Advertisement
E-Paper

নিছক সন্ত্রাস

নির্বাচন বয়কটের ডাক দেওয়া মাওবাদী গেরিলারা ষোড়শ লোকসভা নির্বাচন পর্বে আঘাত হানিয়াছে। ছত্তীসগঢ়ের বস্তার জেলায় দুইটি পৃথক ঘটনায় তাহাদের মাইন হানায় অন্তত ১২ জনের মৃত্যু হইয়াছে। একটি ঘটনায় আক্রান্তরা সকলেই সিআরপি জওয়ান, যাহারা সরকারি সতর্কবার্তা উপেক্ষা করিয়াই একটি অ্যাম্বুল্যান্সে সওয়ার হইয়াছিল। অ্যাম্বুল্যান্সও যে মাওবাদীদের হামলা হইতে রক্ষা পাওয়ার নিশ্চয়তা দেয় না, ইতিপূর্বে একাধিক ঘটনায় তাহা প্রমাণিত।

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৪ ০০:৩০

নির্বাচন বয়কটের ডাক দেওয়া মাওবাদী গেরিলারা ষোড়শ লোকসভা নির্বাচন পর্বে আঘাত হানিয়াছে। ছত্তীসগঢ়ের বস্তার জেলায় দুইটি পৃথক ঘটনায় তাহাদের মাইন হানায় অন্তত ১২ জনের মৃত্যু হইয়াছে। একটি ঘটনায় আক্রান্তরা সকলেই সিআরপি জওয়ান, যাহারা সরকারি সতর্কবার্তা উপেক্ষা করিয়াই একটি অ্যাম্বুল্যান্সে সওয়ার হইয়াছিল। অ্যাম্বুল্যান্সও যে মাওবাদীদের হামলা হইতে রক্ষা পাওয়ার নিশ্চয়তা দেয় না, ইতিপূর্বে একাধিক ঘটনায় তাহা প্রমাণিত। অন্যটিতে ভোটকর্মীর কর্তব্য পালন করিয়া পাঁচ জন স্কুল-শিক্ষক ও দুই জন বনরক্ষী নিজ-নিজ কর্মস্থলে ফিরিয়া আসিতেছিলেন। তাঁহারাও সরকারি হুঁশিয়ারি অগ্রাহ্য করিয়া গাড়িতে সওয়ার হন, যাহা মাইন বিস্ফোরণে উড়িয়া যায়। হুঁশিয়ারির কারণ, সমগ্র বস্তার জেলার প্রায় সব সড়কেই মাওবাদীরা শক্তিশালী মাইন পুঁতিয়া রাখিয়াছে। তাই গেরিলা-অধ্যুষিত এলাকায় গাড়িতে সওয়ার হওয়ার পরিবর্তে যথাসম্ভব পায়ে হাঁটিয়া যাতায়াত করিতেই নির্দেশ দেওয়া হয়। সম্ভবত ভোটগ্রহণ পর্বের তৎপরতা সাঙ্গ হইলে ক্লান্ত, অবসন্ন স্কুল-শিক্ষকরা কিছুটা পথ বাসে ফিরিতে মনস্থ করেন। তাহাতেই বিপর্যয়।

মাওবাদীরা যে নির্বাচন প্রক্রিয়া বানচাল করিতে চায়, ইহা তাহাদের ঘোষিত অবস্থান। তথাপি বস্তার জেলার ভোটেও অন্তত ৫২ শতাংশ ভোটার তাঁহাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করিয়া বুঝাইয়া দিয়াছেন, বয়কটের ডাক তাঁহারা প্রত্যাখ্যান করিতেছেন। প্রত্যাখ্যাত মাওবাদীরা ভোট-প্রক্রিয়া বানচাল করিতে ভোটকর্মীদের হত্যা করিয়া, ভোটদাতাদের ভীতিপ্রদর্শন করিয়া, প্রার্থীদের আক্রমণ করিয়া তাহাদের বয়কট কার্যকর করিতে চায়। এই অপপ্রয়াসে সফল হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নাই। তথাপি যে-কোনও নির্বাচন আসন্ন হইলেই নিজেদের প্রভাবাধীন স্থানগুলিতে মাওবাদীদের সংকীর্ণ, স্বার্থপর রাজনীতি সক্রিয় হইয়া ওঠে। ‘শ্রেণিশত্রু খতম’-বিশৃঙ্খলায় মাতিয়া তাহারা নিরস্ত্র, নিরীহ স্কুল-শিক্ষকদের হত্যা করিতেও পিছপা হয় নাই। ইহাতে কোন বিপ্লব সাধিত হইল, সমাজ-পরিবর্তনর কোন আদর্শ রূপায়িত হইল, কে জানে। জনসাধারণ শুধু ভয়ার্ত চিত্তে লক্ষ করিলেন এক নির্ভেজাল, নির্মম সন্ত্রাস।

এই সন্ত্রাস আদর্শবাদের মোড়কে ফেরি করা হইলেও আসলে ইহা যাবতীয় আদর্শ হইতে বিচ্যুত মানুষ খুনের এক রক্তাক্ত উৎসব, যাহার লক্ষ্য, সন্ত্রস্ত করিয়া সাধারণ মানুষকে নির্বাচন প্রক্রিয়া হইতে দূরে সরাইয়া রাখা। বন্দুকের নলকেই যাহারা আজও রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস বলিয়া মনে করে, সেই হিংসাশ্রয়ী হঠকারিতাকেই বিপ্লব নাম দেয়, তাহারা যে সশস্ত্র সন্ত্রাস দিয়াই গণতন্ত্রে অন্তর্ঘাত করিতে তৎপর হইবে, ইহাতে আশ্চর্য কী? তবে লক্ষণীয়, এই সন্ত্রাস কেবল ছত্তীসগঢ়, মহারাষ্ট্রের গড়চিরোলি জেলা, ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ডের কিছু এলাকায় সীমাবদ্ধ। জনবিচ্ছিন্নতা ইহাদের গণভিত্তিকে ক্রমশ হ্রাস করিয়া চলিয়াছে। যত দিন তাহাদের হাতে বন্দুক, তত দিন সাধারণ মানুষকে ভয় দেখাইয়া নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি চলিতে পারে। কিন্তু বন্দুকের শক্তি কখনওই জাগ্রত জনচেতনার শক্তির সমান নয়। আজ-না-হউক-কাল মাওবাদীরা বস্তার তথা ছত্তীসগঢ় ও ঝাড়খণ্ডেও অপ্রাসঙ্গিক হইয়া পড়িবে। তখন ইতিহাসের পৃষ্ঠায় পাদটীকার অতিরিক্ত কোনও স্থান তাহাদের জন্য ধার্য হইবে না।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy