Advertisement
E-Paper

তৎপরতা জরুরি

গণতন্ত্রের সাফল্যের অনেকাংশই নির্ভর করে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলির প্রাত্যহিক কর্মকুশলতার উপর। প্রতিষ্ঠান গঠিত হইল, তাহার বিধিব্যবস্থা রচিত হইল, কিন্তু বিবিধ সামাজিক বা রাজনৈতিক কারণে তাহা কার্যকর করা গেল না, ইহাই গণতন্ত্রকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করিবার পক্ষে যথেষ্ট।

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৪ ০০:৪৫

গণতন্ত্রের সাফল্যের অনেকাংশই নির্ভর করে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলির প্রাত্যহিক কর্মকুশলতার উপর। প্রতিষ্ঠান গঠিত হইল, তাহার বিধিব্যবস্থা রচিত হইল, কিন্তু বিবিধ সামাজিক বা রাজনৈতিক কারণে তাহা কার্যকর করা গেল না, ইহাই গণতন্ত্রকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করিবার পক্ষে যথেষ্ট। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অকার্যকর থাকিবার যে অভিযোগ উঠিয়াছে, মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের নিষ্ক্রিয়তার যে উদাহরণগুলি দর্শিত হইতেছে, সেগুলি এই কারণেই উদ্বেগজনক। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সর্বাপেক্ষা গুরুতর পর্ব নির্বাচনের সময়ে যদি নির্বাচনী বিধিগুলি এ ভাবে ভঙ্গ হইতে থাকে, এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নিস্পৃহতা ও নিষ্ক্রিয়তার পরাকাষ্ঠা হইয়া দাঁড়ায়, তাহা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশের নিরপেক্ষতা লঙ্ঘন করিতে পারে, এ কথা নিশ্চয়ই নির্বাচন কমিশন জানে। শুধু তাহাই নহে, নিষ্ক্রিয়তার মতো দীর্ঘসূত্রিতাও এ ক্ষেত্রে সমধিক ক্ষতিকারক। যেহেতু প্রাক্-নির্বাচনী সময়কাল যথেষ্ট সংক্ষিপ্ত, এবং স্বাভাবিক ভাবেই ঘটনাবহুল ও সংঘর্ষপরায়ণ, তাই কমিশনের আচরণে বিলম্বের কোনও অবকাশ থাকিতে পারে না। প্রতিদ্বন্দ্বীর ব্যক্তিগত কুৎসা না করিয়া ভারতীয় রাজনীতিকরা অনেকেই যে নির্বাচনী প্রচারের ‘প’-ও শুরু করিতে পারেন না, তাহা এক ঐতিহাসিক সত্য, স্বাধীনতা-পূর্ব কাল হইতে এই ঐতিহ্যই চলিতেছে। সুতরাং গুরুতর অভিযোগ আসিবার সঙ্গে সঙ্গে তাহার নিষ্পত্তি প্রয়োজন, এবং অবস্থাভেদে শাস্তিদান কিংবা ভর্ৎসনা অত্যন্ত আবশ্যক। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য আধিকারিক যে প্রত্যাশিত পদক্ষেপগুলি লন নাই, তাহাতে কেবল তাঁহার ব্যক্তিগত স্খলনই হয় নাই, তাঁহার প্রতিষ্ঠানেরও অমর্যাদা হইয়াছে, দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থারও অবমাননা হইয়াছে।

মুখ্য আধিকারিক যুক্তি দিতে পারেন, তিনি যে পদক্ষেপ একেবারেই করেন নাই, তাহা তো নয়, তিনি ও তাঁহার দফতর তো অভিযোগগুলি নিয়মিত দিল্লি পাঠাইয়া দিয়াছেন। এই যুক্তি দাঁড়াইতে পারে একমাত্র যদি বিধিগত বাধ্যতা থাকে যে রাজ্য স্তরের নির্বাচন কমিশনকে কেন্দ্রীয় কমিশনের অনুমতিসাপেক্ষেই কাজ করিতে হইবে। ভারতীয় গণতন্ত্র যুক্তরাষ্ট্রীয় হইলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমন বাধ্যবাধকতা আছে নিশ্চয়ই। প্রশ্ন এই যে, নির্বাচন কমিশনের ক্ষেত্রে কি এমন শর্ত আছে? উত্তর: না। রাজ্য স্তরের কমিশনের কাজের যথেষ্ট স্বাধীনতা আছে। সম্প্রতি রাজ্য সফরে আসিয়া উপনির্বাচন কমিশনার বিনোদ জুৎসিও কড়া ভাষায় সে কথাই বলিয়া গেলেন। তৃণমূল বিধায়ক অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে এফ আই আর-ই হউক, আর সি পি এম-এর আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগই হউক, জেলা স্তরেই দ্রুত ব্যবস্থা না লইবার কোনও সঙ্গত কারণ ছিল বলিয়া মনে হয় না। এ সব ক্ষেত্রে বিলম্বকে পদ্ধতিগত ভাবে নিষ্ক্রিয়তাই বলা চলে।

এবং এই নিষ্ক্রিয়তা রাজনৈতিক ভাবে প্রণোদিত কি না, সে প্রশ্নও উঠিতে পারে। ইহাই সর্বাপেক্ষা দুর্ভাগ্যজনক সম্ভাবনা। নির্বাচন নামক রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার মধ্যে নির্বাচন কমিশন নামক রাষ্ট্রীয় তদারককারী প্রতিষ্ঠান কতখানি নিরপেক্ষ থাকিতে পারিতেছে, তাহাই গণতন্ত্রের ‘অ্যাসিড টেস্ট’। এই শর্ত পূরণ না হইলে কেবল নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় দলবাজির রং লাগিয়া যায় না, গোটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতেই ঘুণ ধরিবার উপক্রম হয়। উপনির্বাচন কমিশনার সতর্ক করিয়া গিয়াছেন, রাজ্য আধিকারিকদের বিষয়ে এমন কোনও অভিযোগ উত্থাপিত হইলে তাহার ফল ভাল হইবে না। কিন্তু কেবল সতর্ক করিলেই চলিবে না, শেষ বিচারে এই দায় কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিশনকেই লইতে হইবে। রাজ্যে যাহাতে তদারকির মান উন্নত হয়, তাহা নিশ্চিত করিবার ভার প্রথমত ও শেষত, দিল্লিরই।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy