Advertisement
E-Paper

দায়িত্ব সরকারের

মদন মিত্র, বা তাঁহার নেত্রী, সম্ভবত ইশপের গল্প পড়েন নাই। পড়িলে বিলক্ষণ জানিতেন, বিপদে পড়িয়া কাহাকেও বন্ধু বলিয়া ডাক দিলে প্রত্যাখ্যান নিশ্চিত তো বটেই, কিঞ্চিৎ বিদ্রুপও জুটিতে পারে। তাঁহারা বিরোধীদের ডাক দিয়াছিলেন, সর্বদল কমিটি গড়িয়া বাসভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি আলোচনা করিবার উদ্দেশ্যে। বাসভাড়া লইয়া শাসকরা মোক্ষম প্যাঁচে পড়িয়াছেন। কালীঘাটের জেদ রক্ষা করিতে গিয়া কলিকাতার রাস্তাঘাট কার্যত বাসশূন্য হইয়াছে। এই বার যে ভাড়া না বাড়াইলেই নহে, তাহা সম্ভবত মুখ্যমন্ত্রীও টের পাইতেছেন, কিন্তু জেদ বড় বালাই।

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৪ ০০:০৮

মদন মিত্র, বা তাঁহার নেত্রী, সম্ভবত ইশপের গল্প পড়েন নাই। পড়িলে বিলক্ষণ জানিতেন, বিপদে পড়িয়া কাহাকেও বন্ধু বলিয়া ডাক দিলে প্রত্যাখ্যান নিশ্চিত তো বটেই, কিঞ্চিৎ বিদ্রুপও জুটিতে পারে। তাঁহারা বিরোধীদের ডাক দিয়াছিলেন, সর্বদল কমিটি গড়িয়া বাসভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি আলোচনা করিবার উদ্দেশ্যে। বাসভাড়া লইয়া শাসকরা মোক্ষম প্যাঁচে পড়িয়াছেন। কালীঘাটের জেদ রক্ষা করিতে গিয়া কলিকাতার রাস্তাঘাট কার্যত বাসশূন্য হইয়াছে। এই বার যে ভাড়া না বাড়াইলেই নহে, তাহা সম্ভবত মুখ্যমন্ত্রীও টের পাইতেছেন, কিন্তু জেদ বড় বালাই। এই অবস্থায় ভাড়া বাড়াইবার সিদ্ধান্তে বিরোধীদেরও জুড়িয়া লইতে পারিলে দুইটি কাজ হইত; মুখ্যমন্ত্রীকে আর সরাসরি নিজের জেদ ছাড়িবার ‘লজ্জা’ বহন করিতে হইত না এবং ভাড়া বাড়িলে বিরোধীদের কিছু বলিবার জো থাকিত না। মুশকিল হইল, সরকারের এই সংকট এবং তাহা হইতে নিস্তার পাইতে বিরোধীদের সহিত সহযোগিতার ‘সদিচ্ছা’— গোটা ব্যাপারটাই বড় দৃষ্টিকটু রকম কাঁচা খেলা হইয়াছে। সরকার বিপদে পড়িলে তাহাকে রক্ষা করিবার জন্য নিজেদের ঘাড় আগাইয়া দিবেন— পশ্চিমবঙ্গের বিরোধীরা, দেখা যাইতেছে, এতখানি সরলমতি নহেন।

কেহ বলিতেই পারেন, পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী রাজনীতিকদের এই অসহযোগিতার সিদ্ধান্ত গণতন্ত্রের পরিপন্থী। শাসক ও বিরোধী, উভয় পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে রাজ্যের গতিপথ নির্ধারণের সুযোগ পাইলে বিরোধীদের সেই পথে গমন করা বিধেয়। কথাটি নীতিগত ভাবে ফেলিয়া দেওয়ার নহে। কিন্তু শাসক বিপাকে পড়িয়া গণতন্ত্রের সু-অভ্যাসের কথা স্মরণ করিলে পথটি কিঞ্চিৎ সর্পিল হইয়া পড়ে। গত তিন বৎসর এক মাস সময়কালে— একেবারে নূতন সরকারের ব্রাহ্মমুহূর্তটুকু বাদ দিলে— মুখ্যমন্ত্রী বিরোধীদের ডাকিয়া আলোচনায় বসিতে চাহিয়াছেন, এমন উদাহরণ বিরল। বিরোধীরা আলোচনার দাবি জানাইলেও তিনি গ্রাহ্য করেন নাই। বস্তুত, তিনি যখন বিরোধী ছিলেন, তখনও তাঁহার রাজনীতির মূলমন্ত্র ছিল বয়কট। কাজেই, বাসভাড়া বৃদ্ধির প্রশ্নে স্বখাতসলিলে ডুবিয়া সর্বদলীয় কমিটির ডাক দিলেই তাঁহার সহিত সহযোগিতা করিতে হইবে, বিরোধীরা এমন দায় মানিতে নারাজ। বিপদে পড়িয়া বিরোধীদের ডাক দিলে যে শুধু হাস্যাস্পদই হইতে হয়, এই কথাটি মুখ্যমন্ত্রী পূর্বতন ইউপিএ সরকারকে দেখিয়া শিখিলেও পারিতেন। তবে, ঠেকিয়া শেখাও শেখা বটে। মুখ্যমন্ত্রী ঠেকিয়াছেন। কিছু শিখিলেন কি?

এই ক্ষেত্রে কিন্তু ঠেকিবার প্রয়োজন ছিল না। বাসভাড়া বাড়িবে কি না, এই প্রশ্নটি পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যতের পক্ষে এমন নির্ণায়ক নহে যে সর্বপক্ষের সম্মতি ভিন্ন সিদ্ধান্ত করা মুশকিল। প্রশ্নটি রাজনীতির নহে, প্রশাসনের। কর্তব্যও অতি সহজ ও স্পষ্ট: বাস চালাইবার খরচ বাড়িয়াছে, অতএব ভাড়াও বাড়াইতে হইবে। এই গোত্রের সিদ্ধান্ত করাই তো সরকারের কাজ। তাহার জন্য সর্বদলীয় সম্মতির প্রয়োজন হইবে কেন? রাজনীতির চক্করে পড়িয়া শাসকরা প্রশাসনের ধর্ম ভুলিয়াছেন। অবশ্য, ভুলিবার জন্য পূর্বে শেখা প্রয়োজন। গত তিন বৎসরে সরকার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রচুর করিয়াছে, কিন্তু প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের খাতা প্রায় শূন্য। বিশেষত যে সিদ্ধান্তগুলি অপ্রিয় হইবার আশঙ্কা, সরকার সেগুলিকে সভয় দূরে রাখিয়াছে। রাজনীতি আর শাসন যে এক কথা নহে, তাঁহারা আর কবে বুঝিবেন? সরকারের মেয়াদ তো ক্রমে ফুরাইবার পথে। বস্তুত, যখন কঠোর প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত না করিলেই নহে, তখনই সেই সিদ্ধান্তের সহিত বিরোধীদের জুড়িয়া লইবার চেষ্টা রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক মেরুদণ্ডের অভাব আরও এক বার স্পষ্ট করিয়া দিল।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy