Advertisement
E-Paper

গণতন্ত্রে অন্তর্ঘাত

তাইল্যান্ডে সেনাবাহিনী সামরিক আইন জারি করিয়াছে। দেশে ‘শান্তিশৃঙ্খলা’ রক্ষার স্বার্থেই এই জঙ্গি আইন জারি করিতে নাকি তাহারা বাধ্য হইয়াছে। কিন্তু ১৯১৪ সালে প্রণীত এই আইন বলে দেশের সেনাপ্রধান নির্বাচিত কিংবা মনোনীত প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি ছাড়াই দেশ শাসন করিতে পারিবেন, যাহাকে খুশি ‘দেশের শত্রু’ শনাক্ত করিয়া গ্রেফতার করিতে, জিজ্ঞাসাবাদ করিতে, তাহার ঘরবাড়ি ভাঙিয়া দিতে পারিবেন, সরকারি যানবাহনের যাতায়াত নিষিদ্ধ করিতে পারিবেন, দেশবাসীকে সামরিক প্রশিক্ষণ লইতে বাধ্য করিতে পারিবেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করিতে পারিবেন।

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৪ ০০:০৮

তাইল্যান্ডে সেনাবাহিনী সামরিক আইন জারি করিয়াছে। দেশে ‘শান্তিশৃঙ্খলা’ রক্ষার স্বার্থেই এই জঙ্গি আইন জারি করিতে নাকি তাহারা বাধ্য হইয়াছে। কিন্তু ১৯১৪ সালে প্রণীত এই আইন বলে দেশের সেনাপ্রধান নির্বাচিত কিংবা মনোনীত প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি ছাড়াই দেশ শাসন করিতে পারিবেন, যাহাকে খুশি ‘দেশের শত্রু’ শনাক্ত করিয়া গ্রেফতার করিতে, জিজ্ঞাসাবাদ করিতে, তাহার ঘরবাড়ি ভাঙিয়া দিতে পারিবেন, সরকারি যানবাহনের যাতায়াত নিষিদ্ধ করিতে পারিবেন, দেশবাসীকে সামরিক প্রশিক্ষণ লইতে বাধ্য করিতে পারিবেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করিতে পারিবেন। বস্তুত, ইতিমধ্যেই সেনাবাহিনী সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা কাড়িয়া লইয়াছে, রাজধানীর প্রধান সড়কগুলির দখলও সম্পূর্ণ। তথাপি ইহাকে সামরিক অভ্যুত্থান বলা হইতেছে না, ‘জাতীয় নিরাপত্তা’র স্বার্থে সেনাবাহিনীর মৃদু হস্তক্ষেপ রূপে বর্ণনা করা হইতেছে।

১৯৩২ সালে রাজতন্ত্রের নিরঙ্কুশ ও একচ্ছত্র আধিপত্যের অবসানের পর হইতে গত এগারো দশকে এগারো বার তাইল্যান্ডে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়াছে, সুতরাং মনে হইতে পারে, শান্তিরক্ষার জন্য নয়, রাজনৈতিক অস্থিরতায় কিছুটা অধৈর্য হইয়াই জেনারেলরা স্বতঃপ্রণোদিত হস্তক্ষেপ করিয়াছেন। উল্লেখ্য, তাইল্যান্ডের বর্তমান শাসক গোষ্ঠী কিংবা তাহাকে যে কোনও উপায়ে উচ্ছেদ করিতে কৃতসঙ্কল্প বিরোধী গোষ্ঠী সেনাবাহিনীকে দেশের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব সামলাইতে আহ্বান জানায় নাই। আবার সামরিক আইন জারির এই ঘটনাটিতে প্রকাশ্যে কোনও পক্ষই বিশেষ প্রতিবাদ করে নাই। বর্তমান সরকারের প্রতিপক্ষ ‘হলুদ-জামা’ পরিধানকারীরা আগে হইতেই ব্যাংককের যাবতীয় সরকারি ভবন, প্রশাসনিক কেন্দ্র দখল করিয়া রাখিয়াছিলেন। অন্য দিকে কিঞ্চিৎ বিলম্বে তাঁহাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাবাত্রার সমর্থনে জড়ো হওয়া ‘লাল-কুর্তা’র দল রাজধানী শহরে প্রবেশ করিতে না পারিয়া তাহার উপকণ্ঠে ভিড় জমাইতেছিলেন। পরিস্থিতি যে দিকে গড়াইতেছিল, বিশেষত বিরোধীরা নির্বাচিত সরকারকে গদিচ্যুত করিয়া অনির্বাচিত একটি পছন্দের প্রশাসনকে অন্তর্বর্তী সরকার হিসাবে স্থাপন করিয়া তাহাকে দিয়া নির্বাচনী বিধিতে আমূল সংস্কারের কর্মসূচির দিকে যে ভাবে অগ্রসর হইতেছিলেন, আদালতও যে ভাবে তাঁহাদের অনুকূলে রায় দিতেছিল, তাহাতে গৃহযুদ্ধের একটা পরিস্থিতি তৈয়ার হইতেছিল। সামরিক শাসন তাহাতে সাময়িক যতি টানিতে পারে।

কিন্তু সামরিক স্বৈরাচারের অন্তর্নিহিত গোলযোগটি হইল, জবাবদিহির দায়মুক্ত ফৌজি শাসন স্বভাবত স্বৈরতন্ত্রী হইয়া উঠিতে চায়, জনসাধারণের মৌলিক অধিকার হরণ করে, গণতন্ত্রের প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনপ্রণালীর সুফলগুলি হইতে দেশবাসীকে দূরে সরাইয়া রাখে। তাইল্যান্ডের জায়মান গণতন্ত্রকে অধিকন্তু রাজার আশীর্বাদ লইয়া চলিতে হয়। দেশে এখনও রাজতন্ত্রের মহিমা, রাজার ব্যক্তিগত গরিমা ও জৌলুস এবং তাঁহার প্রতি শ্রদ্ধা ও সমীহ অক্ষত। রাজতন্ত্র এবং বিচারবিভাগের সহিত সামরিক বাহিনীর কায়েমি স্বার্থ যদি মিলিয়া যায়, তবে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের নাভিশ্বাস ওঠা স্বাভাবিক। জনপ্রিয় সিনাবাত্রা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করিতে নির্বাচনে পরাস্ত বিরোধী পক্ষ অনমনীয় অবরোধে ব্যাংকককে রুদ্ধ করিয়া রাখিয়াছে, নির্বাচিত সরকারের হইয়া বিরুদ্ধবাদীদের অবরোধের আন্দোলন ধ্বংস করিতে সেনাবাহিনী আগ্রহ দেখায় নাই। ইহা কি তাৎপর্যপূর্ণ নহে?

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy