Advertisement
E-Paper

জাতীয়তা ৩৫ কেজি

অ বশেষে মাপটি জানা গেল। জাতীয়তাবাদ উচ্চতায় ২০৭ ফুট, ওজন ৩৫ কিলোগ্রাম। তাহার ছাতির মাপটি সরকারি ভাবে এখনও ঘোষিত হয় নাই, তবে দেশবাসী তাহা বিলক্ষণ জানেন। অতঃপর দেশের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে নির্ধারিত ওজনের জাতীয় পতাকা উড়িবে, নির্ধারিত উচ্চতায়।

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:২৫

অ বশেষে মাপটি জানা গেল। জাতীয়তাবাদ উচ্চতায় ২০৭ ফুট, ওজন ৩৫ কিলোগ্রাম। তাহার ছাতির মাপটি সরকারি ভাবে এখনও ঘোষিত হয় নাই, তবে দেশবাসী তাহা বিলক্ষণ জানেন। অতঃপর দেশের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে নির্ধারিত ওজনের জাতীয় পতাকা উড়িবে, নির্ধারিত উচ্চতায়। স্মৃতি ইরানির দরবারে বসিয়া উপাচার্যরা স্থির করিলেন, জাতীয় পতাকার ছায়াতেই উচ্চশিক্ষা বিকশিত হইবে। দেশের ঐক্য ও অখণ্ডতা বজায় রাখিতে নাকি এই ঔষধির বিকল্প নাই। পানের পিকাদি বর্ষণ ঠেকাইতে দেওয়ালে দেবদেবীর ছবি সাঁটিয়া দেওয়ার কৌশলটি রাষ্ট্রনায়করা আয়ত্ত করিয়া ফেলিয়াছেন, আর চিন্তা নাই। জাতীয় পতাকার স্পর্শে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাতাস পবিত্র হইয়া উঠিবে। গোমূত্রের ন্যায়, সেই বাতাসও চরিত্র-সংশোধনী। তাহার মহিমায় ছাত্রদের মন হইতে ‘দেশদ্রোহ’ দূর হইবে। তাহারা বুঝিবে, ভারতভূমিতে থাকিতে হইলে হিন্দু রাষ্ট্রের পদাবনত হইয়াই থাকিতে হইবে, গুরুজি যেমনটি বলিয়াছিলেন। কয়েকটি প্রশ্ন অবশ্য থাকিয়া গেল। শুধু জাতীয় পতাকা, না কি পার্শ্বে ‘ভগওয়া ধ্বজ’-ও উড়িবে? পতাকার সম্মুখে খাকি হাফপ্যান্ট পরিয়া কুচকাওয়াজ করিতে হইবে কি? এবং, সর্বাপেক্ষা গুরুতর প্রশ্ন, এই ২০৭ ফুট, ৩৫ কেজি-র মাপটি কোথায় পাওয়া গেল? নবীন জিন্দলের নোটবইয়ে? স্ট্যাচু অব ইউনিটি ৫৯৭ ফুট, জাতীয় পতাকা তাহার কার্যত এক-তৃতীয়াংশ উচ্চতায় উড়িলে ভারতমাতার অপমান হইবে না তো? ৫৬ ইঞ্চি কমিয়া ৫০ হইয়াছে, জাতীয় পতাকার উচ্চতাও যদি নামিয়া যায়, জাতীয়তাবাদের কী হইবে?

টেলিভিশনের পর্দা হইতে সরাসরি মন্ত্রকের কুর্সিতে বসিবার ফলে সঙ্ঘের পাঠশালায় পড়িবার সুযোগ স্মৃতি ইরানির হয় নাই। নচেৎ জানিতেন, ত্রিবর্ণ পতাকার প্রতি পরিবারের বিশেষ অনুরাগ নাই। স্বাধীনতার পূর্বে তো বটেই, ১৯৫০ সালের পর সঙ্ঘের সদর দফতরে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের চল ছিল না। বস্তুত, হেডগেওয়াড়ের অবস্থান হইতে গোলওয়ালকর সঙ্ঘ পরিবারকে যে আদর্শগত অবস্থানে লইয়া আসিয়াছিলেন, সেখানে জাতীয়তাবাদের স্থান হিন্দুত্বের বেশ কয় ফুট নীচে। কাজেই, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জাতীয় পতাকা উড়াইয়া স্মৃতি ইরানি মোহন ভাগবতের মন পাইবেন কি না, ঘোর সংশয় রহিয়াছে। তাহার সহজতর উপায় ছিল। তিনি হুকুম করিলেই পারিতেন, অতঃপর সকল কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আরএসএস-এর শাখা প্রতিষ্ঠিত হইবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যে তাঁহার ব্যক্তিগত সম্পত্তি, সে বিষয়ে তাঁহার যখন সন্দেহ নাই, তখন এইটুকুতে দ্বিধা বোধ করিলেন কেন?

৩০টি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা একত্রে বসিয়া ক্যাম্পাসে জাতীয় পতাকা উড়াইয়া দেশের সংহতি রক্ষার এমন বিচিত্র প্রস্তাবে ঘাড় নাড়িয়া সহমত হইয়া গেলেন, ভাবিলে বুক কাঁপিয়া উঠে— বোধ বস্তুটি এতখানি দুর্লভ হইল কবে? সমস্যা সম্ভবত বোধে নহে, মেরুদণ্ডে। মহারানির দরবারে বসিয়া তাঁহার জাতীয়তাবাদী ভাবনার বিরুদ্ধে কথা বলিবার মতো বুকের পাটা এই উপাচার্যদের নাই। তাঁহাদের ভাবসাব দেখিলে হাসি পায়, ভয়ও হয়। অবশ্য, তাঁহারাই তো কেন্দ্রীয় মন্ত্রক হইতে চিঠি পাইয়া রোহিত ভেমুলাকে বহিষ্কার করিতে পারেন, পুলিশকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপর ঢালাও নজরদারির ঢালাও ছাড়পত্র দিতে পারেন। ‘ঠিক, ঠিক’ বলিয়া মন্ত্রিমহোদয়ার যে কোনও প্রস্তাবে ঘাড় নাড়িয়া দিতে তাঁহাদের বাধিবে কেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসরটিকে দখল করিতে চাওয়া ফ্যাসিবাদের চরিত্রলক্ষণ। সেই যড়যন্ত্রের বোড়ে হিসাবে ইতিহাসের পাদটীকায় এই উপাচার্যরা স্থান পাইবেন।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy