Advertisement
E-Paper

চিন রাশিয়া নহে

নয়া সংবিধান রচনার পথে অগ্রসর হইতেছে মায়ানমার। গণতান্ত্রিক সংবিধান। অন্তত সেই আশায় বুক বাঁধিয়াছিলেন গণতন্ত্রীরা। দেশের প্রাক্তন সমরনায়কদের সরকার কিন্তু এখনও দেশের বিভিন্ন জনজাতি ও জনগোষ্ঠীকে সেই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করিতে প্রস্তুত নহে। রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে যেমন প্রায় সাড়ে আট লক্ষ মানুষকে অস্থায়ী রেজিস্ট্রেশন কার্ডের ভিত্তিতে সাংবিধানিক জনাদেশে অংশগ্রহণের সুযোগ দিবার কথা ঘোষণা করিয়াও প্রধানত বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের আপত্তিতে সরকার পিছাইয়া আসিয়াছে।

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:২১

নয়া সংবিধান রচনার পথে অগ্রসর হইতেছে মায়ানমার। গণতান্ত্রিক সংবিধান। অন্তত সেই আশায় বুক বাঁধিয়াছিলেন গণতন্ত্রীরা। দেশের প্রাক্তন সমরনায়কদের সরকার কিন্তু এখনও দেশের বিভিন্ন জনজাতি ও জনগোষ্ঠীকে সেই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করিতে প্রস্তুত নহে। রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে যেমন প্রায় সাড়ে আট লক্ষ মানুষকে অস্থায়ী রেজিস্ট্রেশন কার্ডের ভিত্তিতে সাংবিধানিক জনাদেশে অংশগ্রহণের সুযোগ দিবার কথা ঘোষণা করিয়াও প্রধানত বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের আপত্তিতে সরকার পিছাইয়া আসিয়াছে। সু চি-কেও রোহিঙ্গাদের অধিকার লইয়া বিশেষ মুখ খুলিতে দেখা যাইতেছে না। ইতিমধ্যে বিভিন্ন বিদ্রোহী জনজাতির সহিত সরকারি সেনাদের যে-সংঘর্ষ চলিতেছে, তাহাও থামার লক্ষণ নাই। চিন-সংলগ্ন উত্তরাঞ্চলে কোকং জনজাতির বিদ্রোহীদের সহিত সংঘর্ষও অব্যাহত। এই জনজাতির নিরস্ত্র মানুষেরা উদ্বাস্তু হইয়া চিনের ইউনান প্রদেশে আশ্রয় লইয়াছেন। কিন্তু মায়ানমারবাহিনী সংঘর্ষ-বিরতির লক্ষণ দেখাইতেছে না।

এই কোকং জনজাতি চিনা ‘হান’ জাতিরই একটি প্রশাখা। তাহারা চিনা কর্তৃপক্ষের কাছে কেবল আশ্রয় নয়, মায়ানমার বাহিনীর আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রার্থনাও জানাইয়াছে। চিন কিন্তু সেই ফাঁদে পা দেয় নাই। উপরন্তু চিনা কর্তৃপক্ষ কোকং সমস্যাটিকে মায়ানমারের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ সমস্যা রূপে শনাক্ত করিয়া পারস্পরিক আলোচনায় শান্তিপূর্ণ ভাবে মীমাংসা করিতে বলিয়াছেন। প্রসঙ্গত, ইউক্রেন হইতে রুশ-অধ্যুষিত ক্রাইমিয়াকে বিচ্ছিন্ন করিয়া বৃহত্তর রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করার সাম্রাজ্যবাদী প্রয়াসের তুলনাটি আলোচনায় উঠিয়াছিল। অন্তত পশ্চিমী গণমাধ্যম ও কূটনৈতিক মহলে তাহা লইয়া গুঞ্জন শুরু হয়। চিনা সরকারি মুখপত্রে পত্রপাঠ সেই আশঙ্কা বা সম্ভাবনা খারিজ করিয়া দেওয়া হইয়াছে। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানানো হইয়াছে, হান জাতীয়তার অংশ হইলেও এই জনজাতি মায়ানমারেরই বাসিন্দা, সেই দেশই তাহাদের সুখ-দুঃখের নিয়ন্তা। চিন বড় জোর যুযুধান দুই পক্ষের মধ্যে শান্তি ফিরাইতে মধ্যস্থতা করিতে পারে, যদি উভয় পক্ষই তাহা চাহে। চিনের এই অবস্থান আশাব্যঞ্জক। বিশেষত, পুতিন অধ্যুষিত দুনিয়ায়।

শুধু আশাব্যঞ্জক নহে, অবস্থানটি বাস্তবোচিতও। প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ মায়ানমারের বিকাশ ওই অনগ্রসর দেশটির জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করিবে— ভারত, তাইল্যান্ড ও চিনও উপকৃত হইবে। এ জন্যই তাইল্যান্ড ও মায়ানমার হইয়া উত্তর-পূর্ব ভারতের সহিত যুক্ত হওয়া মহাসড়ককে চিনের নবীকৃত ‘রেশম-পথ’-এর সহিত যুক্ত করার প্রস্তাবও বিবেচিত হইতেছে। ভারতের ‘পুবের দিকে তাকানো’র নীতির সহিত চিনের ‘একটি রাস্তা, একটি ক্ষেত্র’ নীতিকে সমঞ্জস করিয়া তোলার আলোচনাও বর্তমানে চিনের রাজনৈতিক মহলে চলিতেছে। কে কোন দেশ হইতে অধিক সুযোগ আদায় করিতে পারে, তাহা লইয়া প্রতিযোগিতা চলিবে। কিন্তু তাহার প্রকরণ হইবে আর্থিক বিকাশ। তাই উত্তর মায়ানমারে সেনা পাঠাইয়া প্রতিবেশীর কাছ হইতে তাহা ছিনতাই করা নয়, চিন ওই অঞ্চলে চওড়া রাস্তা, বিদ্যুতের খুঁটি, সম্ভব হইলে কলকারখানা নির্মাণে আগ্রহী। ইহাই বাস্তববোধের পরিচায়ক। দীর্ঘমেয়াদি বিচারে পুতিনের জারতন্ত্র অপেক্ষা এই বাস্তববোধ অধিকতর শক্তিমান।

anandabazar editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy