Advertisement
E-Paper

দুরাশা নহে

সারা দিন কেমন যাইবে, সকাল দেখিয়া তাহা হয়তো বোঝা যায় না, কিন্তু সকালটি কেমন, তাহা বোঝা যায়। শশী তারুর সাতসকালে নূতন প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসায় অতিরিক্ত উচ্ছ্বসিত হইয়াছেন কি না, সেই বিচার তাঁহার হাই কমান্ডের, কিন্তু যে কোনও সুস্থবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিক স্বীকার করিবেন, নরেন্দ্র মোদীর সকালটি হতাশাজনক নহে।

শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৪ ০০:০২

সারা দিন কেমন যাইবে, সকাল দেখিয়া তাহা হয়তো বোঝা যায় না, কিন্তু সকালটি কেমন, তাহা বোঝা যায়। শশী তারুর সাতসকালে নূতন প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসায় অতিরিক্ত উচ্ছ্বসিত হইয়াছেন কি না, সেই বিচার তাঁহার হাই কমান্ডের, কিন্তু যে কোনও সুস্থবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিক স্বীকার করিবেন, নরেন্দ্র মোদীর সকালটি হতাশাজনক নহে। নীতিপঙ্গুত্বে আক্রান্ত ইউপিএ সরকারকে প্রত্যাখ্যান করিয়া তাঁহাকে দিল্লির দরবারে পাঠাইবার পিছনে জনাদেশের সুস্পষ্ট অর্থ ছিল: কাজ করিয়া দেখান। প্রধানমন্ত্রী মোদী দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে কাজের পরিবেশ এবং পরিকাঠামো রচনায় তৎপর হইয়াছেন। প্রথমত, তিনি বিভিন্ন ধরনের ‘মন্ত্রিগোষ্ঠী’ রদ করিয়া ইউপিএ সরকারের একটি কর্মনাশা ঐতিহ্যের অবসান ঘটাইয়াছেন। দ্বিতীয়ত, তিনি আমলা তথা আধিকারিকদের স্বাধীন ভাবে ও নির্ভয়ে আপন প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের সবুজসংকেত দিয়াছেন। প্রথমটি যদি পথের কাঁটা অপসারণ, দ্বিতীয়টি তবে পথে চলিবার সামর্থ্য সৃষ্টি।

ভারতীয় সমাজ দীর্ঘ দিন যাবৎ প্রতিটি বিষয়ে আধিকারিকদের উপর রাজনীতিকদের নিয়ন্ত্রণ ও প্রভুত্ব দেখিতে অভ্যস্ত হইয়াছে। অভ্যাস বিষম বস্তু, তাহাতে বিসদৃশকেও ক্রমে স্বাভাবিক বলিয়া বোধ হয়। সেই কারণেই প্রধানমন্ত্রীর এই কর্মমুখী উদ্যোগ লইয়াও নানাবিধ কূটপ্রশ্ন তোলা হইতেছে। বিশেষত, অফিসারদের সহিত সরাসরি এই ভাবে কাজের কথা বলিয়া এবং তাঁহাদের যে কোনও প্রয়োজনে তাঁহার সহিত যোগাযোগ করিবার স্বাধীনতা অর্পণ করিয়া তিনি প্রশাসনের কাঠামো নষ্ট করিতে চাহিতেছেন, এমন অভিযোগ উঠিয়াছে। ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের ঔপচারিকতায় অভ্যস্ত দৃষ্টি পরিত্যাগ করিলে বোঝা যাইবে, তাঁহার লক্ষ্য প্রশাসনের যন্ত্রীদের আত্মপ্রত্যয় জাগ্রত করা। এই কারণেই তিনি পূর্ববর্তী সরকারের আমলে নিযুক্ত আধিকারিকদের পাইকারি ভাবে স্থানান্তরিত করিবার প্রচলিত রীতি অন্তত এ-অবধি ভাঙিয়াছেন। প্রশাসনকাঠামোর ধারাবাহিকতা রক্ষার উদ্যোগ সেই প্রসিদ্ধ বাক্য মনে পড়াইয়া দেয়: মন্ত্রীরা আসেন যান, আমলারা থাকেন।

মন্ত্রীদের কাজ নীতি নির্ধারণ করা। নীতি অনুযায়ী প্রশাসনের দৈনন্দিন কাজ চালনা করা আধিকারিকদের দায়িত্ব। নিতান্ত গুরুতর প্রয়োজন ছাড়া শাসনযন্ত্র চালানোয় মন্ত্রীদের হস্তক্ষেপের কিছুমাত্র যুক্তি নাই। কিন্তু এ দেশে খুঁটিনাটি সমস্ত বিষয়ে রাজনীতিকের হস্তক্ষেপ নিয়মে পর্যবসিত। দুর্গাশক্তি নাগপাল বা অশোক খেমকা ব্যতিক্রম নহেন। আমলাদের কাজে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এমন মাত্রায় পৌঁছাইয়াছে যে গত বছর অক্টোবর মাসে দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে আমলাদের জন্য কিছু নির্দিষ্ট রক্ষাকবচ চালু করিবার নির্দেশ দিতে হইয়াছিল। কিন্তু অভিজ্ঞতা বলে, প্রশাসনের নায়করা যদি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হইতে আধিকারিকদের মুক্ত করিতে আগ্রহী না হন, আদালতের নির্দেশে বা আইন জারি করিয়া এই ব্যাধি দূর করা সহজ নয়। বস্তুত, স্বাধীন ভারতের প্রথম দুই তিন দশকে প্রশাসনের কাজে এতটা হস্তক্ষেপ ঘটিত না, ব্যাধি ক্রমে বাড়িয়াছে, ইউপিএ জমানায় তাহা গভীর হইয়াছে। শল্যচিকিৎসা আবশ্যক। সেখানেই প্রধানমন্ত্রীর আচরণের তাৎপর্য। শীর্ষনেতার সদিচ্ছা ও সমর্থন থাকিলে আধিকারিকরা তৎপর হইবেন, প্রশাসন সচল হইবে, এমন আশা হয়তো দুরাশা নহে। আধিকারিকদেরও এ ক্ষেত্রে কিছু দায়িত্ব আছে। তাঁহাদের কাজ করিয়া দেখাইতে হইবে। যাঁহারা সৎ ও তৎপর ভাবে কাজ করিতে চাহেন না, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ তাঁহাদের দায় এড়াইবার বা অসৎ কাজ করিবার সুযোগ করিয়া দেয়। সেই অজুহাতও আর মিলিবে না প্রধানমন্ত্রীর অভয়বাণীতে এমন এক ইঙ্গিতও সম্ভবত নিহিত।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy