Advertisement
E-Paper

গরু মা, লাঠি বাবা

বাচ্চা যেমন নিতম্বে চাঁটি খেয়ে সবক শেখে, তেমনই, রেকারিং কোঁতকার চোটে আসমুদ্রহিমাচল বুঝতে শিখবে, গরু ও চুমু না-খাওয়াই হল হিন্দুত্ব।বাচ্চা যেমন নিতম্বে চাঁটি খেয়ে সবক শেখে, তেমনই, রেকারিং কোঁতকার চোটে আসমুদ্রহিমাচল বুঝতে শিখবে, গরু ও চুমু না-খাওয়াই হল হিন্দুত্ব।

শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৫ ০০:০১

আরে কালি ইন্ডাস্ট্রিটাকে দুর্দান্ত চাগিয়ে তুলেছি, সেই ক্রেডিটটা তো দিবি! সব হতচ্ছাড়ার মুখে কালি লেপে দেব, দেখি মেকি অসাম্প্রদায়িকতার গ্যাঁড়াকল কোথায় বাতাস পায়! একদম জলের মতো তত্ত্ব: ভারতে থাকতে গেলে, হিন্দু হতে হবে, নইলে মাথা ঝুঁকিয়ে, বাথরুমের দেওয়াল ঘেঁষে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে কাল কাটাতে হবে। দেশটার নাম তো হিন্দুস্তান রে বাবা। ইংরিজিতে হিন্দিয়া। এইচ-টা সাইলেন্ট। এখানে পাকিস্তানের গায়ক এসে গাইবে কেন? পাকিস্তানের লোকের বই রিলিজ হবে কেন? পাকিস্তানের ক্রিকেটকত্তা মিটিং করবে কেন? হিন্দুদের শত্তুর হচ্ছে মুসলিম। সব মুসলিমের উচিত এই দেশ থেকে বেরিয়ে পাকিস্তানে চলে যাওয়া। ওরা খারাপ লোক, গরু খায়। হিন্দুরা ভাল লোক, পাঁঠা খায়। গরু হিন্দুদের মা, তাই গরু খাওয়া পাপ। গরু যাদের মা নয়, তাদেরও গরু খেতে দেব না। মেনুতে বিফ থাকলে, রেস্তোরাঁ ভাঙব। ফ্রিজে গরুর মাংস আছে সন্দেহ হলে, গেরস্থকে কুপিয়ে মারব। কলকাতা আঁতেল জায়গা, রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে কিছু শয়তান বিফ খেয়েছে। কিন্তু পথচলতি লোকেরা তাদের সাপোর্ট করেছে কি? হারগিস না। কারণ, গরু খাওয়াকে মেজরিটি ঘেন্না করে। করতেই হবে। সেটাই তো আমাদের মহান ধর্ম। ধর্ম মানে সায়েন্স। গরু খেলে বুদ্ধিতে কিরমি লাগে, মানুষ ভিরমি খায়। প্রাচীন হিন্দু সায়েন্টিস্টরা ভিরমি খেলে কি গণেশের প্লাস্টিক সার্জারি করতে পারতেন?

আবার প্রাইজ ফেরত দেওয়ার হিড়িক পড়েছে! ওরে, এ সব গিমিক বুঝতে বাকি নেই। কোথাকার কে, প্রাইজ পেয়েছিল কি না নিজের ভাইপো ছাড়া কেউ জানতই না, আজ প্রত্যাখ্যানের নাটক বাগিয়ে শনশন টিআরপি! তা ছাড়া, কোন কমিটির ক’টা পেছনপাকা তোকে প্রাইজ দিয়েছিল, তার সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক কী? এ কথা বলেছেন স্বয়ং চেতন ভগত, দেশের শ্রেষ্ঠ গদ্যম্যান। তিনি এও জিজ্ঞেস করেছেন, সম্মান কক্ষনও ফেরত দেওয়া যায়? হক কথা। এক বার দাড়িওলা একটা কবি রাত জেগে কেমিকাল লোচা সাঁতলে, নাইট উপাধি ফেরত দিয়েছিল। হাবিজাবি ডিসিশন। কে কোথায় কাকে গুলি করেছে, ইংরেজ সরকার তার কী করবে? তোমার নাইটে ঘুম আসছে না বলে আচমকা নাইট উপাধি মিথ্যে হয়ে গেল? অত যদি ত্যান্ডাই, সরকারের আন্ডারে যত ভাতডাল খেয়ে দেহ তন্দুরস্ত করেছ, ফেরত দাও। সরকারের বানানো রাস্তা দিয়ে না হেঁটে, আন্ডারগ্রাউন্ডে টানেল খুঁড়ে হামাগুড়ি লাগাও! ছ’ঘণ্টা বাদে ছুঁচোর মতো মাথা তুলে: দাদা এটা কি এসপ্ল্যানেড?

