Advertisement
E-Paper

দুই রং, শত সম্ভাবনা

কলিকাতা পুরসভার জবাব নাই। এত দিন যে সুবিধা কতিপয় ‘বিশিষ্ট জন’-এর কুক্ষিগত ছিল, পুরসভার চিন্তাতরঙ্গের এক ধাক্কায় তাহা সাধারণ্যের করায়ত্ত হইল। অতঃপর, ‘রং-বদল বোনাস’ পাইবার জন্য টেলিভিশন চ্যানেলের সান্ধ্য অনুষ্ঠানে মুখ দেখাইবার প্রয়োজন নাই, কোনও অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর সহিত ছবির এক ফ্রেমে আসিবার জন্য প্রাণপাত পরিশ্রমও বাহুল্যমাত্র। এখন কলিকাতার পুর এলাকায় একটি বসতবাটী থাকিলেই চলিবে। তাহার রং বদলাইয়া নীল-সাদা করিয়া দিলেই, হাতেনাতে কর মকুব। ইহাই তো গণতন্ত্রের মূল কথা: যে সুবিধা মুষ্টিমেয়র জন্য তোলা থাকিত, গণতন্ত্র তাহাকে সবার মাঝে বিলাইয়া দেয়।

শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৪ ০০:০৯

কলিকাতা পুরসভার জবাব নাই। এত দিন যে সুবিধা কতিপয় ‘বিশিষ্ট জন’-এর কুক্ষিগত ছিল, পুরসভার চিন্তাতরঙ্গের এক ধাক্কায় তাহা সাধারণ্যের করায়ত্ত হইল। অতঃপর, ‘রং-বদল বোনাস’ পাইবার জন্য টেলিভিশন চ্যানেলের সান্ধ্য অনুষ্ঠানে মুখ দেখাইবার প্রয়োজন নাই, কোনও অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর সহিত ছবির এক ফ্রেমে আসিবার জন্য প্রাণপাত পরিশ্রমও বাহুল্যমাত্র। এখন কলিকাতার পুর এলাকায় একটি বসতবাটী থাকিলেই চলিবে। তাহার রং বদলাইয়া নীল-সাদা করিয়া দিলেই, হাতেনাতে কর মকুব। ইহাই তো গণতন্ত্রের মূল কথা: যে সুবিধা মুষ্টিমেয়র জন্য তোলা থাকিত, গণতন্ত্র তাহাকে সবার মাঝে বিলাইয়া দেয়। তাহাতে সকলের সমান অধিকার। ‘রং-বদল বোনাস’ প্রবর্তন কলিকাতা পুরসভার পক্ষে একটি ছোট পদক্ষেপ, কিন্তু গণতন্ত্রের পক্ষে এক অ-পূর্ব উল্লম্ফন। যথার্থ কংগ্রেসি ঐতিহ্যের দিন থাকিলে ধর্মতলার মোড়ে ব্যানার পড়িত: ‘কলিকাতা পুরসভা লহ প্রণাম’।

যাঁহাদের বাড়ি নাই, তাঁহারা এখনও এই বোনাসের বাহিরে থাকিয়া গেলেন। তবে গণতন্ত্রের রথ যখন এক বার গতিশীল হইয়াছে, আশা করাই যায় যাঁহাদের কলিকাতায় নিজ বাটী নাই, তাঁহারাও সেই রথে সওয়ার হইবেন। নীল-সাদা জামা পরিয়া গেলে অফিসে যথেচ্ছ দেরিতে পৌঁছানো চলিবে, অটোর রং নীল-সাদা করিয়া যত খুশি যাত্রী বসাইয়া যথা ইচ্ছা ভাড়া চাওয়া চলিবে— অনতিবিলম্বে এমন নিয়ম চালু হইতে পারে। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষকদের ‘একটু দিল খুলিয়া’ নম্বর দেওয়ার পরামর্শ দিয়াছেন। যে সকল স্কুলের ইউনিফর্ম নীল-সাদা, সেই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের দশ শতাংশ বেশি নম্বর দেওয়ার কথাও ভাবিয়া দেখা সম্ভব। কলিকাতা পুরসভা সম্ভাবনার এক নূতন দিগন্ত খুলিয়া দিয়াছে। বল এখন নেত্রীর আরাধকদের কোর্টে। কত বিচিত্র পথে নীল-সাদার অভ্যুত্থান সম্ভব, তাঁহারা নাওয়াখাওয়া ভুলিয়া সেই ধ্যান করুন। শোভন চট্টোপাধ্যায় ফাঁকা মাঠে একটি মোক্ষম গোল দিয়া গিয়াছেন। তিমির সহিত প্রতিযোগিতায় টিকিয়া থাকিতে হইলে তিমিঙ্গিলের বিকল্প নাই।

তবে, কোন পরিবর্তনের পুরস্কার বিলি হইতেছে? কেবল বাহ্যিক রং বদলের? যে রং, পরবর্তী কোনও পুরস্কারের আশায়, ফের বদলাইয়া যাইতে পারে? যাঁহাদের কর মকুব হইবে, তাঁহাদের দেওয়ালের নীল-সাদার ছোঁয়া হৃদয়েও লাগিয়াছে কি? প্রশ্নটি উড়াইয়া দেওয়ার নহে। কালীঘাটের পূর্বসূরি আলিমুদ্দিন স্ট্রিটও রংয়ের আনুগত্যকে পুরস্কার দিয়াছিল। আজ খণ্ডহরে পরিণত হওয়া আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের দেওয়ালে-দেওয়ালে একটি প্রশ্নই নিরন্তর ধাক্কা খায়, ঘুরিয়া ফেরে— কাহাদের রঙে বিশ্বাস করিয়াছিলাম! যে কবি, অভিনেতা, নট, খেলোয়াড়, শিক্ষাজীবী এখন জনসভা হইতে রাজ্যসভা, সর্বত্র নীল-সাদা রূপে দৃশ্যমান, তাঁহারাই কি একদা রক্তের ন্যায়, উদীয়মান সূর্যের ন্যায়, উত্তপ্ত লৌহের ন্যায় লোহিত বর্ণের ছিলেন না? তাঁহাদের দেওয়ালের রং কখন বদলাইয়া গেল, আলিমুদ্দিন টের পায় নাই। কালীঘাটকে সতর্ক থাকিতে হইবে। হারুন-অল-রশিদ স্মর্তব্য। যখন প্রত্যেকে বহিরঙ্গের রং প্রদর্শনে ব্যস্ত, তখন নহে— বরং রাতের অন্ধকারে, গোপনে রং পরীক্ষা চলুক। কড়া নজরদারি চাই। যাঁহাদের অন্তর নীল-সাদা হয় নাই, তাঁহাদের লইয়া কী করিতে হইবে, জোসেফ স্তালিন অনেক আগেই জানাইয়া দিয়াছেন। সেই পন্থায় নূতন বন্ধুদের দীক্ষা দিতে বিমানবাবুরা নিশ্চয়ই আপত্তি করিবেন না।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy