভারত এবং চিনের মধ্যে ২২০০ কোটি ডলার মূল্যের নূতন ব্যবসায়িক লেনদেন হইবে। নরেন্দ্র মোদীর চিন সফর হইতে স্পর্শগ্রাহ্য প্রাপ্তি বলিতে মোটের উপর এই দুইটি। বিরোধীরা এই সফরকে ‘ব্যর্থ ও হতাশাজনক’ ঘোষণা করিবেন, স্বাভাবিক। কিন্তু সেই ঘোষণা বিরোধী রাজনীতির গতে বাঁধা, কার্যত প্রতিবর্ত ক্রিয়া, তাহার অন্তঃসার শূন্য।

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৫ ০০:০১

এক, চিনের নাগরিকরা ভারতীয় দূতাবাসে ইলেকট্রনিক ভিসার জন্য আবেদন করিতে পারিবেন। দুই, ভারত এবং চিনের মধ্যে ২২০০ কোটি ডলার মূল্যের নূতন ব্যবসায়িক লেনদেন হইবে। নরেন্দ্র মোদীর চিন সফর হইতে স্পর্শগ্রাহ্য প্রাপ্তি বলিতে মোটের উপর এই দুইটি। বিরোধীরা এই সফরকে ‘ব্যর্থ ও হতাশাজনক’ ঘোষণা করিবেন, স্বাভাবিক। কিন্তু সেই ঘোষণা বিরোধী রাজনীতির গতে বাঁধা, কার্যত প্রতিবর্ত ক্রিয়া, তাহার অন্তঃসার শূন্য। আশা না থাকিলে হতাশ হইবার প্রশ্ন ওঠে না। এই যাত্রায় প্রধানমন্ত্রীর ‘সফল’ হইবার কিছু ছিল না, সুতরাং ব্যর্থতাও অপ্রাসঙ্গিক। তবে কি এই সফরের প্রয়োজন ছিল না, তাত্‌পর্যও নাই? অবশ্যই ছিল এবং আছে। দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সম্পর্কে দীর্ঘমেয়াদি বিবর্তন ঘটিতেছে। আশির দশকে প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধীর চিন-যাত্রা এবং তং শিয়াও ফিংয়ের সহিত ‘ঐতিহাসিক’ করমর্দনের পরে প্রায় তিন দশক অতিক্রান্ত। এই তিন দশকে চিনের অর্থনীতি ও সমাজের বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটিয়াছে, যে বিপ্লব মাও ত্‌সে তুংয়ের ধারণাতীত ছিল। ভারতের রূপান্তর তাহার তুলনায় কম হইলেও চমকপ্রদ। কিন্তু কূটনীতি, বিশেষত এই দুই দেশের, স্বভাবত গজেন্দ্রগামিনী। গত সেপ্টেম্বরে চিনের নায়ক শি চিনফিংয়ের ভারত সফরের কালে সীমান্তে অশান্তি কিঞ্চিৎ ছায়া ফেলিয়াছিল, চিনে মোদীর তিন দিন সেই তুলনায় নির্বিবাদ কাটিয়াছে। কোনও ঘটনা ঘটে নাই, তাহা গৌণ। মুখ্য ইহাই যে, কোনও অঘটন ঘটে নাই।

চিন-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাটি সীমান্ত সংক্রান্ত। পশ্চিম এবং পূর্ব, দুই দিকেই স্থিতাবস্থাকে মানিয়া লইলে সমাধান সম্ভব, বস্তুত সহজ। কিন্তু গত এক দশকে সেই সহজ সমাধানের বাস্তব সম্ভাবনা কমিয়াছে, কারণ অরুণাচল প্রদেশের উপর দাবি জানাইতে চিনের নায়করা নূতন করিয়া তৎপর হইয়াছেন। এই দাবির প্রকৃত সংকেতটি কূটনৈতিক। চিনা কমিউনিস্ট পার্টি সাম্প্রতিক কালে বিভিন্ন এলাকায় সে দেশের পুরানো অধিকারের দাবি জানাইতে, এমনকী এলাকাগুলি দখল করিতে নূতন করিয়া তৎপর হইয়াছে। প্রসঙ্গত স্মরণে রাখা ভাল, সাম্প্রতিক কালে ইসলামাবাদের সহিতও বেজিং ঘনিষ্ঠতা বাড়াইতেছে। ভারতের সহিত ভূ-রাজনৈতিক সম্পর্কে তাহা তাৎপর্যপূর্ণ। অরুণাচল প্রদেশ ‘দখল’-এর প্রশ্ন ওঠে না, কিন্তু এ ক্ষেত্রেও চিনা কূটনীতি অতীতের তুলনায় আগ্রাসী হইলে বিস্ময়ের কিছু নাই। এই প্রেক্ষিতে নরেন্দ্র মোদী দিল্লির দরবারে অধিষ্ঠিত হইবার পর হইতে ভারত তাহার কূটনৈতিক উচ্চারণে চিনের প্রতি কিছুটা কঠোর। বারাক ওবামার সহিত নরেন্দ্র মোদীর যৌথ বিবৃতিতে চিনের ‘সম্প্রসারণবাদী’ নীতির সমালোচনা বেজিংয়ের নেতাদের কুপিত করিয়াছিল, কিন্তু তাহার পরেও এ বারের সফরে মোদী দুই দেশের মধ্যে ‘বিশ্বাসের অভাব’-এর কথা উল্লেখ করিয়া বুঝাইয়াছেন, তিনি কড়া চাল চালিতে জানেন।

তবে তাহার প্রকৃত মূল্য আপাতত যৎসামান্য। চিনের সহিত ভারতের প্রতিদ্বন্দ্ব দীর্ঘমেয়াদি। আপাতত ভারতের কাজ একটিই। আপন অর্থনৈতিক শক্তি ও সামর্থ্য বৃদ্ধিতে মনোনিবেশ করা। সামরিক শক্তির প্রসারও নিশ্চয়ই জরুরি, কারণ চিনের সমরসজ্জা ভারত অপেক্ষা বহুগুণ বেশি এবং তাহার বৃদ্ধিও ঘটিতেছে অনেক বেশি দ্রুত গতিতে। কিন্তু, খালি পকেটে প্রতিরক্ষা হয় না। এই অর্থনৈতিক শক্তি অর্জনের অভিযানে চিনের সহিত ভারতের প্রতিযোগিতা আছে, কিন্তু সেই প্রতিযোগিতা সহযোগিতাকে বাদ দিয়া নহে। বস্তুত অর্থনীতির দুনিয়ায় প্রতিযোগীরাই প্রকৃত সহযোগী। এই প্রেক্ষিতেই মোদীর সফরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রসারের চুক্তিগুলি গুরুত্বপূর্ণ। যাত্রা সফল না হইতে পারে, নিষ্ফলও হয় নাই।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy