Advertisement
E-Paper

ধর্ষিত বিশ্বাস

চার বছরের একটি ছোট্ট মেয়েকে চকলেটের লোভ দেখাইয়া ঘরে ডাকিয়া ধর্ষণ করার পর নির্মম ভাবে তাহাকে হত্যা করার দায়ে ৪৭ বছর বয়স্ক প্রতিবেশীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়াছে সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চ। মহারাষ্ট্রের পুণে এলাকার এই ঘটনাটি মর্মান্তিক, কিন্তু ব্যতিক্রমী বলা শক্ত। এই বয়সের শিশুকন্যারাও এ দেশে ধর্ষকদের হাত হইতে রেহাই পাইতেছে না। অপকর্ম সংঘটনের পর সাক্ষ্য লোপের জন্য ধর্ষিতা নাবালিকাকে নৃশংস ভাবে হত্যা করিতেও ধর্ষক দ্বিধা করিতেছে না।

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০১

চার বছরের একটি ছোট্ট মেয়েকে চকলেটের লোভ দেখাইয়া ঘরে ডাকিয়া ধর্ষণ করার পর নির্মম ভাবে তাহাকে হত্যা করার দায়ে ৪৭ বছর বয়স্ক প্রতিবেশীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়াছে সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চ। মহারাষ্ট্রের পুণে এলাকার এই ঘটনাটি মর্মান্তিক, কিন্তু ব্যতিক্রমী বলা শক্ত। এই বয়সের শিশুকন্যারাও এ দেশে ধর্ষকদের হাত হইতে রেহাই পাইতেছে না। অপকর্ম সংঘটনের পর সাক্ষ্য লোপের জন্য ধর্ষিতা নাবালিকাকে নৃশংস ভাবে হত্যা করিতেও ধর্ষক দ্বিধা করিতেছে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধর্ষণকারীরা হয় নিকটাত্মীয় কিংবা পূর্বপরিচিত। এই ক্ষেত্রটিতে যেমন ধর্ষণকারী প্রতিবেশীটিকে পাড়ার অন্যান্য শিশুদের মতো ধর্ষিতা নাবালিকাটিও ‘কাকা’ বা ‘মামা’ বলিয়া ডাকিত এবং ওই সম্বোধনের ভিতর যে আত্মীয়তার আশ্বাস, আস্থা ও ভরসা নিহিত থাকে, এ ক্ষেত্রে তাহাও ছিল। সে জন্যই চকলেট খাইতে ডাকিলে শিশুটি নির্দ্বিধায়, নিশ্চিন্ত মনে ওই কাকা বা মামার কাছে চলিয়া যায়। সুপ্রিম কোর্ট তাহার রায়ে এই বিশেষ দিকটির উপর জোর দিয়াছে, যেখানে সামাজিক সম্পর্কে নিহিত আস্থা ও ভরসার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হইতেছে এবং সেই আস্থা ও বিশ্বাস চূর্ণ হইয়া যাইতেছে।

কয়েকটি তথ্য দিলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হইবে। ভারতে কোথাও না কোথাও প্রতি ২৯ মিনিটে একটি করিয়া ধর্ষণকাণ্ড ঘটিয়া চলিয়াছে, যাহা শেষ পর্যন্ত পুলিশ রিপোর্টে নথিভুক্ত হয়। প্রকৃত সংখ্যাটা সম্ভবত ইহার দশ গুণ, কেননা ৯০ শতাংশ ধর্ষণই লোকলজ্জায় কিংবা পরিবারের অমতে গোচরে আনা হয় না। এই বিপুল পরিমাণ ধর্ষণকাণ্ডের যাহারা শিকার, তাহাদের সাড়ে বারো শতাংশই নাবালিকা, অনেকেই চার-ছয় বছরের শিশু। সর্বোপরি নথিভুক্ত ধর্ষণকাণ্ডগুলির ৯৮ শতাংশ ক্ষেত্রেই ধর্ষকরা ধর্ষিতাদের আত্মীয়, স্বজন, নিকট প্রতিবেশী বা পূর্বপরিচিত। আর এখানেই সামাজিক ভরসা ও বিশ্বাসের সনাতন, সযত্নলালিত ধারণাগুলি ভাঙিয়া পড়ার প্রসঙ্গটি উঠিয়া পড়ে। দেহরক্ষীর হাতে নিহত হওয়ার মধ্যে যেমন বিশ্বাসহানি রহিয়াছে, তেমনই বিশ্বাসভঙ্গের ব্যাপার আছে আত্মজনের হাতে যৌননিগ্রহের ঘটনায়ও। যাহাকে রক্ষা করার কাজে নিযুক্ত, তাহাকেই হত্যা করা যেমন কৃতঘ্ন বিশ্বাসঘাত, আত্মীয়তা কিংবা পূর্বপরিচয়ের সূত্রে অর্জিত বিশ্বাসের সুযোগ লইয়া ধর্ষণ করাও সমান নারকীয়তা। শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক ও সামাজিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে ধর্ষণের পরিণতিই এক ও অভিন্ন হইলেও।

এই ধরনের ধর্ষণকে ইদানীং ‘পারিবারিক হিংসা’র পর্যায়ভুক্ত করা হইয়াছে। পরিবারের ভিতরে পুরুষ আত্মীয় ও গুরুজনদের দ্বারা বা পরিবারের বাহিরে নিকট প্রতিবেশীদের দ্বারা যৌননিগ্রহের শিকার হওয়া মহিলারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁহাদের দুর্গতির কথা মুখ ফুটিয়া বলিতে পারেন না, পুলিশের কাছে অভিযোগ করা তো দূরস্থান। কারণ পরিবারই সেই নিগ্রহ-লাঞ্ছনার কথা চাপিয়া যায়, লাঞ্ছিতাকে পরিবারের সামাজিক মর্যাদাহানির ভয় দেখাইয়া চুপ করাইয়া রাখে, প্রায়শ তাঁহাদের দূরে কোথাও পাঠাইয়া দেয়, কখনও এমনকী হত্যাও করে। তাহাতে পরিবারের ‘মর্যাদা’ অক্ষত থাকে, ধর্ষক পুরুষ আত্মীয়ও নিষ্কলঙ্ক থাকিয়া যায়। আর এখানেই ভিতরে ভিতরে চলিতে থাকে পিতৃতন্ত্রের লীলা, নারীর প্রতি বৈষম্যের অনুশীলন। পরিবারের গণ্ডির মধ্যে শুরু হওয়া এই অনুশীলনই বৃহত্তর সমাজেও ছড়াইয়া পড়ে।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy