Advertisement
E-Paper

ধবধবে ও কুচকুচে

ক্রিমিনালের জাত তো, প্রতিবাদের সঙ্গেও একটু অপরাধ না মেশালে মদ হজম হয় না। তাই সাদা মানুষের টিভি হাতিয়ে বিপ্লব উদযাপন!আরে, গুলি খেয়ে মরেছে একটা কেলটে লোক বই তো নয়! নিগ্রোগুলোকে আদিখ্যেতা করে ‘অ্যাফ্রো-আমেরিকান’ ডাকলেই তো আর গা থেকে জন্ম-ক্রাইমের কাদলা মুছে যাচ্ছে না। সব ক’টা হয় খুনি, নয় ধর্ষক, নয় ছিনতাইয়ের প্ল্যান ভাঁজছে। ভগবান তো শুধু শুধু ওদের কুচকুচে আর আমাদের ধবধবে করে পাঠাননি।

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০০

আরে, গুলি খেয়ে মরেছে একটা কেলটে লোক বই তো নয়! নিগ্রোগুলোকে আদিখ্যেতা করে ‘অ্যাফ্রো-আমেরিকান’ ডাকলেই তো আর গা থেকে জন্ম-ক্রাইমের কাদলা মুছে যাচ্ছে না। সব ক’টা হয় খুনি, নয় ধর্ষক, নয় ছিনতাইয়ের প্ল্যান ভাঁজছে। ভগবান তো শুধু শুধু ওদের কুচকুচে আর আমাদের ধবধবে করে পাঠাননি। চিহ্ন দিয়েছেন, কারা অফিসার হবে আর কারা পাঁউরুটি চুরি করে দৌড় মারবে। আমি পুলিশ হয়েছি, ত্যঁাদড়া অপরাধীদের টাইট দেব বলেই তো? আমার কাজ আমি করেছি। ও বাবা, তাই নিয়ে আমেরিকার পথে পথে প্রতিবাদ! আজকাল এটাই প্রগতির ফ্যাশন, পাজির পাঝাড়াদের সাপোর্ট।

দুটো কালো ছোকরা, বয়স কত হবে, আঠেরো-ফাঠেরো, রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটছিল। বললাম, অ্যাই, ফুটপাথ ধরে যা। তা একটার কী তম্বি! চেহারাটাও সাংঘাতিক। যেমন ওদের হয় আর কী, গোরিলার ঝাড় সব। গাড়ি থেকে নামতে যাচ্ছি, নামতে দিচ্ছে না! দরজা ঠেলেঠুলে, জোর করে ঢুকিয়ে দিচ্ছে! কথা নেই বাত্তা নেই, তেড়ে গালাগাল আর মার! পড়ে পড়ে মার খাব না কি! একটু ধস্তাধস্তির পর দিলাম গুলি চালিয়ে। একটা লাগল না। তখন আর একটা। তার পর বাছাধন পালাচ্ছে। তাড়া করলাম। ও মা, দেখি, হঠাত্‌ ঘুরে আমার দিকেই চার্জ করছে! আরও দশটা গুলি ছুড়লাম। পাঁচটা লেগেওছে। ব্যাটার লীলা ওখানেই শেষ। এ বার শুরু হল জনগণের গবেটপনা। ওখানে দাঁড়িয়ে থাকা লোকগুলোর অনেকে সাক্ষী দিল, কালোটা নাকি কয়েকটা গুলি খেয়ে হাঁটু গেড়ে হাত তুলে বলছিল মারবেন না, মারবেন না, আর আমি তার পরেও ওর মাথার ওপর দু’দুটো গুলি করেছি। মানবাধিকার-ফড়েরা পোস্টার লিখল, দুনিয়ায় সবাই জানে দু’হাত ওপরে তোলা মানে সারেন্ডার, তাও গুলি হল কেন? ছোকরার মা আবার টিভিতে ইন্টারভিউ দিয়েছে, পুলিশটা আসলে খুন করতেই চেয়েছিল!

দ্যাখো ভাই, সিধে বাত, আমাদের আইনে লেখা, যদি পুলিশ মনে করে সে বিপন্ন, হারগিস গুলি চালাবে। অমন একটা বাইসনের মতো লাশ হাঁইহাঁই তেড়ে আসছে, আর আমি ভয় পাব না! তার ওপর ছেলেটা তো সাধু যুধিষ্ঠির নয়, দোকান থেকে বিড়ির প্যাকেট চুরি করে পালাচ্ছিল। মানে, একটা জাত অপরাধী। এই জরুরি কথাগুলোকে ধেবড়ে দিয়ে, শুধু আহা রে কেলেকুষ্টি, অত্যাচারিত তব গুষ্টি বলে দরদ উথলে এখন টিভিতে বাইট কাগজে দেয়ালা! আসলে, হাবিজাবি প্রশ্ন তুলতে তো ট্যাক্স লাগে না। ফটাস করে বলে দিলেই হল, কেন একটা ছেলে হঠাত্‌ পুলিশকে ধমাদ্ধম ধোলাই দেবে? কেন একটা গুলি খাওয়া ছেলে পালাতে পালাতে আচমকা ঘুরে দাঁড়িয়ে পুলিশের দিকে তেড়ে আসবে? কী করে একটা মানুষ পর পর গুলি খেয়ে লুটিয়ে না পড়ে বন্দুকওলার দিকে সমানে তেড়ে আসতে পারে? একটা সম্পূর্ণ নিরস্ত্র লোক হঠাত্‌ একটা বন্দুকধারীর সঙ্গে এমন অবাস্তব হিংস্র ব্যবহার করার সাহসই বা পাবে কোত্থেকে? শুনতে শুনতে ঝালাপালা। আরে বাবা, জুরির কাছে উত্তর তো দিয়েছি। অগস্ট থেকে সমানে এই তো চলছে। এখন রায় বেরিয়েছে সবার সামনে, আমি নির্দোষ। তার পর ইন্টারভিউয়ে বলেছি, যা করেছি, বেশ করেছি। আবার এ রকম হলে, আবার করব।

ব্যস, আর এক প্রস্ত ঝঞ্ঝাট শুরু। অনুতাপ নেই কেন? একটা লোককে অনিচ্ছেয় খুন করলেও তো আফশোস থাকার কথা। দেখিস, আমার হৃদয়ে আফশোস জাগাতে গিয়ে নতুন প্রোটেস্ট-সিরিজে আবার আগের বারের মতো লটকে লট দোকান লুট করিসনি। ক্রিমিনালের জাত তো, প্রতিবাদের সঙ্গেও একটু অপরাধ না মেশালে মদ হজম হয় না। তাই সাদা মানুষের টিভি হাতিয়ে বিপ্লব উদযাপন! এই তো আমার আর এক পুলিশভাই পরশু না তরশু একটা বারো বছরের কেলটে বাচ্চাকে গুলি করে মারল। বাচ্চাটা পার্কে খেলছিল, খেলনা বন্দুক উঁচিয়ে রাস্তার লোকদের ভয় দেখাচ্ছিল। পুলিশ যখন তাকে বলেছে, হাত ওপরে তোলো, সে ব্যাটা তোলেনি। ব্যস, দু’সেকেন্ডের মধ্যে নিকেশ! বেশ করেছে। কালো মানুষ, বারো হোক আর আঠেরো, তেইশ হোক আর তেষট্টি, দেখলেই খেঁকিয়ে ওঠো, তার পরেই ঠাটিয়ে গুড়ুম! গত বছরই ট্র্যাফিক জ্যামে একটা কেলে বুড়ো তার গাড়ির পেছনে হাত বাড়িয়ে কী বের করতে গিয়েছিল। পুলিশ ভেবেছে বন্দুক, অবিশ্যি পরে দেখা গেল ওখানে ছিল তার হাঁটার ছড়ি!

ভাই, মড়াকান্না আর নেকু থিয়োরি খুব সোজা। কিন্তু আমাদের কাজ করতে হয় বাস্তব পৃথিবীতে। সেকেন্ডের ভগ্নাংশে ডিসিশন নিতে হয়। উদার প্রবন্ধ দিয়ে তো আর ঘাগু অপরাধ ট্যাক্ল করা যায় না। কালো দেখলে আমরা আলবাত এয়ারপোর্টে স্ট্রিপ-সার্চ করব। দাড়িওলা বাদামি দেখলে কুকুর দিয়ে তেড়ে শোঁকাব। পদবি বুঝে রাস্তাঘাটে হ্যারাস করব। দেশ বুঝে অপমান করব। কারণ ইতিহাস বলে, এরা হাড়-শয়তান। নাগাড়ে কড়াক্কড় চাবকালে, তবে সিঁটিয়ে থাকবে। একটু ছাড় দিলেই, ৯/১১। কিংবা ড্রাগ পাচার। বা কুপিয়ে মার্ডার। আমাদের অ্যাদ্দিনের সেন্স, ঐতিহ্য, পৃথিবীকে ঠিকঠাক ঘোরাবার দায় শেখায়: চামড়ার রং অ-সাদা মানেই, ছ্যঁাচড়। ১৯৭৭-এ, লস অ্যাঞ্জেলেস-এ, একটা কালো লোকের গায়ে আগুন লেগেছিল। জ্বলন্ত জামাকাপড় গা থেকে ছিঁড়ে ফেলে চেল্লাতে চেল্লাতে গাড়লটা বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তা দিয়ে দৌড়চ্ছিল। এক সাদা পুলিশভাই তাকে দেখে নিজেকে বিপন্ন ভাবল, পিস্তলের সব ক’টা গুলি তার বডিতে ভরে দিল। বিচারে, সেও বেকসুর খালাস। কেউ জিজ্ঞেস করেনি, একটা পুড়তে থাকা ন্যাংটো লোক কোথায় অস্ত্রটা ক্যারি করছিল যে তাকে দেখে হঠাত্‌ এত ভয়? বাঃ, ব্যাটা কালো না? ইতরগুলো সব পারে! হয়তো ঝলসানো পায়ুর মধ্যে রাইফেল লুকিয়ে আনছিল!

লেখাটির সঙ্গে বাস্তব চরিত্র বা ঘটনার মিল থাকলে তা নিতান্ত অনিচ্ছাকৃত, কাকতালীয়

post editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy