জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে বিধ্বস্ত করিবার তাগিদেই উপত্যকায় সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা। বুঝিতে অসুবিধা নাই, জঙ্গিরা এই হামলার জন্য দীর্ঘ প্রস্তুতি লইয়াছে। নিহত জঙ্গিদের কাছ হইতে মেলা খাবার ও জলের প্যাকেট, অস্ত্রশস্ত্র ও গ্রেনেড সব কিছুতেই পাকিস্তানের সরকারি ছাপ স্পষ্ট। জঙ্গিরা যে কাশ্মীরের ভূমিপুত্র নয়, পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারী এবং পাক সেনাবাহিনীর সাহায্যেই সীমান্ত পার হইয়া হামলা করিতে আসে, সে বিষয়েও সংশয়ের অবকাশ কম। তাহাদের কেহ কেহ এমনকী হাফ-প্যান্ট পরিহিতও ছিল। ইতিপূর্বে বঙ্গবাসী হাফপ্যান্ট ও হাওয়াই চটি পরা পুলিশ দেখিয়াছে, কিন্তু হাফপ্যান্ট-পরা জঙ্গি বোধহয় এই প্রথম দেখা গেল।
৭০ শতাংশের বেশি ভোট পড়ার মধ্যে রাজ্যের উন্নয়ন ও বিকাশের স্বার্থে রাজ্যবাসীর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের উৎসাহ দেখিয়া উপত্যকার বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতৃত্ব এ বার আর জনবিচ্ছিন্ন হইবার শঙ্কায় বয়কটের ডাক কার্যকর করিতে তৎপর হয় নাই। কিন্তু জেহাদি অনুপ্রবেশকারীদের তেমন কোনও দায় নাই। তাহারা তাই ভোটদাতাদের সন্ত্রস্ত করিয়া গৃহবন্দি রাখিতে যথেচ্ছ নাশকতায় লিপ্ত হয়। সীমান্তে থাকিয়া থাকিয়াই গুলিগোলা চালানোর ফাঁকে জেহাদিদের অনুপ্রবেশ করাইয়া কাশ্মীরে ভারত সরকারের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বানচাল করিতে পারিলে নয়াদিল্লির প্রতি কাশ্মীরিদের অনাস্থার গল্পটি জোরালো ভাবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে উপস্থাপন করা যায়। লক্ষণীয়, কাশ্মীরে এই জেহাদি নাশকতার সমসময়েই লস্কর-এ-তইবা তথা জামাত-উদ-দাওয়ার প্রধান, ২৬/১১র মুম্বই হামলার মূল অভিযুক্ত হাফিজ সইদকে প্রকাশ্যে পাকিস্তানের মাটিতে বৃহৎ জমায়েত করিয়া ভারতবিরোধী প্রচার করিতে পাক কর্তৃপক্ষ যথাসাধ্য সহায়তা করিয়াছে। এ জন্য বিনা ভাড়ায় ট্রেনে করিয়া অনুগামী-সমর্থকদের সভাস্থলে পৌঁছাইয়া দিবার বন্দোবস্তও পাক সরকারেরই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক সন্ত্রাসবাদী বলিয়া চিহ্নিত এই জেহাদি নায়কের জমায়েত হইতে কাশ্মীরকে ভারতীয় শাসন হইতে মুক্ত করার শপথ এবং সে জন্য ফিদাইন সংগ্রহের কর্মসূচিও গৃহীত হয়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শ্রীনগরে নির্বাচনী জনসভা করিতে যাওয়ার প্রাক্কালে এই সব ভারত-বিরোধী জেহাদি তৎপরতা অবশ্য তাঁহার কর্মসূচিকে বিন্দুমাত্র প্রভাবিত করিতে পারে নাই। মোদী জেহাদি সন্ত্রাসের মধ্যেও তাঁহার জনসভা করিতেছেন, বুলেটের তুলনায় ব্যালটের শক্তির উৎকর্ষ প্রচার করিতেছেন। উন্নয়নের অগ্রদূত হিসাবে তাঁহার গ্রহণযোগ্যতা যে কাশ্মীরি জনমানসের কাছেও বিশ্বাসযোগ্য হইতেছে, ভোটদাতাদের বর্ধমান উদ্দীপনাই তাহার সংকেত দিয়াছে। তাঁহারা যে সকলে বিজেপিকে ভোট দিতেছেন বা দিবেন, এমন কথা মনে করিবার কারণ নাই। কিন্তু নির্বাচিত সরকারই যে পড়ুয়াদের শিক্ষা, চলাচলের পথঘাট, আলো জ্বলার বিদ্যুৎ, বেরোজগারের কর্মসংস্থান করিতে পারে, উত্তরোত্তর এই বিশ্বাস তাঁহাদের মনে স্থিত হইতেছে। এ জন্যই সেনা-প্রত্যাহার কিংবা উপত্যকায় স্বাভাবিক আইনের শাসন ফিরাইবার মতো অন্যান্য দাবি বর্জন না করিয়াও তাঁহারা নির্বাচনের মধ্য দিয়া অর্জনযোগ্য জনকল্যাণের একটি প্রশাসন পাইতে উদ্গ্রীব। ইহা পাকিস্তানের ‘আজাদ কাশ্মীর’-এর প্রকল্পটিকে অংশত পিছু হটিতে বাধ্য করিতেছে। তাই জেহাদি অনুপ্রবেশ ও সন্ত্রাস দিয়া অন্তর্ঘাত।