ইতিহাসের পাতিহাঁসগুলো হচ্ছে সবচেয়ে শয়তান। কোন সালে কী হয়েছিল, সেইটা লিস্টি করে ছেপে দেওয়া, এই তো ওদের একমাত্তর চাকরি। তাতে আবার ফটরফটর কীসের? আওরঙ্গজেবের নামে রাস্তা থাকবে আমাদের ভারতে, সেটা নিয়ে আন্দোলন করব না? ইতিহাসবিদগুলো বলবে, হিন্দুরাও ভারতীয়, মুসলিমরাও। ভারতীয় ঐতিহ্যের মধ্যে হিন্দুত্ব যত মিশে আছে, মুসলিমতাও ততটাই। এ সব অগা বাণী ছেতরে ওরা কার কাছে গুড বয় সাজছে? দু’লাইন হিস্ট্রি পড়া লোকও জানে, মুসলিমরা বিদেশি। এখানে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। ওরা শুধু আমাদের ওপর অত্যাচার করত, আর মিনার গড়ত। হিন্দু রাজারা রামকে পুজো করত, আর সব ক’টা ভাল ভাল কাজ করেছিল। কী সব শক্ত শক্ত বই বাগিয়ে উলটো কথা বললেই মেনে নেব? অত বই পড়ার সময় আমাদের নেই। আমাদের লাঠিতে তেল মাখাতে হয়, তরোয়ালে শান দিতে হয়। কোনও মেমসাহেব বেদ উপনিষদ গুলে হিন্দুদের ইতিহাস নিয়ে জ্ঞান দিতে এলে, আমাদের এমন পাঁইপাই তেড়ে যেতে হয় যাতে পাবলিশার বই বিক্কিরি লাটে তুলে ডবল স্পিডে পালায়। কিছু ছ্যাঁচড়া আমাদের বলে, অশিক্ষিত। শাস্ত্র পড়িনি। ওরে, শাস্ত্র আমাদের বই থেকে পড়তে হয় না। ও আমরা ঘরের দেওয়াল থেকে, তারে মেলে দেওয়া গামছা থেকে, ঠাকুদ্দার দাঁতন করা নিমডাল থেকে, ঠাকুমার ওগলানো উপকথা থেকে খুঁটে, আঁচড়ে নিই। আসল কথাটা আবারও চেতনদাদাই বলেছেন, মোদী বা অমিত শাহ যদি দুন স্কুলে পড়তেন, দুর্দান্ত অ্যাকসেন্ট মেরে ইংরিজি বলতেন, মেম-বান্ধবী নিয়ে ঘুরতেন, তা হলে তাঁদের বিরুদ্ধে সঙিন উঁচিয়ে ইন্টেল-রা নেমে পড়ত না। ঠিক। হিন্দি বলেন তো, তাই সহজেই ওঁদের মুখ্যু বাতলে দেওয়া যায়। আসলে দেশটা হয়ে গেছে পাশ্চাত্যের পশ্চাত দেখানো লো-ওয়েস্ট প্যান্ট। যত হড়কাবে, তত ভাল। ট্যাঁশ হও, বেশরম, তা হলে তুমি এডুকেটেড। আর করবা চৌথের চালুনি মাথার কাছে রেখে শোও, গালে ময়েশ্চারাইজারের বদলে পবিত্র গোমূত্র ঘষো, তা হলে তুমি দেহাতি, নিচু। ছি!

ওই জন্যেই আমাদের জঙ্গি না হয়ে উপায় নেই। না না, পিলপিলে সাধারণ মানুষের মার্কশিট দিব্যি: পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচ জিতলেই প্রত্যেকে দেশের উন্নয়ন নিয়ে নিশ্চিন্ত। কিন্তু মুশকিল হল, এঁড়ে পণ্ডিতরা প্রগতির ভুল ধারণাকে পুজো করছেন, ‘সেকুলার’ শব্দটাকেও ভাল বলছেন। ধাস্টামোটা সংক্রামক। পাবলিক ‘শিক্ষিত’ হওয়ার লোভে, মাঝেমধ্যে এ দিকে হেলে পড়ে। এই মাইন্ডসেটটা বদলাতে গেলে কয়েকটা খুলি তো ভাঙতেই হবে। ভ্যালেন্টাইনে প্রেমিকদের কান ধরে ওঠবোস করাতে হবে, হপ্তায় তিনটে নাস্তিককে কালিতে চোবাতে হবে। বাচ্চা যেমন নিতম্বে চাঁটি খেয়ে সবক শেখে, তেমনই, রেকারিং কোঁতকার চোটে আসমুদ্রহিমাচল বুঝতে শিখবে, গরু ও চুমু না-খাওয়াই হল হিন্দুত্ব। আর তার একমাত্র গার্জেন হল আমার সংগঠন। আর, বাস্তব কোনও সেমিনার নয় যে তর্ক তোলা যায়। মুখ খুললেই রড খেলে, যুক্তির রোগ কমে আসবে। বিশ্বাসভারী নতমুন্ডুগুলোয় পা রেখে রেখে ম্যাপের ডগায় উঠে দাঁড়াব আমি, বল্লভভাইয়ের স্ট্যাচুর চেয়েও উঁচু!

লেখাটির সঙ্গে বাস্তব চরিত্র বা ঘটনার মিল থাকলে তা নিতান্ত অনিচ্ছাকৃত, কাকতালীয়

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy